শনিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৬, ১১:০৯:০৬

‘১৪ হাজার পুলিশ একসঙ্গে চাকরি ছেড়েছিল’

‘১৪ হাজার পুলিশ একসঙ্গে চাকরি ছেড়েছিল’

নিউজ ডেস্ক : মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে শনিবার সকালে রাজারবাগ পুলিশ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এসময় মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন পুলিশের আইজিপি একেএম শহীদুল হকও।

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী হয়ে অস্ত্রগুলো গর্জে উঠেছিল আজ থেকে ৪৬ বছর আগে। ২৫ মার্চ ১৯৭০ সাল। যে ভয়াল কাল রাতে স্বাধীনতার স্বপ্ন, আন্দোলনকে চিরদিনের জন্য স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল পাক হানাদার বাহিনী। প্রথমেই আক্রমন করেছিল সে দিনের বাংলার সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষত অস্ত্রধারী বাহিনী পুলিশের ওপর।

বাঙ্গালি জাতির স্বাধীনতার স্বপ্ন আন্দোলনকে চিরদিনের মত স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল পাক হানাদার বাহিনী।

সাঁজোয়া যান আর হেলিকপ্টার গানশিপ নিয়ে চলেছিল পাকিস্থানী সেনাদের আক্রমন। সেই আক্রমনের পাল্টা জবাব দিতে শুধু থ্রি নট থ্রি! নাহ! বুকে ছিল বঙ্গবন্ধুর পেতে রাখা দেশ প্রেমের ডিনামাইট,  ছিল মুক্তির স্বপ্ন আর এ দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা। সেই রাতের আক্রমনের জন্য মোটেও অপ্রস্তুত ছিল না। সে দিনের পুলিশ বাহিনী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সেদিন জেগে ছিল পুরো জাতি। মাত্র ১৮ দিন আগে মুক্তি আর স্বাধীনতার সংগ্রামের ঝঁপিয়ে পড়ার ডাক দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু। এদেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে এবং মস্তিকে আলোড়ন তুলেছিল সেই আহবান তার সেই ডাকে সাড়া দিতে প্রস্তুত হয়েছিল পুলিশ বাহিনীও।

২৫ মার্চ দিনগত রাত প্রায় সাড়ে ১১টায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বের হয়ে আসে তাদের ছাউনী থেকে। খবর পেয়ে যায় পুলিশ। তেজগাঁও থানার দুজন পুলিশ স্থানীয় জনগনকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুাক্তযোদ্ধা জনাব আসাদুজ্জামান কামাল ও ছিলেন সেই প্রতিরোধের প্রহরী দলের রাস্তার পাশে গাছ পালা কেটে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন তারা।

সেই বাধা পেরিয়ে পাক সেনারা ধেয়ে আসে রাজারবাগের দিকে। ফার্মগেট পৌঁছলে তেজগাঁও থানায় কর্মরত ওয়ারলেস অপারেটর জানিয়ে দেন রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সকে। বেজে ওঠে পাগলা ঘন্টা। ব্যারাক থেকে দৌড়ে আসেন পুলিশ সদস্যগণ। কিন্তু অস্ত্রাগার তালাবদ্ধ। ভেঙ্গে ফেলেন সেই তালা। হাতে তুলে নেন অস্ত্র ও গুলি।

একটি দল অবস্থান নেয় ‘ডন’ স্কুলের ছাদে। পুলিশ লাইন্সের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয় অন্যান্য দল। রাত ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে  রাজারবাগের গেটে পৌঁছে পাকিস্তানি বাহিনী। নির্বিচারে মেশিনগান, মর্টার আর  হেলিকপ্টার গানশিপ দিয়ে চলে গুলি। পাল্টা গুলি চালায় পুলিশ সদস্যরাও।

ওয়ারলেস অপারেটর কনস্টবল মো. শাহাজাহান সারা দেশের সকল ইউনিটকে জানিয়ে দেন পুলিশী লড়াই এর খবর। প্রতিটি ইউনিটে গড়ে ওঠে প্রতিরোধের প্রস্তুতি। ওই দিন বিকেলেই বঙ্গবন্ধু তনয় শেখ কামাল নিজেই হোন্ডাযোগে (মোটর সাইকেল) যান রাজারবাগে। হাতে ছিল বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত বার্তা। পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ডাক দিয়েছিলেন তিনি।

মুজিব নগর সরকার ও বাংলাদেশের প্রথম আইজি এম এ খালেক তিন পৃষ্ঠার এক আবেগঘন চিঠি পৌঁছে দেন প্রতিটি ইউনিটে। বঙ্গবন্ধুর বাণী বুকে ধারণ সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে মাতৃভূমিকে মুক্ত করার নির্দেশ দেন তিনি। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সেদিন প্রায় ১৪ হাজার পুলিশ চাকরি ছাড়ে। অস্ত্র গুলি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সশস্ত্র যুদ্ধে। দুজন ডিআইজিসহ প্রায় ১৩ জন পুলিশ শহীদ হন। আহত হন অসংখ্য। যারা তখনো চাকরিতে রয়ে গেলেন, তারাও গোপনে নানাভাবে সহায়তা সামরিক, বেসামরিক করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের।

পূর্বসুরিদের দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ আজো শ্রদ্ধার সাথে বুকে ধারণ করছে পুলিশ বাহিনী। ইন্সপেক্টর জেনারেল জনাব এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম এক বিবৃতিতে বলেছেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পুলিশের যে সকল সদস্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়েছিলেন, তাঁরা আমাদের গর্ব; আমাদের অহংকার। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সেদিন  আমাদের পূর্বসুরিগণ দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আজো দেশের স্বার্থে যে কোন মূল্যে যে কোন প্রতিকূলতাকে রুখে দাঁড়াতে বদ্ধপরিকর।
২৬ মার্চ ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে