রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০১৬, ০৩:১৮:৪১

খালেদা-তারেকের বিএনপি কি জিয়ার বিএনপি হবে?

খালেদা-তারেকের বিএনপি কি জিয়ার বিএনপি হবে?

কাজী সিরাজ : রাজধানীর রাজপথ দখল করতে বারবার ব্যর্থ হলেও উচ্চমধ্যম, মধ্যম  ও নিম্নমধ্যমমানের হোটেলসমূহ এখন বিএনপির দখলে। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার প্রভাবশালী নেতারা দলবল নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন দলের নতুন যে কমিটি হবে তাতে প্রত্যাশা অনুযায়ী পদ-পদবি পাওয়ার তদবিরে।

২৩ মার্চ দৈনিক মানবজমিন লিখেছে, এক চট্টগ্রাম থেকে ২০০ স্থানীয় নেতা ঢাকায় চলে এসেছেন। ১৯ মার্চ ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিএনপির এক দিনের কাউন্সিল। পার্টি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভাষণ ছাড়া জাতীয় কাউন্সিলের আর কী অর্জন আছে, সে ব্যাপারে দলের কোনো বক্তব্য এখনো কেউ জানে না। তবে একটি কথা স্বীকার করতে কারও কার্পণ্য করা উচিত হবে না যে, ভাষণটি এককথায় চমৎকার। সুলিখিতই শুধু নয়, বিএনপির আগামী দিনের রণধ্বনিই উচ্চারিত হয়েছে সে ভাষণে। ২০৩০ রূপকল্পে দলের স্বপ্ন ও আকর্ষণীয় কথা আছে যা দেশের বহু মানুষের স্বপ্ন-আশঙ্কার সঙ্গে মিলেছে। এই রূপকল্প বেগম খালেদা জিয়া একটি প্রেস কনফারেন্সে বা দলের কোনো বর্ধিত সভায় অথবা কোনো সমাবেশেও ঘোষণা করতে পারতেন।

তাতেও তার এই উল্লেখযোগ্য ভাষণটি মিডিয়ায় সমান গুরুত্ব পেত। বিএনপির মতো একটি বৃহৎ দলের জাতীয় কাউন্সিলে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের অগণিত নেতা-কর্মী এমনকি দলবহির্ভূত জনগণেরও বড় ধরনের প্রত্যাশা থাকে। ছোট বড় যে কোনো রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় বা জাতীয় কাউন্সিলে কী হয়? দ্বিবার্ষিক হোক কিংবা ত্রি-বার্ষিক হোক, মধ্যবর্তী বছরগুলোতে দলের ভুল-ত্রুটি, সফলতা-ব্যর্থতা ইত্যাদির চুলচেরা বিশ্লেষণ-পর্যালোচনা হয়, কেন্দ্র, জেলা, থানার নেতারা বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ পান। মূলত সাধারণ সম্পাদক বা মহাসচিবের কার্যবিবরণীতে সব বিষয় উঠে আসে এবং সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই আলোচনা, সমালোচনা, আত্মসমালোচনা ও আত্মোপলব্ধির মাধ্যমে পরবর্তী সময়ের সিদ্ধান্তবলি গৃহীত হয়। জাতীয় কাউন্সিকে ঘিরে সারা দেশের সংগঠনে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়।

 জাতীয় কাউন্সিলের আগে জেলা, থানা এমনকি আরও তৃণমূলে সংগঠনের কাউন্সিল বা সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কেন্দ্রীয় নেতারা জেলায় জেলায় সফর করেন, জেলার নেতারা সফর করেন থানায় থানায়। কেন্দ্রীয় নেতারাও থানা সফরে যান। সারা দেশে সৃষ্টি হয় এক ধরনের দলীয় জাগরণ। পুনর্নির্বাচিত নেতৃত্ব বা নতুন নেতৃত্ব কর্মী-সমর্থক ও জনমনেও আশা জাগায় এবং ব্যর্থ-অযোগ্যরা নেতৃত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়। দলে সৃষ্টি হয় নতুন গতিবেগ। জাতীয় কাউন্সিলে দলের অনুসৃত রাজনৈতিক লাইন অথবা পুনর্নির্ধারিত রাজনৈতিক লাইন অনুমোদিত হয়। রাজনৈতিক লাইনটাই হচ্ছে একটি রাজনৈতিক দলের ঘোষিত ‘রণনীতি’। আর রণনীতি বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদিত হয় বাস্তবসম্মত নতুন ‘রণকৌশল’।

মনে রাখা দরকার, রাজনীতি বা ‘রণনীতি’ আগে, কর্মপরিকল্পনা বা ‘রণকৌশল’ পরে। বেগম খালেদা জিয়ার ভাষণটি দলের ‘রণকৌশল’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার আকাঙ্ক্ষাপ্রসূত আকর্ষণীয় ও সমর্থনযোগ্য প্রোগ্রাম তিনি ঘোষণা করেছেন তার ২০৩০ রূপকল্পে। এই রূপকল্প বাস্তবায়ন তো সম্ভব হবে বিএনপি নামক দলটি ক্ষমতায় যেতে পারলে। আগে তো ক্ষমতায় যাওয়ার বন্দোবস্তটা করতে হবে। সে জন্য সর্বাগ্রে নির্ধারণ করা দরকার রাজনৈতিক ও আদর্শিক ভিত্তি। নীতিনির্ধারণী ফোরামে এ সম্পর্কিত প্রস্তাব বা সিদ্ধান্ত জাতীয় কাউন্সিল অনুমোদন করে। নীতিনির্ধারণী ফোরামের কোনো প্রস্তাব বা সিদ্ধান্ত জাতীয় কাউন্সিল বাতিলও করে দিতে পারে।

বিএনপির বহু কাঙ্ক্ষিত জাতীয় কাউন্সিলে তেমন কিছুই হয়নি। দলের রাজনৈতিক ও আদর্শিক স্খলন নিয়ে রাজনৈতিক ও পর্যবেক্ষক মহলে যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে সে ব্যাপারে কোনো প্রকার টুঁ-শব্দও উচ্চারিত হয়নি। পার্টি চেয়ারপারসনের যে ভাষণে ২০৩০ রূপকল্প ঘোষণা করা হয়েছে তা কাউন্সিলে অনুমোদনেরও প্রয়োজন বোধ করেননি দলের হর্তা-কর্তারা। এই রূপকল্প কি দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচিত বা অনুমোদিত হয়েছে? এটি কি পার্টি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত রূপকল্প, নাকি দলের? দলের হলে তো তা কাউন্সিল অনুমোদন করে কিনা তা কি দেখার প্রয়োজন ছিল না?

যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, এই রূপকল্প ২০৩০ বিএনপির দলীয় রূপকল্প, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই তো প্রশ্নটা আসে যে, রূপকল্প ২০৩০ নামে ‘রণকৌশল’ বাস্তবায়নের  ‘রণনীতিটা’ কী? ‘রণনীতি’ প্রণয়ন বা নির্ধারণ না করে ‘রণকৌশল’ ঘোষণা ‘ঘোড়ার আগে গাড়ি’ জুড়ে দেওয়ার শামিল বলে বিবেচিত হতেই পারে। জাতীয় কাউন্সিলে একমাত্র বা প্রধান বা প্রধান না হলেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় থাকে দল বা সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন।

দুটি জরুরি প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়েই কোনো শব্দ হয়নি কাউন্সিলে। তাহলে এটি জাতীয় কাউন্সিল হলো কী করে? বড়জোর একে বিএনপির একটি বর্ধিত সভা বলা যেতে পারে এবং এও বলা যেতে পারে যে, পার্টি চেয়ারপারসনের ভাষণটি সারা দেশের দলীয় নেতা-কর্মীদের সামনে পড়ে শোনানোর জন্য এই আয়োজন। অথচ জরুরি দুটি বিষয়ের ফয়সালা বিএনপির লক্ষ্য অর্জনের জন্য খুবই দরকার। এক. দলের রাজনীতির ফয়সালা। দুই. কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ফয়সালা। বিএনপির রাজনৈতিক লাইন নিয়ে এখন নানা বিতর্ক। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার অনেক ভক্ত, অনুসারীর মুখে শোনা যায়, তার জন্মকালীন রাজনৈতিক অবস্থানে অটল নেই।

একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতিষ্ঠিত এবং রণাঙ্গনের বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিক, প্রগতিশীল, গণতন্ত্রীদের ওপর মূলত ভিত্তি করে গড়ে ওঠা দল বিএনপির কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী আদর্শের মূল্য এখন যেন আগের মতো আর নেই। দলটির আচরণে উচ্চারণে মনে হয়, তারা মুসলিম জাতীয়তাবাদের ব্যাপারে অধিকতর আগ্রহী।

বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। এরা ধর্মভীরু, ধর্মপ্রাণ। কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। তাই যদি হতো মুসলিম লীগের মৃত্যু হতো না। এদেশ মুসলিম লীগ আর জামায়াতই শাসন করত। তবে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি হাল ছাড়েনি। মুসলিম লীগ না থাকলেও ধর্মের নামে রাজনীতির ঝাণ্ডা তুলে রেখেছে কিছু মৌলবাদী সংগঠন, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী। ধর্মভিত্তিক দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হলেও রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রশ্নে প্রতিষ্ঠার দুই বছরের শুরু থেকেই সেই দ্বি-জাতিতত্ত্ব দুর্বল হতে থাকে। তারপরও এদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি হয়েছে। তাতে খুব সুবিধা হয়নি।

স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বিপজ্জনক পথে মোড় নেয়। সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তির একটি সংগঠিত অংশ রাজনীতিতে ইসলামী ধর্মীয় চেতনার সঙ্গে যুক্ত করে একাত্তরের চেতনাবিরোধী তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী চেতনা। এরা বলে একাত্তরে নাকি কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, দেশে নাকি কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধই নেই। এই শক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। ১৯৯৮ সাল থেকে এই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপি গাঁটছাড়া বেঁধে চলতে চলতে ১৮-১৯ বছরে তার মৌলিকত্বই হারিয়ে ফেলেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

যারা ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে যেতে পারে না, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যেতে পারে না, ১৪ ডিসেম্বর যেতে পারে না বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসেও যারা জাতীয় স্মৃতিসৌধে পা ফেলতে পারে না, তাদের সঙ্গে ২০ দলীয় জোটে থেকে কী করে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের চেতনা বাস্তবায়ন করবে? বিএনপির ঘোষণাপত্রের সূচনা বক্তব্যেই আছে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি অঙ্গীকার। তাতে লেখা আছে, ‘ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রামের সোনালি ফসল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আমাদের পবিত্র আমানত ও অলঙ্ঘনীয় অধিকার। প্রাণের চেয়ে প্রিয় মাতৃভূমির এই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুদৃঢ় এবং সুরক্ষা করাই হচ্ছে আমাদের কালের প্রথম ও প্রধান দাবি।’

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক ১৯ দফা কর্মসূচির কথা যদি ধরি, তাতেও ১ নম্বর দফায় লেখা আছে, ‘সর্বতোভাবে দেশের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে দলের অগণিত কর্মী-সমর্থক এবং সাধারণ যে কোনো মানুষও প্রশ্ন করতে পারেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধবিরোধী প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালনকারী এবং এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে স্থায়ী রাজনৈতিক জোট করে কী করে আপনারা মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করবেন?

কী করে ১৯ দফার রূপায়ণ হবে?’ ‘রূপকল্প ২০৩০’-এ বেগম খালেদা জিয়া থ্রি-জির (গুড পলিসি, গুড গভর্নেন্স, গুড গভর্নমেন্ট— সুনীতি, সুশাসন, সুসরকার) কথা বলেছেন। অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা বলেছেন। প্রশ্ন এখানেও আসতে পারে যে, সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শক্তি কি কখনো গণতন্ত্রের মিত্র হয়? পৃথিবীর কোথাও এমন উদাহরণ আছে? ভারতের বিজেপির কথা বলবেন তো? কিন্তু এটা কি জানেন না যে, ‘শিবসেনা’, হিন্দুমহাসভা, বজরং জাতীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদী সহায়ক শক্তির সঙ্গে বিজেপির উদার গণতন্ত্রীদের দ্বন্দ্ব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজ প্রদেশসহ অনেক জায়গায় এখন বেশ চরমে।

প্রাদেশিক ও আঞ্চলিক নির্বাচনে পরস্পর মুখোমুখিও হচ্ছে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যাপারে স্বচ্ছ ও দৃঢ় অবস্থান ঘোষণা না করে বাংলাদেশকে ‘গণতন্ত্রের পুষ্পবাগিচা’ বানানোর ঘোষণা মানুষ বিশ্বাস করবে কেন? জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী মৈত্রী দলটির অনেক সর্বনাশ করেছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। বিএনপির ঘাড়ে চড়েই সারা দেশে সাংগঠনিক জাল বিস্তার করার কৌশল নিয়ে জামায়াত সফল হয়েছে, শক্তিশালী হয়েছে। পক্ষান্তরে বিএনপি হয়েছে দিন দিন দুর্বল।

জনসমর্থন আছে, কিন্তু সাংগঠনিক শক্তি ক্ষয় হয়েছে। বিএনপির বহু মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধের চেতনানুযায়ী, প্রগতিশীল ও জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্রী সমর্থক দলটির জামায়াত প্রেমের কারণে ক্ষোভ ও হতাশায় দল ছেড়েছে, অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। লক্ষ্য অর্জনের জন্য খালেদা-তারেক বিএনপি কি জিয়ার বিএনপিতে ফেরত যাবে? রাজনৈতিক আদর্শিক এ জায়গাটা স্পষ্ট করা উচিত ছিল জাতীয় কাউন্সিলে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে কিছু কথা বলা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার ভাষণে। দলের ভারতনীতি সততার সঙ্গে স্পষ্ট করা যেত জাতীয় কাউন্সিলে আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত অনুমোদন করার মাধ্যমে।

সবারই মনে থাকার কথা যে, বেগম খালেদা জিয়া তার ভারত সফরকালে এর চেয়েও স্পষ্ট কিছু অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু তিনি ভারতে অবস্থানকালেই তার এক কর্মচারী ভারতেই এক বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন যে, বিএনপির ভারতনীতিতে কোনো পরিবর্তন হবে না। অথচ বেগম জিয়া আমূল পরিবর্তনেরই অঙ্গীকার করেছিলেন। ১৯ মার্চ ২০১৬’র ভাষণেও প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে যে অঙ্গীকার তিনি করেছেন, তাতে তার দল যে শেষ পর্যন্ত অটল থাকবে তা বিশ্বাস করা যাবে কী করে? কাউন্সিলই এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারত নতুন ভারতনীতি অনুমোদন করে।

কমিটির ব্যাপারে কিছু হয়নি কাউন্সিলে। হওয়াটা ছিল স্বাভাবিক। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাসচিবের দায়িত্ব পাবেন কিনা তাও ‘নাকের আগায় মুলো ঝুলিয়ে রাখার মতো ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কমিটি গঠনে বিলম্বের ব্যাখ্যা বিএনপির কোনো কোনো নেতা ‘নেতাগিরি’ দেখিয়ে বলছেন, ম্যাডাম যাচাই-বাছাই করে যোগ্য ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আনতে চাইছেন। প্রথম কথা হচ্ছে, যারা এসব বলছেন তারা জানেন নাকি ম্যাডাম কী ভাবছেন। দলে কি তাদের তেমন মূল্য আছে? তাছাড়া এসব তো ভাবতে হয় কাউন্সিলের আগে।

বাইরে তো গুঞ্জন উঠেছে যে, পদ-পদবি কেনা-বেচার সুবিধার জন্য, বিশেষ করে উচ্চ দাম হাঁকানোর জন্য কমিটি ও পদ-পদবি-মনোনয়ন (যে কোনো স্তরেই হোক— সংসদ থেকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার পদ পর্যন্ত) বেচা-কেনার পাইকাররা কুবুদ্ধি দিয়ে অযথা প্রলম্বিত করেছে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া। আদর্শবাদী, সাহসী ও ত্যাগী নেতা-সংগঠকরা তাদের ভাগ্য নিয়ে শঙ্কিত। তাদের বক্তব্য, উচ্চমূল্যের পদ-পদবির নিলামে সৎ-আদর্শবাদীদের অংশগ্রহণের তো সুযোগ নেই। দল করে কোটিপতি, শত কোটিপতিদের সঙ্গে এরা পারবেন কী করে? আরও একটা অসুবিধা আছে এসব নেতা-কর্মীর।

দল ও রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের কুশীলবরা সৎ ও সাহসী নেতা-সংগঠকদের কাছে পদ বেচা-কেনার জন্য অর্থ প্রস্তাব দিতেও ভয় পায়। ফলে এদের বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। সারা দেশের কাউন্সিলর ডেলিগেটদের সামনে জাতীয় কাউন্সিলে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এমন শঙ্কা অনেকটাই কেটে যেত।  দলের অভ্যন্তরে দলের স্বার্থবিরোধী দুর্বৃত্তরা তাদের ‘কমিটি বাণিজ্য’ সুবিধা করতে পারত না বলেই বলছেন আতঙ্কিতরা। কাউন্সিল শেষে ঢাকার হোটেলে হোটেলে এসে বাসা বাঁধত না দলের জেলা-থানার নেতারা।  এখন দেখার পালা বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান কী করেন। -বিডি প্রতিদিন

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

২৭ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে