মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০১৬, ০১:৩৫:২৫

‘আদরের বোনটাকে ওরা মেরে ফেলেছে’

‘আদরের বোনটাকে ওরা মেরে ফেলেছে’

জাহিদ হাসান ও রুদ্র মিজান : তনুকে আর লেখাপড়া করতে হবে না। তার স্বপ্ন ছিল শিক্ষকতা করার। কোনোদিন তার স্বপ্ন আর পূরণ হবে না। আমার আদরের বোনটাকে ওরা মেরে ফেলেছে। ছোট বোন সোহাগী জাহান তনুকে হারিয়ে নির্বাক বড় ভাই নাজমুল হোসেন এভাবেই বলছিলেন একটি পরিবারের স্বপ্নভঙ্গের কথা।

এদিকে, ঘটনার আট দিন পেরিয়ে গেলেও হত্যাকারীদের এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঘটনার আগে রহস্যজনক দু’টি কল এসেছিল তার ফোনে। সেই কলের সূত্র ধরেই এগুচ্ছে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সন্দেহভাজন এক তরুণকে দেখা যাচ্ছে না। আশপাশের লোকজনও জানেন না তিনি কোথায়। নিহতের স্বজন ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সূত্রমতে, ঘটনার দিন নিজ বাসা থেকে ২শ’ গজ দক্ষিণে সার্জেন্ট জাহিদের সন্তানকে প্রাইভেট পড়াতে যান তনু। ওই বাসা থেকে ফেরার পর আর নিজেদের বাসায় ফেরা হয়নি তার। সার্জেন্ট জাহিদের স্ত্রীর বরাত দিয়ে তনুর মেজো ভাই আনোয়ার হোসেন রুবেল জানিয়েছেন, ওই বাসা থেকে সন্ধ্যা ৭টায় বেরিয়ে যান তনু। তারপর থেকেই নিখোঁজ।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত দু’টি ফোন নম্বরে কথা বলেছেন তনু। শেষ নম্বরের কল পেয়েই তিনি সার্জেন্ট জাহিদের বাসা থেকে বের হন। ওই ফোন নম্বরের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের কোনো যোগসূত্র আছে কি-না তা তদন্ত করছেন গোয়েন্দারা।

সোহাগী জাহান তনুর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ঘুমিয়েছিলেন তিনি। আগের দিন ১৯শে মার্চ থিয়েটারের সদস্যরা মিলে সিলেটের শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে যান। ফিরেন রাতে। যে কারণে দীর্ঘসময় ঘুমান তিনি। ঘুম থেকে উঠেই প্রাইভেট পড়ানোর জন্য প্রস্তুত হন। গতকাল কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় কথা হয় তার স্বজনদের সঙ্গে।

তারা জানান, প্রায় দেড়-দু’মাস আগে এক বান্ধবীকে তনু জানিয়েছিলেন এক যুবক তাকে উত্ত্যক্ত করে।  প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছে বারবার। সেই যুবকের নাম পিয়াল। ঘটনাস্থলের পাশে কালভার্টেই ছিল পিয়ালের আড্ডা। তনুর আসা-যওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করতো। ঘটনার পর থেকে পিয়ালকে দেখতে পাচ্ছেন না আশপাশের লোকজন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তনুর বড়ভাই নাজমুল হোসেন জানান, তনুকে উত্ত্যক্ত করতো পিয়াল। ঘটনার পর থেকে তাকে দেখতে পাচ্ছি না। এছাড়া কয়েক বছর আগে থেকেই তনুর জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসতো। কিন্তু তনু চাইতো লেখাপড়া শেষ করে বিয়ে করবেন। কয়েকটি প্রস্তাব আসার পর মেয়ের সঙ্গে আলোচনা করেন বাবা ইয়ার হোসেন। বাবাকে তিনি বলেছিলেন, আব্বা আগে অনার্স শেষ করি। পরে বিয়ে। আমাকে লেখাপড়া শেষ করতে দিন।

তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। সেইসঙ্গে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি জানান, এ ঘটনায় সেনানিবাসের সিইও ও স্টেশন কমান্ডার তাদের সহযোতিা করছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কোনো চাপ দেয়া হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে নাজমুল কোন মন্তব্য করেননি। তিনি জানান, রোববারে তার মা-বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অতিথি কক্ষে ছিলেন। গতকাল থেকে তারা সেনানিবাসের বাসায় আছেন। সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় সেখানে সবার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারছেন না তারা।

নাজমুল হোসেন জানান, ২০১২ সালে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে ঢাকায় যান তিনি। ওই সময়ে তার নিজের একটি টিউশনি ছোটবোন তনুকে দিয়ে যান। নিজ বাসায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কয়েক শিক্ষার্থীকে পড়াতেন তনু। সর্বশেষ তিনটি টিউশনি ছিল তার। সেনাপর্ষদ উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন তনুদের টিনশেড কোয়ার্টারের পাশেই ওই তিনটি টিউশনি। ঘটনার দিন সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনি শেষ করে বের হন তিনি। সেনানিবাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ, গান করতে গিয়েই সার্জেন্ট জাহিদসহ অন্যদের সঙ্গে পরিচয়। এভাবেই বিভিন্ন টিউশনি পান তনু।

সেনানিবাস নিয়ে গর্ব ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে সারা দেশে যখন বিশৃঙ্খলা চলছিল। তখন দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে তিনি বন্ধুদের বলেছিলেন, ‘আই অ্যাম ফুল প্রটেকটিভ’। সেনানিবাসে বড় হয়েছেন। ১৯ বছরের এই তরুণীর দীর্ঘ ১৮ বছরই কেটেছে এখানে। শেষ পর্যন্ত সেখানেই পাওয়া গেছে তার লাশ। কে তাকে হত্যা করেছে তা এখন শনাক্ত হয়নি।

সংরক্ষিত এলাকায় সংঘটিত এ ঘটনা তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল দফায় দফায় বৈঠক করেছেন গোয়েন্দারা। সর্বশেষ বিকালে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তদন্তের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে আজ ডিবি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি’র পরিদর্শক একেএম মনজুর আহমদ জানান, সম্ভাব্য সকল ধরনের বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। নিহত তরুণীর ব্যক্তিগত বিষয়সহ সব বিষয়ই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। -এমজমিন

২৯ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে