মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০১৬, ০২:৪৩:৩৯

চলতি সপ্তাহেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির ঘোষণা

চলতি সপ্তাহেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির ঘোষণা

কাফি কামাল : বিএনপির মহাসচিবসহ পুনর্গঠিত নীতিনির্ধারণী ফোরামের নাম ঘোষণা হতে পারে চলতি সপ্তাহেই। কাউন্সিল এবং পরের এক সপ্তাহে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা এবং শুভাকাঙক্ষীদের মতামত বিচার-বিশ্লেষণ করে স্থায়ী কমিটিতে সম্ভাব্য পদোন্নতিপ্রাপ্তদের নাম চূড়ান্ত করেছেন শীর্ষ নেতৃত্ব।

আগামী বৃহস্পতিবার থেকে যে কোনোদিনই খালেদা জিয়া প্রকাশ করতে পারেন পুনর্গঠিত কমিটি। দলের একাধিক সিনিয়র নেতা ও চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্রের সঙ্গে আলাপে এমন তথ্য জানা গেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না কেউই।

তবে বিএনপিতে এখন আলোচনার তুঙ্গে রয়েছে দুইটি সংখ্যা। গতকাল দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যেও দেখা গেছে সে দুই সংখ্যার কৌতূহল। শেষ পর্যন্ত কতজন পদোন্নতি পাচ্ছেন নীতিনির্ধারণী ফোরামে। সংখ্যাটা কী শূন্য তিন পদেই সীমাবদ্ধ থাকবে নাকি বেড়ে পাঁচে দাঁড়াবে। এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনাকল্পনা।

কাউন্সিলের আগে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধনের সময় স্থায়ী কমিটির পরিধি বাড়ানোর একটি প্রস্তাব উত্থাপনের ব্যাপারে জোরালো মতামত ছিল। কিন্তু নানাদিক বিবেচনা করে গঠনতন্ত্রে সে প্রস্তাব উত্থাপিত হয়নি। ফলে স্থায়ী কমিটির পরিধি বহাল রয়েছে ১৯-এ। বর্তমানে স্থায়ী কমিটিতে শূন্য রয়েছে তিনটি পদ। এছাড়া, শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে বর্তমান কমিটির দুই সদস্য এম শামসুল ইসলাম ও সারওয়ারী রহমান বাদ পড়তে পারেন এমন আলোচনা চলছে কয়েক বছর ধরে।

বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বয়োজ্যেষ্ঠ এ দুই সদস্যের ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। তাদের জায়গায় অন্য কাউকে আনা হচ্ছে কিনা সেটা এখনও চূড়ান্ত নয়। বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের সিনিয়র নেতাদের সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে চরম পরাকাষ্ঠা দেখান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। অতীত ইতিহাস দেখলে সেটাই দেখা যায়। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার পরও অতীতে অনেক নেতাকে নীতিনির্ধারক ফোরাম থেকে বাদ দেননি তিনি। কিন্তু দলের নীতিনির্ধারণে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বিশেষ করে সামপ্রতিক বছরগুলোতে আন্দোলন-সংগ্রামের ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণী ফোরামের বয়স্ক এবং শারীরিকভাবে অসমর্থ নেতাদের ভূমিকা ছিল নিষ্ক্রিয় ও অদূরদর্শী। বেশিরভাগ নেতাই চেয়ারপারসনকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন দেখার বিষয় দলের নীতিনির্ধারণে ক্ষতি মেনে চেয়ারপারসন অতীতের মতো সম্মান দেখিয়ে শারীরিকভাবে অসমর্থ নেতাদের নীতিনির্ধারণী ফোরামে বহাল রাখছেন নাকি বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এদিকে সংখ্যা তিন বা পাঁচ যাই হোক, কারা হচ্ছেন সে সৌভাগ্যবান?

সূত্র জানায়, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এবার পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। যদিও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এখনও দলের অভ্যন্তরে রয়েছেন নানাবিদ প্রতিবন্ধকতার দেয়াল। তবে দলের প্রতি বিশ্বস্ততা, নির্যাতন ভোগের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের মতামত ও সর্বমহলে গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় তার ওপরই আস্থা রাখার ব্যাপারে একমত হয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। তিনি পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পেলে শূন্য একটি পদে পদোন্নতিসহ সে দায়িত্ব পাবেন।

বাকি যে দুইটি শূন্যপদ থাকছে সেখানে পদোন্নতির আলোচনায় রয়েছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, এম মোর্শেদ খান, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর নাম। কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে দলের স্থায়ী কমিটির বাইরে মাত্র একজন সিনিয়র নেতা মঞ্চে বসার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি হলেন ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান।

কাউন্সিলের আগে তিনি আলোচনায় না থাকলেও চেয়ারপারসন তাকে মঞ্চে ডাকার পর থেকে ঘুরে গেছে হাওয়া। এখন সেটা কি কাউন্সিলের দিন সম্মান জানানো নাকি ভবিষ্যতের ইঙ্গিত সেটা জানা যাবে অচিরেই। চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা গেছে, দলের যুগ্ম মহাসচিব বর্তমানে দিল্লির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সালাহউদ্দিন আহমেদকে স্থায়ী কমিটিতে পদোন্নতি দেয়ার একটি জোরালো সুপারিশ রয়েছে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে।

আবার মহাসচিব ইস্যুকে কেন্দ্র করে একটি অতিরিক্ত মহাসচিব পদ সৃষ্টির ব্যাপারে দলের অভ্যন্তরে জোর আলোচনা ছিল কাউন্সিলের আগে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত মহাসচিব পদ সৃষ্টির প্রস্তাবও উত্থাপিত হয়নি কাউন্সিলে। ওই পদে আলোচনায় থাকা যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহানের নামও উচ্চারিত হচ্ছে নীতিনির্ধারক কমিটির সম্ভাব্য তালিকায়। দেশে-বিদেশে সার্বক্ষণিক লবিং-তদবির চালাচ্ছেন আলোচনায় আসা নেতারা।

সর্বশেষ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের মহাসচিব পদে পদোন্নতি দিলে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে পদোন্নতির ব্যাপারে সর্বাধিক আলোচনায় রয়েছেন যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান ও রিজভী আহমেদের নাম। এ পদের ব্যাপারটি বিবেচনায় রেখেই চূড়ান্ত করা হচ্ছে স্থায়ী কমিটি।

বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, কাউন্সিলের আগেরদিন একটি তালিকা চূড়ান্ত করেছিলেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেটা আর প্রকাশ করেননি। কিন্তু কাউন্সিলের পর দেশি-বিদেশি নানামুখী লবিং-তদবিরের চাপ বাড়ছে চেয়ারপারসনের ওপর। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে দুয়েকটি সুপারিশ। -এমজমিন

২৯ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে