বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০১৬, ০১:৩১:০৬

বিএনপির ৪ পদের জন্য ১৬ নেতার দৌড়ঝাঁপ

বিএনপির ৪ পদের জন্য ১৬ নেতার দৌড়ঝাঁপ

মাহমুদ আজহার : দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পরপরই মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটি ঘোষণার আলোচনা ছিল বিএনপিতে। কিন্তু গত ১০ দিনেও আংশিক কমিটি দিতে পারেনি দলটি। এ নিয়ে দলের ভিতরে-বাইরে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।

দলের মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনেকটা চূড়ান্ত হলেও স্থায়ী কমিটি সাজাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মাত্র চারটি পদের বিপরীতে অন্তত দেড় ডজন নেতা স্থায়ী কমিটির পদপ্রত্যাশী। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে নাম লেখাতে কয়েকজন আটঘাট বেঁধেও মাঠে নেমেছেন। ঢাকার পাশাপাশি লন্ডনেও তত্পরতা চালাচ্ছেন নেতারা। দলীয় নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

জানা যায়, নেতাদের এ ধরনের তত্পরতায় বিব্রত খোদ বিএনপিপ্রধান। কাকে বাদ দিয়ে কাকে রাখবেন— তা নিয়েই কাউন্সিল-পরবর্তী সময়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন খালেদা জিয়া। তবে কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারছেন না তিনি। এ নিয়ে কারও সঙ্গে কথাও বলছেন না। কমিটি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে টানা পাঁচ দিন অফিসও করেননি।

কমিটির অপেক্ষায় বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মী। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও বিএনপির কমিটির দিকে তাকিয়ে। বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, আজ-কালের মধ্যেই স্থায়ী কমিটি ও মহাসচিবের নাম ঘোষণা করা হতে পারে। দলের আরেক অংশ বলছে, পুরো নির্বাহী কমিটি এক সঙ্গেই ঘোষণা করা হবে। এতে এপ্রিল মাস পুরোটাই লেগে যেতে পারে।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী  ফোরাম স্থায়ী কমিটি। ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির প্রধান খালেদা জিয়া। পদাধিকার বলে ওই কমিটির সদস্য সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হয়ে পদাধিকার বলে স্থায়ী কমিটির সদস্য হতে যাচ্ছেন। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটিতে ১২ জন সদস্য সক্রিয় রয়েছেন। মৃত্যুজনিত কারণে তিনজনের সদস্য পদ শূন্য হয়েছে। বার্ধক্য আর অসুস্থতাজনিত কারণে আরও দুই পদ খালি হতে পারে। সেক্ষেত্রে চারটি পদের বিপরীতি নতুন করে দেড়ডজন নেতার নাম আলোচনায় এসেছে।

নতুন স্থায়ী কমিটিতে আলোচনায় থাকা নেতাদের মধ্যে রয়েছেন— আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাদেক হোসেন খোকা, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সেলিমা রহমান, হারুন অর রশীদ, ড. ওসমান ফারুক, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, এম মোরশেদ খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মো. শাহজাহান, সালাউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপিকা তাসমেরী এস ইসলাম প্রমুখ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী লন্ডন-ঢাকা দুই স্থানেই সবুজ সংকেত পেয়েছেন। তবে বসে নেই এম মোরশেদ খান ও আবদুল্লাহ আল নোমানও। সম্প্রতি সাদেক হোসেন খোকাও লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে সবুজ সংকেত পেয়েছেন। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হিসেবে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনও বেগম জিয়ার পছন্দের তালিকায়। অসুস্থতার কারণে সারোয়ারী রহমান না থাকলে নারী কোটায় সেলিমা রহমান আসতে পারেন স্থায়ী কমিটিতে।

ড. এম ওসমান ফারুক, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আবদুল আওয়াল মিন্টুর নামও লন্ডন-ঢাকায় জোর আলোচনা চলছে। বসে নেই চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফও। তবে হঠাৎ করেই আলোচনায় এসেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিএনপি নেতা হারুন অর রশীদ। খালেদা জিয়ার পছন্দের তালিকায় তার নামও রয়েছে। অপেক্ষাকৃত জুনিয়র হলেও মো. শাহজাহান ও সালাউদ্দিন আহমেদের ওপর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের আস্থা রয়েছে বলে জানা যায়।

দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ১৯ সদস্যের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি রয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, ড. আর এ গণির মৃত্যু এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি হওয়ায় তিনটি পদ শূন্য হয়েছে। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য শামসুল ইসলাম ও বেগম সারোয়ারী রহমান অসুস্থতা ও বয়সজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয়। তাদের দলের উপদেষ্টা কমিটিতে নেওয়া হতে পারে। বর্তমানে থাকা ১২ জন স্থায়ী কমিটির সদস্য সক্রিয় রয়েছেন। নতুন কমিটিতেও বহাল থাকছেন এসব নেতা।

তারা হলেন— ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। সূত্রমতে, স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ নিয়ে দলের ভিতরে তুমুল লবিং-গ্রুপিং শুরু হয়েছে। প্রভাবশালী নেতারা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। নিজের গ্রুপকে এগিয়ে নিতে লন্ডন-ঢাকা দুই জায়গায় ব্যাপক তত্পরতা চলছে। কেউ কেউ বিএনপিপ্রধানের কাছেও নিজেদের পছন্দের নেতাদের নাম বলেছেন।

ওয়ান-ইলেভেনে কার কী ভূমিকা ছিল, সে বিষয়গুলোও সুযোগ বুঝে কেউ কেউ সামনে নিয়ে আসছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম না প্রকাশ করে জানান, স্থায়ী কমিটির ওপরই নির্ভর করবে পরবর্তী কমিটিগুলো কী ধরনের হবে। তা ছাড়া আগামী দিনে দল ও আন্দোলনের ভাগ্য নির্ধারণ করবে এই কমিটি। বেগম খালেদা জিয়া অনেকটা হিসাব-নিকাশ করেই এ কমিটি দেবেন। এখানে তাড়াহুড়া করার কিছু নেই। তারপরও আশাবাদী খুব শিগগিরই এ কমিটি ঘোষণা করবেন চেয়ারপারসন। -বিডি প্রতিদিন

৩০ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে