নিউজ ডেস্ক : বিএনপির মহাসচিব হলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০১১ সালে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরেই যিনি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদও পেয়েছেন পদোন্নতি। তাকে করা হয়েছে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
এ পদে একসময় তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আর কোষাধ্যক্ষ হিসেবে সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহাই বহাল রইলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্তের বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানান রিজভী আহমেদ।
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে সকল সদস্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দায়িত্ব দিয়েছেন, ক্ষমতা দিয়েছেন, তিনিই জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করবেন। সেই জাতীয় কাউন্সিলরদের দেয়া ক্ষমতাবলে চেয়ারপারসন জাতীয় নির্বাহী কমিটির কিছু পদে নেতৃবৃন্দকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি আপাতত এই তিনটি নাম ঘোষণা করলাম। পরে ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য পদে নেতৃবৃন্দের নাম ঘোষণা করবো।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন মহাসচিব হওয়ায় বিএনপি’র অনেক নেতাকর্মীই আনন্দ প্রকাশ করেছেন। মির্জা আলমগীর ব্যক্তিগতভাবে সজ্জন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। তাকে নিয়ে কখনওই তেমন কোনো বিতর্ক তৈরি হয়নি। যদিও সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি’র ব্যর্থতার জন্য তার দায় রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তবে দলের প্রতি আনুগত্যের ক্ষেত্রে তাকে নিয়ে কখনও কোনো প্রশ্ন ওঠেনি।
যে কারণে তার মহাসচিব হওয়া বিএনপি’র নেতাকর্মীদের কাছে প্রত্যাশিতই ছিল। যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদও দলের প্রতি আনুগত্যের পুরস্কারই পেলেন। নানা ঝড়-ঝাপ্টা সত্ত্বেও অনেকটা একাই তিনি দলের দপ্তরের দায়িত্ব সামলেছেন। কারাভোগও করেছেন একাধিকবার। সারা দেশের দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ। সাবেক এই ছাত্রনেতা দিনকে দিন বিএনপি’র রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন।
ওদিকে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে রাজনীতিতে অভিষেক হয়েছিল মির্জা আলমগীরের। ১৯৮৮ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের সময়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের চাকরি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
২০১১ সালের ১৬ই মার্চ বিএনপি তৎকালীন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ পর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়। দীর্ঘসময় বিএনপি’র সপ্তম মহাসচিব করা হলো তাকে। বিএনপি’র বেশির ভাগ নেতাকর্মী তার পক্ষে থাকলেও একটি অংশ তার বিরোধিতাও করেছিল। তবে বিএনপি’র রাজনীতির দুঃসময়ে দলটিতে যোগ দিয়েছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্বও পেয়েছিলেন দলের খারাপ সময়ে। আর দুঃসময়ে দলের পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হিসেবে তার অন্যরকম অভিষেক হয়ে গেল গতকাল।
বিএনপি’র প্রথম মহাসচিব ছিলেন একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে তাকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এরপর ১৯৮৬ সালের ১৭ই জানুয়ারি মহাসচিব হন কর্নেল (অব.) মুস্তাফিজুর রহমান। ১৯৮৭ সালের ১৭ই মার্চ মহাসচিব পদে আসেন কেএম ওবায়দুর রহমান।
পরের বছর ২২ শে আগস্ট মহাসচিব করা হয় ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারকে। ১৯৯৬ সালের জুনে সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি’র পরাজয়ের পর সালাম তালুকদার পদত্যাগ করলে মহাসচিব পদে আসেন আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। জরুরি অবস্থার সময় খালেদা জিয়া তাকে বহিষ্কার করেন। মহাসচিব করা হয় খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে। এবার সপ্তম মহাসচিব হলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
৩১ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস