শনিবার, ০২ এপ্রিল, ২০১৬, ০১:৫৬:২০

বন্ধুর মাধ্যমে রিজার্ভের অর্থ পেয়েছিলেন শালিকা

বন্ধুর মাধ্যমে রিজার্ভের অর্থ পেয়েছিলেন শালিকা

আলী রিয়াজ : শ্রীলঙ্কায় একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করার কথা বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ নেওয়া হয়। জাইকার অর্থায়নে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হবে বলে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে পেমেন্ট অর্ডার দেওয়া হয়।

শ্রীলঙ্কার হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত শালিকা ফাউন্ডেশনের প্রধান হাগোদা গোমেজ শালিকা পেরেরা এমন দাবি করেছেন। তিনি নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, তিনি তার বন্ধুর মাধ্যমে ওই অর্থ পেয়েছিলেন।

জাপানি এক বন্ধুর কথা তিনি বললেও বর্তমানে তার অবস্থান কোথায় তা জানাতে পারেননি। এদিকে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) জুপিটার স্ট্রিট শাখা ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অন্যদিকে ফিলিপাইন থেকে পাচার না হওয়া আরও প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি হয়ে শ্রীলঙ্কার যে প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে গিয়েছিল সেটির প্রধান নির্বাহী হাগোদা গোমেজ শালিকা পেরেরা

গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে তিনি বলেছেন, শ্রীলঙ্কায় একটি বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণসহ কয়েকটি প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) কাছ থেকে ওই অর্থ তাকে এনে দেওয়ার কথা বলেছিলেন এক বন্ধু। কিন্তু সেটি যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি করা অর্থ, সে বিষয়ে তার কোনো ধারণা ছিল না। তিনি জানতেন না এটি হ্যাকিং হওয়া বা চুরি হওয়া কোনো অর্থ। জাইকার অর্থায়নে শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুৎ প্রকল্প, শিশু ও নারীদের স্বাস্থ্য সহযোগিতার জন্য এই অর্থ পাওয়া গেছে। তবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অর্থ কীভাবে শালিকা ফাউন্ডেশনের নামে আসে সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এ ছাড়া যে বন্ধু তাকে অর্থ জোগাড় করে দেওয়ার কথা বলেছেন তার অবস্থান সম্পর্কেও তিনি কিছু বলতে পারেননি। শ্রীলঙ্কার আদালত গত সপ্তাহের শালিকা পেরেরাসহ ওই প্রতিষ্ঠানের ছয় পরিচালকের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তারা হলেন, সানজেবা টিসা বান্দ্রা, শিরানি ধাম্মিকা ফার্নান্দো, ডন প্রসাদ রোহিত, নিশান্থা নালাকা ওয়ালাকুলুয়ারাচ্চি ও আদিত্য দিওয়ালা। শ্রীলঙ্কার পুলিশ মামলা দায়ের করে ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে মোট ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয় গত ফেব্রুয়ারি মাসের ৪ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে। এর মধ্যে ২ কোটি ডলার শ্রীলঙ্কায় শালিকা ফাউন্ডেশন নামের একটি ভুয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছিল। ওই অর্থ শ্রীলঙ্কায় পৌঁছায় ডয়চে ব্যাংকের হাত ঘুরে। যুক্তরাষ্ট্রের ডয়েচে ব্যাংক থেকে শ্রীলঙ্কার প্যান এশিয়া ব্যাংকে থাকা শালিকা ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে জমা হয়।

অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধে প্রাপকের জায়গায় ‘ফাউন্ডেশন’ বানান ভুল থাকায় ডয়চে ব্যাংক বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল। প্যান এশিয়া ব্যাংকও বানান ভুল থাকায় পেমেন্ট করেনি। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এমন অনুরোধের কথা ভুয়া বলে জানানো হলে তা বাতিল করা হয়। এই ঘটনার পরই শালিকা ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা গা ঢাকা দেন। পরে এই অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত দেওয়া হয়।

৩০ মিলিয়ন ডলার উদ্ধারের চেষ্টা : ফিলিপাইনের তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আরও ৩০ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফিলিপাইনের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী চীনা নাগরিক কি ওংয়ের কাছ থেকে সাড়ে চার মিলিয়ন ডলার ইতিমধ্যে ফেরত পাওয়া গেছে। কিম ওংয়ের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আরও ৩০ মিলিয়ন ডলার রয়েছে।

এর মধ্যে তার কাছে প্রায় ৮ মিলিয়ন, আরেকটি ক্যাসিনোতে ৫ মিলিয়ন ও রেমিট্যান্স লেনদেন প্রতিষ্ঠান ফিলরিমের কাছে ১৭ মিলিয়ন ডলার। তবে ফিলরিম তাদের কাছে থাকা অর্থের বিষয়টি অস্বীকার করছে। এখন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংস্থা এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি) বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। দেশটির সিনেট কমিটিও খোঁজ পাওয়া অর্থ সম্পর্কে অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে।

সিনেট কমিটির প্রেসিডেন্ট রালফ রেকটো গণমাধ্যমকে বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি হওয়া অর্থের ৪০ শতাংশ উদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে। চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৩৪ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে দুটি ক্যাসিনো ও রেমিট্যান্স লেনদেন কোম্পানি ফিলরিমে ৩০ মিলিয়ন ডলার এখনো আটকে আছে। সেটা উদ্ধার করা যাবে। বাকি অর্থ দিগুইতোসহ কয়েক ব্যক্তির কাছে রয়েছে। এ ছাড়া লোপাট হওয়া ৪৬ মিলিয়ন ডলার হংকংয়ে চলে গিয়েছে। সেটা উদ্ধার করা কঠিন।

আরসিবিসির কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরও দুই মামলা : রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত আরসিবিসি জুপিটার শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দিগুইতোর বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অর্থ চুরিতে প্রথম সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত ব্যবসায়ী উইলিয়াম সোগো গতকাল এ মামলা দায়ের করেন।

আদালতের কাছে দায়ের করা অভিযোগে তিনি বলেছেন, তার সাইন নকল করে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা ও ঘুষ প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন দিগুইতো। এর আগেও দিগুইতোর বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা হয়েছে। দিগুইতোর মাধ্যমেই ৮১ মিলিয়ন ডলার হ্যাকিং ও পাচারের ঘটনা ঘটেছে। দেশটির সিনেট কমিটি তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় তিনি পুলিশি নজরদারিতে রয়েছেন। আগামী ১২ এপ্রিল সিনেট কমিটির সামনে তাকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে। যদিও এর আগে দুবার দিগুইতোকে সিনেট কমিটি জিজ্ঞাসাবাদ করে। সূত্র : বিডি প্রতিদিন
৩১ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে