শনিবার, ০২ এপ্রিল, ২০১৬, ০২:৫৪:১৫

তিন পদ নিয়ে অনিশ্চিত অবস্থা বিএনপিতে

তিন পদ নিয়ে অনিশ্চিত অবস্থা বিএনপিতে

এনাম আবেদীন ও শফিক সাফি : স্থায়ী কমিটির মাত্র তিনটি শূন্য পদ পূরণ করা নিয়ে বিএনপিতে ত্রিশঙ্কু অবস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের পর প্রায় দুই সপ্তাহ অতিক্রান্ত হলেও দলটির স্থায়ী কমিটি ঘোষণা করা যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনটি পদ শূন্য হলেও ওই পদে যাওয়ার জন্য আগ্রহী প্রার্থী অনেক। এ ছাড়া বিভাগভিত্তিক সমন্বয় করার বিষয় নিয়েও বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।

বস্তুত তিন নেতা মারা যাওয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির পদ তিনটি শূন্য হয়েছে। এ ছাড়া বার্ধক্যজনিত কারণে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় সরিয়ে দেওয়া হবে এম শামসুল ইসলাম ও সারোয়ারি রহমানকে। এতে সর্বমোট শূন্য পদের সংখ্যা পাঁচটি দাঁড়ালেও এরই মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব করা হয়েছে।

ফলে তার জন্য একটি পদ নির্ধারিত হয়েই আছে। আর সারোয়ারি রহমানকে সরানো হলেও তাঁর পদে বসানো হবে একজন মহিলা নেত্রীকে। আর ওই পদে চূড়ান্ত হয়ে আছে সেলিমা রহমানের নাম। ফলে এই দুটি পদ নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নন খালেদা জিয়া। সব সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে ওই বাকি তিনটি পদকে ঘিরে।

কারণ তারা দুজনই দলে অত্যন্ত সিনিয়র ও গ্রহণযোগ্য। দুই দিক থেকে দুজনের দলে অবদান রয়েছে বলে মনে করা হয়। এখন চেয়ারপারসন তাদের স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলেও সেটি সম্ভব হচ্ছে না। কারণ তারা দুজনই চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধিবাসী। একই বিভাগ বা অঞ্চল থেকে দুজনকে স্থায়ী কমিটির সদস্য করা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। চেয়ারপারসন নিজেই এ বিষয়ে তাঁর দুশ্চিন্তার কথা ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতাকে জানিয়েছেন।

বরিশাল বিভাগ থেকে বহু বছর যাবৎ স্থায়ী কমিটির সদস্য নেই। এবার বৃহত্তর ওই বিভাগ থেকে স্থায়ী কমিটির জন্য আগ্রহী প্রার্থী রয়েছেন মোট চারজন। তাঁরা হলেন ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বিশিষ্ট আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর।

বিএনপির দলীয় সূত্র মতে, প্রতিদ্বন্দ্বিতার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। প্রবীণ এই আইনজীবী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের মামলা পরিচালনার পাশাপাশি গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন।

উচ্চ আদালত অঙ্গনে তার প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতাও অনেক। বাকিদেরও নানা মাত্রিকতায় দলে অবদান থাকার কারণে তাঁরাও ওই পদের সমান দাবিদার। কিন্তু এবার স্থায়ী কমিটিতে বরিশালের অন্তত একজনকে খালেদা জিয়া নিতে চান। কিন্তু এই চারজনের মধ্য থেকে সেই একজনকে বেছে নিতে দেরি হচ্ছে তাঁর।

সূত্র মতে, ঢাকা বিভাগ থেকে আগ্রহী একাধিক প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা এবং শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন।

তাদের মধ্যে খোকা ঢাকা মহানগরীর রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী। এরই মধ্যে তার বিরোধী বলয়ের দুই নেতা মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বৈশ্বিক রাজনৈতিক মেরুকরণে দলটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে কাউন্সিলে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।

ফলে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারসাম্যের পাশাপাশি বৈশ্বিক মেরুকরণের দিক থেকেও মুক্তিযোদ্ধা খোকার অন্তর্ভুক্তির জন্য বিএনপির ওপর চাপ রয়েছে। তা ছাড়া এরই মধ্যে একটি মামলায় খোকার ‘সাজা’ হয়ে যাওয়ায় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও তার ব্যাপারে সহানুভূতিশীল।

অন্যদিকে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে ক্যারিয়ারের দিক থেকে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে অনেকেই ‘লিজেন্ডারি’ বলে মনে করেন। কিন্তু মাঝখানে জাতীয় পার্টি হয়ে আসায় বিএনপিতে পেছনে পড়ে গেছেন তিনি। গুলশান কার্যালয়ে গেলে কিংবা মঞ্চে উঠলে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে শাহ মোয়াজ্জেমকে এখন বসতে হয় স্থায়ী কমিটির পেছনের সারিতে, যা তার জন্য বেশ বিব্রতকর।

একটি সূত্রের দাবি, লন্ডনে বসবাসরত সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তার ব্যাপারে তদবির রয়েছে। পাশাপাশি খালেদা জিয়াও তাকে গুরুত্ব দিতে চান।

উল্লেখ্য, বিভাগভিত্তিক হিসেবে বিএনপিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগের। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এ বিভাগের অধিবাসী। নবনিযুক্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর. ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও লে জে (অব.) মাহবুবুর রহমান রংপুর বিভাগের অধিবাসী।

আর নজরুল ইসলাম খানের বাড়ি জামালপুর জেলায়, যা এখন নতুন ময়মনসিংহ বিভাগে পড়েছে। এম শামসুল ইসলাম, ড. আবদুল মঈন খান, আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বৃহত্তর ঢাকা বিভাগের অধিবাসী। স্থায়ী কমিটিতে খুলনা বিভাগের একমাত্র সদস্য তরিকুল ইসলাম। আর সিলেট বিভাগের কেউই এই পদে নেই।

জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্থায়ী কমিটি বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি। তাই এ ক্ষেত্রে চেয়ারপারসন একটু ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নেবেন। এ নিয়ে উৎকণ্ঠার কিছু নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গুছিয়ে চেয়ারপারসন কমিটি দেবেন।

স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মহাসচিব ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ঘোষিত হওয়ার পর স্থায়ী কমিটি ঘোষণা এখন সময়ের ব্যাপার। চেয়ারপারসন যেকোনো দিন এ কমিটি ঘোষণা করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির মতো বড় একটি দলে পদ-পদবি নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু চেয়ারপারসন এ দলের ‘পালস’ বোঝেন। ফলে তিনি সিদ্ধান্তও সেভাবেই নেবেন। -কালেরকণ্ঠ
৩১ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে