সোমবার, ০৪ এপ্রিল, ২০১৬, ০৯:১০:০০

দোটানায় বিএনপি

দোটানায় বিএনপি

কাফি কামাল ও বেলায়েত হোসাইন : ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নিয়ে দোটানায় বিএনপি। নানামুখী প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে চলমান নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে দলের ভেতরে। কয়েকদিন আগে নির্বাচনী অনিয়ম ও সরকার দলীয় প্রার্থী এবং নেতাকর্মীদের নৈরাজ্যের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাতে গিয়ে পরের ধাপগুলো থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান।

সার্বিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য গতকাল সিনিয়র নেতাদের জরুরি তলব করেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেই সঙ্গে চেয়ারপারসন কার্যালয় থেকে যোগাযোগ করে বিভিন্ন জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মতামতও নেয়া হয়। ওদিকে গতকাল বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদও তেমন ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, রাতের বৈঠকেই সিনিয়র নেতারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। আলাদা একটি আলোচনা সভায় ইউপি নির্বাচনে থাকার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

সবমিলিয়ে দিনভর গুঞ্জন ছিল ইউপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারে বিএনপি। কিন্তু রাতেই বৈঠকে বেশির ভাগ সিনিয়র নেতা এখনই বর্জন না করে আপাতত নির্বাচনে থাকার পক্ষে মত দেন। তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকার পক্ষে তুলে ধরেন পাল্টা যুক্তি। ফলে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বৈঠকে আসেনি নির্বাচনে থাকা-না থাকার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এ পরিস্থিতিতে আজ জোটের বৈঠক ডেকেছেন খালেদা জিয়া।

আজ রাতে জোটের বৈঠকেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন তিনি। জোটের বৈঠকের আগে জেলা ও উপজেলা কমিটির আরও কিছু সিনিয়র নেতার মতামত নেয়া হবে। এদিকে গতরাতে বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করেনি বিএনপি। নেতারাও মুখ বন্ধ রাখেন গণমাধ্যমের সামনে। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, এখন জোটের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তারপর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

এর আগে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সভানেতৃত্বে রাত পৌনে নয়টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা ওই বৈঠক চলে। বৈঠকে দলের নেতাদের কাউকে মুঠোফোন নিয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি। সবাই সভাস্থলের বাইরে মুঠোফোন রেখে সভায় অংশ নেন। বৈঠকে অংশ নেয়া কয়েকটি সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধান এজেন্ডা ছিল ইউপি নির্বাচন। দলের নেতারা এ বিষয়ে নিজেদের মত ও যুক্তি দিয়েছেন। নির্বাচনের থাকার পক্ষে-বিপক্ষে মত এসেছে, তর্ক-বিতর্কও হয়েছে। তবে নির্বাচনে থাকার পক্ষেই বেশির ভাগ নেতা মত ও যুক্তি দিয়েছেন। নেতারা বলছেন, কোন সিদ্ধান্ত না দিলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনে হয়েছে।

আজ ২০-দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ও থানা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ইউপি নির্বাচনে থাকা না থাকার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, যারা নির্বাচন বর্জনের পক্ষে মত দিয়েছেন তাদের যুক্তি হচ্ছেÑ ইতিপূর্বে বিএনপির নির্বাচন বর্জন নিয়ে দলের নেতাকর্মী, সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে যেমন নানা প্রশ্ন ছিল তেমনি বিএনপির সমালোচনায় মুখর ছিলেন সুশীল সমাজসহ শুভাকাক্সক্ষীরা। ইউপি নির্বাচনের দুইধাপে সরকার দলীয় প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের অব্যাহত নৈরাজ্য ও অনিয়ম এবং এসব ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত রকম নির্লিপ্ততার কারণে সবাই বাস্তব পরিস্থিতি দেখতে ও বুঝতে পেরেছে।

অনর্থক শক্তিক্ষয় ও অর্থ নষ্ট করার চেয়ে এখন সাংগঠনিক দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। কিন্তু যারা নির্বাচনে থাকার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা যুক্তি দেখিয়ে বলছেন, এ সরকারের অধীনে যতই নির্বাচন হবে ততই তাদের মুখোশ উন্মোচিত হবে দেশের জনগণ ও বিশ্ববাসীর কাছে। এছাড়া নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক, নেতাকর্মীদের মধ্যে সরকার বিরোধী একটি মনোভাব ও দলীয় কর্মকান্ডে চাঙ্গা থাকবে। বৈঠক সূত্র জানায়, সারাদেশে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারিসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহ, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, মীর মোহাম্মদ নাসির, অধ্যাপক এমএ মান্নান, ড. ওসমান ফারুক, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, মে. জে. (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, এএম আবদুল হালিম, আবদুল মান্নান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ, আমান উল্লাহ আমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, গোলাম আকবর খন্দকার ও মশিউর রহমান অংশ নেন। -এমজমিন
০৪ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে