নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িত রাঘববোয়ালরা, আমি দাবার ঘুঁটি। শুধু চাকরির উন্নতির লোভে পরিণাম বিবেচনা না করেই এ অপরাধে জড়িয়ে গেছেন তারা।
রিজার্ভ চুরির অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে ফিলিপাইন সিনেট কমিটির চতুর্থ দফা শুনানিতে এমন কথাই বলেন রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) মাকাতি সিটির জুপিটার শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মাইয়া সান্তোস দেগুইতো।
মঙ্গলবার রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট চুরির অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে আরো তথ্য জানতে এ শুনানির আয়োজন করে সিনেট কমিটি।
গত ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গোপন সুইফট কোড ব্যবহার করে ১০১ মিলিয়ন মার্কির ডলার তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। এ নিয়ে ম্যানিলাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দ্য ইনকোয়ারার গত ৫ ফেব্রুয়ারি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এরপর গত এক মাসে এ নিয়ে এটি চতুর্থ দফা শুনানি।
বক্তব্যে দেগুইতো বলেন, ফিলিপাইনে এনে চুরির প্রায় ৪ বিলিয়ন পেসো বিলি-বণ্টনের দায় যেভাবে আমার ওপর চাপানো হয়েছে তা দেখে মনে হচ্ছে মধ্যম সারির একজন ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে আমি অনেক ক্ষমতাধর!
শুনানিতে তিনি বলেন, সত্যিকার বিবেচনায় বড় ধরনের অপরাধ সংগঠন তখনই সম্ভব যখন এ কাজে শীর্ষ ব্যবসায়ীদের কেউ জড়িত থাকেন। একাধিক দেশে ওই ব্যবসায়ীর যথেষ্ট প্রভাব ও প্রতিপত্তিও থাকতে হবে।
দেগুইতো বলেন, কিন্তু পরিণাম না বুঝেই আমি নিজেকে এ ঘটনায় জড়িয়েছি। এটাও ঠিক যে, কাজটা সম্পন্ন করে ব্যাংক ম্যানেজার হিসেবে আমি আমার কর্মদক্ষতা প্রমাণ করতে এবং পেশায় এগিয়ে যেতে চেয়েছি। স্বামীর পাশাপাশি পরিবারকে সহায়তার জন্য চাকরিতে আরো উপরের পদে যেতে চেয়েছি।
রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের মাকাতি সিটির জুপিটার শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক দেগুইতো নিজের শাখায় ভুল তথ্য দিয়ে পাঁচ ব্যবসায়ীকে অ্যাকাউন্ট খুলতে সহায়তা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
রিজার্ভ চুরির যে ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফিলিপাইনে গেছে তা ওই পাঁচ অ্যাকাউন্টে রেখে ভাগ-বাটোরোয়াতে দেইগুতোর সহায়তা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে দেগুইতোর দাবি, ষড়যন্ত্র যদি ওই প্রক্রিয়ায় কিছু হয়ে থাকে তবে সে সম্পর্কে তার ধারণা নেই। শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে তার ভুল হয়ে থাকলে তা নিশ্চয়ই রিজাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট লরেনজো তান অবগত আছেন। ক্যাসিনো মালিক কিম অংয়ের অ্যাকাউন্টে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা বিপুল অংকের এ অর্থের লেনদেন রিজাল ব্যাংক প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহীর অগোচরে হওয়ার কথা নয়।
তিনি বলেন, কিম অংয়ে মালিকানাধীন ক্যাসিনোতেই চুরির টাকাগুলো জুয়াখেলার উপযুক্ত করা হয়। পরে তা হংকংয়ে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করা হয়। রিজার্ভ চুরি এবং চুরির ওই টাকা বিলি-বণ্টনে আমি হচ্ছি দাবার একটি ঘুঁটি, যারা খেলেছেন তারা আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং এবং অর্থ জগতের বড় বড় খেলোয়াড়।
সিনেট কমিটির উদ্দেশ্যে দেগুইতো বলেন, দাবার গ্রান্ডমাস্টারকে খুঁজে বের করা যদি এ শুনানির উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে আমি সে ব্যক্তি নই। জড়িতরা অনেক উপরের মানুষ এবং ক্ষমতাও বেশি। অথচ এতবড় একটা ঘটনায় কর্তৃপক্ষ ডেকেছে মধ্যম সারির সাধারণ একজন ব্যাংক ব্যবস্থাপককে।
এদিকে এ পর্যন্ত দুই ধাপে যথাক্রমে ৪ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন ডলার এবং ৮ লাখ ২৯ হাজার ডলার ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
৫ এপ্রিল,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম