নিউজ ডেস্ক : আন্দোলন, তদন্ত কিংবা অস্বীকার—‘পানামা পেপারস’ কেলেঙ্কারির পর মোটা দাগে এ তিন প্রতিক্রিয়াই দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে। তবে সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি হয়েছে আইসল্যান্ডে। সেখানে আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ডুর ডাভিড গুনলোসন।
এদিকে ফাঁস হওয়া এসব নথি নিয়ে এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া। আর শিগগিরই তদন্ত শুরুর আশ্বাস দিয়েছে ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ভারত, পানামাসহ বেশ কয়েকটি দেশ। তবে অধিকাংশ দেশ ও সরকারপ্রধান তাদের বিরুদ্ধে নথিতে উঠে আসা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গত সোমবার পানামার ‘মোসাক ফনসেকা’ নামের একটি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের এক কোটি ১৫ লাখ গোপন নথি ফাঁস হয়। এসব নথিতে প্রমাণ পাওয়া গেছে, বিশ্বের শতাধিক ক্ষমতাধর মানুষ কিংবা তাঁদের স্বজনরা বিদেশে অর্থপাচার করেছেন। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে নাম আছে চিত্রনায়িকা ও ফুটবল তারকাদেরও। বাদ যায়নি বিশ্বের শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও।
নথি ফাঁস হওয়ার পরই বিভিন্ন দেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে আইসল্যান্ডে। ফাঁস হওয়া নথি মোতাবেক, দেশটির প্রধানমন্ত্রী গুনলোসন ও তার স্ত্রীর নামে বিদেশে বিপুল অর্থপাচার হয়েছে। এ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে গতকাল আইসল্যান্ডের রাজধানীতে বিক্ষোভ করে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ অস্বীকার করে পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করতে প্রেসিডেন্টের অনুমতি চান। তবে আপাতত প্রেসিডেন্ট অনুমতি দেননি।
এদিকে অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, নথিতে নাম থাকা অস্টেলিয়ার ৮০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে তারা এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। আর পানামা প্রুতিশ্রুতি দিয়েছে, নথি ফাঁসের পুরো বিষয়টি তারা তদন্ত করে দেখবে। সে ক্ষেত্রে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করাই হবে মূল লক্ষ্য। দেশটির প্রেসিডেন্ট হুয়ান কার্লোস ভারেয়া বলেছেন, অন্যান্য দেশের তদন্তেও পানামা সহায়তা দেবে। মোসাক ফনসেকার এক প্রতিষ্ঠাতা বলেছেন, নথি ফাঁসের ঘটনাটি পানামার ওপর একটি হামলা।
তদন্তের জন্য ফাঁস হওয়া নথির অনুলিপি চেয়েছে কানাডা সরকার। দেশটির আরবিসি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ধনীদের অর্থপাচারে জড়িত। এ ঘটনায় চাপের মুখে পড়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও। ফাঁস হওয়া নথি মোতাবেক, ক্যামেরনের প্রয়াত বাবা কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশে অর্থপাচার করেছিলেন।
নথিতে আছে, বিদেশে অর্থপাচার করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীও। তবে মস্কো নথি ফাঁসের ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিয়েছে। প্রেসিডেন্টের এক মুখপাত্র বলেন, ‘পুতিন, রাশিয়া, রাশিয়ার স্থিতিশীলতা এবং আসন্ন নির্বাচনই নথি ফাঁসের মূল লক্ষ্য।’ ওই মুখপাত্রের দাবি, যেসব সাংবাদিকের মারফতে নথি ফাঁস হয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর কিংবা গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা।
অর্থপাচার করে বিদেশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার অভিযোগ আছে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মাওরিসিও মাক্রির বাবা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধেও। তবে মাক্রি বলেছেন, ওই প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আর্জেন্টিনার কর বিভাগ অবগত আছে। অর্থপাচারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো। এর পরও দেশে তাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফুটবল তারকা লিওনেল মেসির পরিবারও এক বিবৃতির মাধ্যমে অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মেসির পরিবার এটা পরিষ্কার করতে চায় যে লিওনেল মেসি কোনো ধরনের অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত নয়।’
অভিযোগ অস্বীকার করেছে চীনও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘চীনের যেসব নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা পুরোপুরি মিথ্যা।’ নথিতে আছে, চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির বর্তমান ও সাবেক আট নেতা কর ফাঁকির সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের পরিবারের সদস্যরাও আছেন।
পানামা পেপার লিক-কাণ্ডে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ খারিজ করলেন বলিউড মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চন। জানিয়ে দিলেন, কোনও বিদেশি সংস্থার সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই। বিগ বি-র দাবি, সম্ভবত তার নামের ‘অপব্যবহার’ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার যে তথ্য প্রকাশিত হয়, তাতে ৫০০ জন ভারতীয়র নাম ছিল। তালিকায় রয়েছে – অমিতাভ বচ্চন, তাঁর পুত্রবধূ ঐশ্চর্য রাই বচ্চন, ইন্ডিয়া বুলসের প্রতিষ্ঠাতা সমীর গহলৌত, ডিএলএফ কর্তা কে পি সিংহ, প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল হরিশ সালভে, কলকাতার ব্যবসায়ী শিশির বাজোরিয়ার।
অভিযোগ, এরা সকলেই কর ফাঁকি দিতে বিদেশে বিভিন্ন সংস্থায় বিনিয়োগ করেছেন। সাবেক সলিসিটর জেনারেল হরিশ সালভের সাফাই, তিনি কোনও আইন লঙ্ঘন করেননি। ব্যবসায়ী তথা বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়ার দাবি, বিদেশে তার ব্যবসা থাকলেও, তিনি কোনও কর ফাঁকি দেননি। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স।
৬ এপ্রিল ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস