বুধবার, ০৬ এপ্রিল, ২০১৬, ০৩:১৫:০৬

তেলের দাম কমছে, বাস ভাড়া কমছে না!

তেলের দাম কমছে, বাস ভাড়া কমছে না!

নিউজ ডেস্ক : সরকার জ্বালানি তেলের দাম কমানোর উদ্যোগ নিলেও বাস ভাড়া কমানোর বিষয়ে কোনো আগ্রহ নেই মালিকদের। গাড়ির যন্ত্রাংশের দাম ও অন্যান্য খরচ বৃদ্ধিসহ নানা অজুহাতে বিদ্যমান ভাড়াই বহাল রাখতে চান তারা।

উল্টো নতুন কৌশল হিসেবে মালিক সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, তেলের দাম না কমালে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তারা। এখন আর ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব দেবেন না।

সম্প্রতি ডিজেল, পেট্রল ও অকটেনের দাম তিন ধাপে কমানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে প্রথম ধাপে প্রতি লিটারে ১০ টাকা কমানো হবে। ফলে বাস ভাড়া কমানো নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তেলের দাম কমানোর পুরো সুবিধাটাই যাবে মালিকদের পকেটে। যাত্রীরা কোনো সুবিধাই পাবেন না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেছেন, বাস ভাড়া শুধু তেলের দামের কারণে বাড়ে না। এর সঙ্গে আরও অনেক কিছু যুক্ত আছে। তেলের দাম কমলেও অন্য সব কিছুর দাম অনেক বেড়েছে। তাই দাম কমলে ভাড়া কমবে, সেটা বলা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, বাসের ব্যাটারি, যন্ত্রাংশ, বডির দাম তো কমছে না। উল্টো এগুলোর দাম বেড়েই চলছে। এছাড়া পরিবহন পরিচালনা ব্যয়ও বাড়ছে। এসব কারণে আমরা বাস ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সরকার জ্বালানি তেলের দাম কমানোয় ওই প্রস্তাবের প্রয়োজন হবে না।

জ্বালানি তেলের দাম কমলে পরিবহন খরচও কমবে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ভাড়া নির্ধারণে সরকারের ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি রয়েছে। ওই কমিটি ২২টি খাতের ব্যয় বিশ্লেষণ করে যে সিদ্ধান্ত নেবে তাই-ই হবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দূরপাল্লার প্রায় সব গাড়িই সাধারণত ডিজেলে চলাচল করে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি এবং স্বল্পপাল্লার কিছু গাড়ি সিএনজিতে চলে। নন-এসি চেয়ারকোচগুলোতে সাধারণ ১৯০ থেকে আড়াইশ’ হর্স পাওয়ারের মেশিন থাকে। এগুলো এক লিটার তেলে গড়ে আড়াই কিলোমিটার পথ চলে। বিলাসবহুল গাড়িগুলো লিটারে ২ কিলোমিটার পথ চলে। এ হিসাবে দূরপাল্লার বাসগুলোতে প্রতি রাউন্ড ট্রিপে ১ থেকে ২ হাজার টাকা ব্যয় কমবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সহ-সভাপতি ও একতা পরিবহনের মালিক আবুল কালাম জানান, ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে প্রচণ্ড যানজট থাকে। এতে গাড়ির জ্বালানি খরচ বেড়ে যায়। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে বগুড়া যাতায়াতে একটি গাড়ির ১৬০ থেকে ১৯০ লিটার পর্যন্ত জ্বালানি তেল খরচ হয়।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সূত্র জানায়, গত ২৩ বছরে বাস ও মিনিবাসের ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪৫৩ শতাংশ। মূলত ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণেই বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এ সময় ডিজেলের দামও বেড়েছে ৩৮২ শতাংশ। ১৯৯০ সালে ডিজেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১৭ টাকা। ওই সময় বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ছিল ৩২ পয়সা। তেলের দাম বাড়ার কারণে কয়েকবার বাস ভাড়া বাড়িয়ে ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি সর্বশেষ প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ১ টাকা ৪৫ পয়সা করা হয়। এ সময় তেলের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫ টাকায়।

তবে নানা অজুহাতে যাত্রীদের থেকে প্রতি কিলোমিটার ২ টাকার মতো আদায় করা হচ্ছে। কারণ হিসেবে পরিবহন নেতারা জানান, ৫১ সিটের গাড়ি হিসাবে প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৪৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। যাত্রী বসতে আরামদায়ক করার জন্য তা ৪০ বা ৩৬ সিটে রূপান্তর করা হয়। ওই হিসাবে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া আরও বেড়ে যায়। এর সঙ্গে যাত্রীদের থেকে নেয়া হয় ফেরি ও ব্রিজের টোল চার্জ।

বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী, রাজধানীর গাবতলী থেকে বরিশালের দূরত্ব ২৪২ কিলোমিটার। যাত্রীপ্রতি ৩০ দশমিক ৩৯ টাকা টোলসহ ভাড়া দাঁড়ায় ৩৮১ টাকা। কিন্তু বাস মালিকরা ৪০ সিটের কারণ দেখিয়ে ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা আদায় করছেন।

অবশ্য বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তেলের দাম কমানোর কারণে একবার বাস ভাড়া কমানো হয়েছিল। ওই সময় তেলের দাম ৫৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৪৮ টাকা করা হয়েছিল। এ ছাড়া ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তেলের দাম আরেকবার কমানোয় বাস ভাড়া কমানো হয়েছিল। সে সময় তেলের দাম হয়েছিল প্রতি লিটার ৪৪ টাকা।

অবশ্য বিআরটিএর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, দাম কমানোর পর ভাড়া কমানোর কথা বলা হলেও বাস্তবে সেটা কার্যকর হয়নি বলে ওই সময় অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এর আগে যতবার তেলের দাম বেড়েছে, ততবার ভাড়া বেড়েছে, কিন্তু তেলের দাম কমানোর পর কাগজে-কলমে ভাড়া কমানোর কথা বলা হলেও বাস্তবে কমেনি।

তিনি বলেন, তেলের দাম কমলে বাস ভাড়া কমানো উচিত। তেলের মূল্য কমানোর সুবিধা শুধু বাস মালিকরাই পেয়ে থাকেন। এছাড়া ভাড়া নির্ধারণ প্রক্রিয়াও স্বচ্ছ নয়। প্রশাসনের নাকের ডগায় বাস মালিক ও শ্রমিকরা বাড়তি ভাড়া আদায় করলেও তার প্রতিকার পাওয়া যায় না। -যুগান্তর
৬ এপ্রিল ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে