বৃহস্পতিবার, ০৭ এপ্রিল, ২০১৬, ০৩:১২:১০

জামায়াত নিষিদ্ধ হলে নতুন নাম কী হবে?

জামায়াত নিষিদ্ধ হলে নতুন নাম কী হবে?

শফিকুল ইসলাম সোহাগ : জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হলে নতুন নামে রাজনীতির মাঠে নামবে দলটি। দলটির দায়িত্বশীল নেতাদের আশঙ্কা শেষ পর্যন্ত দল হিসেবে জামায়াত নিষিদ্ধ ঘোষণা হবেই। এ জন্য ভবিষ্যৎ রাজনীতির কথা চিন্তা করে জামায়াতের কেন্দ্র থেকে চারটি নতুন নাম প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করে তৃণমূলের নেতাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাদের মতামত নিয়ে যে কোনো একটি নাম ঠিক করা হবে। এই চার নামের তিনটিতেই ইসলাম শব্দটি নেই।

নামগুলো হচ্ছে তুরস্কের ক্ষমতাসীন পার্টির নামে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (জেডিপি), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি), ইসলামী জাগরণ দল ও বাংলাদেশ জাগরণ মঞ্চ। জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, দল নিষিদ্ধ হলে নতুন নাম কী হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। তবে নীতিনির্ধারণী মহল থেকে চারটি নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেখান থেকে নতুন নামকরণ করা হবে। তিনি বলেন, দলের দায়িত্ব যাচ্ছে সাবেক শিবির নেতাদের কাছে।

জানা যায়, নতুন দল গঠনের পাশাপাশি দলটি পরিচালনার জন্য শীর্ষস্থানীয় দুজন নেতার নাম প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয়েছে। নতুন দলের সভাপতি হতে পারেন জামায়াতের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান। আর সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ। এই পদের জন্য ঢাকা মহানগর কমিটির আমির রফিকুল ইসলাম খানের নামও শোনা যাচ্ছে। অন্যান্য পদের নেতাদের দায়িত্ব বণ্টনের কাজ চলছে। সূত্র জানায়, দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায়ের আগে বেশ কয়েক দফা বৈঠকে দলের নাম ও নেতৃত্ব পরিবর্তনের বিষয় ওঠে।

তবে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের পর একটি গ্রুপ দায়িত্বশীলদের বোঝাতে সক্ষম হন দলের নাম ও নেতা পরিবর্তনের বিষয়। পরে বিদেশে থাকা জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক এবং আরও বেশকজন নেতা (সবাই বিদেশে পলাতক) নতুন করে জামায়াতের আদলে নতুন দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নেতাদের সন্তানরা প্রথমে জামায়াতের নেতাদের কাছে প্রস্তাব করেন জামায়াতকে নতুন নামে সংগঠিত করার জন্য। বিষয়টি নিয়ে জামায়াত সংশ্লিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করেন নেতারা।

তারা বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নেতাদের সন্তানরা কেউ জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তাদের মতামতে জামায়াতের নাম পরিবর্তন করা হবে না। জেলা পর্যায়ের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত হবে দলের নাম। জানা যায়, নতুন দলে দলের আদর্শিক নেতা ও প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদী, সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম, আব্বাস আলী খান ও বর্তমান আমির কারান্তরীণ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর লেখা বই দলীয় কার্যক্রমে ব্যবহৃত হবে।

এর আগে দলটিতে যোগ দিতে প্রথমে সমর্থক পরে কর্মী ও এর পরের ধাপে ধাপে রুকন হওয়ার সুযোগ ছিল। আর এসব ধাপ পার করতে সবাইকে বিপুল পরিমাণ বই-পুস্তক পড়া ও কোরআন শরিফ এবং হাদিস মুখস্থ করার পর পরীক্ষায় পাস করতে হতো। এবার এতটা কঠিন পদ্ধতি থাকছে না। এ ছাড়া শিবিরে যোগ দিতে প্রথমে সমর্থক পরে কর্মী, এর পরে সাথী প্রার্থী, সাথী, এরপরে সদস্য প্রার্থী ও শেষ ধাপে সদস্য হিসেবে গণ্য করা হয় একেকজন সক্রিয় সদস্যকে।

এক্ষেত্রেও দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে তাদের সাবেক নেতা ও জামায়াত নেতাদের লেখা বই-পুস্তক, কোরআন ও হাদিস মুখস্থ করে পরীক্ষায় পাস করার পর দলে গ্রহণযোগ্যতা পায়। এই সদস্যরাই শিবিরের বিভিন্ন জেলা মহানগরসহ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নেতা নির্বাচিত হন। একইভাবে জামায়াতের রুকনরা জেলা, মহানগরসহ কেন্দ্রীয় পর্যায়ের দায়িত্ব পেয়ে থাকেন।

সূত্র জানায়, ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম, আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন ব্যবস্থাসহ পুরনো গঠনতন্ত্রেও কিছুটা পরিবর্তন আনা হচ্ছে। জানতে চাইলে জামায়াতের মধ্যম সারির একজন নেতা বলেন, যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে আদালত যদি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেন, সে আশঙ্কা থেকে নতুন দল করছেন নীতিনির্ধারকরা। কিন্তু নিষিদ্ধ হলেও মূল দল জামায়াত বিলুপ্ত করা হবে না। ফলে নতুন দলে জামায়াতেরই কর্তৃত্ব ও প্রভাব থাকবে।

১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনবার নিষিদ্ধ হয় জামায়াত। এর মধ্যে ১৯৫৯ ও ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে এবং ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান প্রতিষ্ঠার পর অন্য সব ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে জামায়াতও নিষিদ্ধ হয়। সাত বছর পর জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালের ২৫ মে আবার প্রকাশ্য রাজনীতির সুযোগ পায় জামায়াত।  -বিডি প্রতিদিন

৭ এপ্রিল, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে