শুক্রবার, ০৮ এপ্রিল, ২০১৬, ০২:৫২:০৬

আওয়ামী লীগে ঠাঁই পাবেন না বিতর্কিত ও হাইব্রিড নেতারা

আওয়ামী লীগে ঠাঁই পাবেন না বিতর্কিত ও হাইব্রিড নেতারা

রফিকুল ইসলাম রনি : জুলাইয়ের ১০ ও ১১ তারিখে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল। বিগত দুই দফা সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে তেমন একটা পরিবর্তন না এলেও এবার চালানো হবে বড় ধরনের শুদ্ধি অভিযান। যাদের কারণে দলকে দুর্নাম কুড়াতে হয়েছে, ছাঁটাই করা হবে তাদের।

নানা অপকর্ম, অপরাধ, পদ-বাণিজ্য ও মনোনয়ন-বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে যেসব নেতার বিরুদ্ধে, তাদের কপাল পোড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মূলত তারাই বাদ পড়তে পারেন কমিটি থেকে। স্থান হবে না হঠাৎ গজিয়ে ওঠা হাইব্রিড নেতাদেরও। পরিবর্তিত স্থলে আসতে পারেন একঝাঁক মেধাবী ও নতুন মুখ। কেন্দ্রীয় সম্মেলন সামনে রেখে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা হোমওয়ার্ক করছেন বলে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। তিন বছর মেয়াদি বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে গত ডিসেম্বরেই। ৯ জানুয়ারি মেয়াদ ছয় মাস বৃদ্ধি করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফা বৈঠকে ১০ ও ১১ জুলাই নির্ধারণ করা হয় দলের নতুন কাউন্সিলের তারিখ। আর সেই সম্মেলন ঘিরে নেতাদের মধ্যে একদিকে যেমন পদ-পদবি হারানোর ভীতি কাজ করছে, অন্যদিকে চলছে পদোন্নতির জোর তদবির।

কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে থাকা নেতারা নিজ নিজ পদ টিকিয়ে রাখতে কিংবা পদোন্নতি পেতে দলটির প্রতিটি অনুষ্ঠানে রাখছেন তাদের সরব উপস্থিতি। আবার কাউন্সিল সামনে রেখে কখনো ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বা করলেও নামে মাত্র, তারাও এখন নানা লবিং-তদবির শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে। এ ছাড়া উঠতি ব্যবসায়ীরাও পদ পেতে চান আওয়ামী লীগের কমিটিতে। এমনকি প্রবাসীরাও এখন ঢাকামুখী হয়েছেন। লন্ডন, কানাডা, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন পদ বাগিয়ে নিতে।

তারা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও প্রভাবশালীদের বাসা-অফিস-বাড়িতে ধরনা দিচ্ছেন। তুলে ধরছেন বিগত দিনে প্রবাসে তাদের নিজেদের অবস্থান। সূত্রমতে, সম্মেলনের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে দলটির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ততই সক্রিয় হয়ে উঠছেন আগ্রহী নেতারা। দীর্ঘদিন যেসব নেতাকে আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচিতে পাওয়া যায়নি, সম্মেলন সামনে রেখে তাদের সরব উপস্থিতি থাকছে প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই। দলটির বাঘা বাঘা নেতার বাসায়ও ধরনা দিচ্ছেন পদপ্রত্যাশীরা। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যপদ পেতে একঝাঁক নারীনেত্রী এবং ছাত্রলীগের সাবেক নেতার তত্পরতাও এখন উল্লেখ করার মতো।

জানা গেছে, এবারের সম্মেলনে প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সম্পাদকমণ্ডলীর প্রায় এক ডজন নেতা পদ হারানোর আতঙ্কে ভুগছেন। পদোন্নতি পাবেন এ আত্মবিশ্বাসও রয়েছে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার। আবার পদোন্নতি না পেলেও বর্তমান পদ যেন বহাল থাকে তা নিয়েও চলছে তদবির। এরই অংশ হিসেবে দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ, ধানমন্ডির কার্যালয়ে আনাগোনা ও প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে যাতায়াত বেড়েছে পদপ্রত্যাশী নেতাদের। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার কাজেও ব্যস্ত তারা।

প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যে অনুষ্ঠানগুলো হয় সেগুলোতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি এখন আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। দলের একাধিক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, গত সাত বছরে যারা ব্যাংক, বিমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন অথচ পদে থেকে দলকে গতিশীল করতে তাত্পর্যময় ভূমিকা রাখতে পারেননি, তাদের ব্যাপারে ‘পরে দেখা যাবে’ নীতি অবলম্বন করবেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিটি সম্মেলনেই সংযোজন-বিয়োজন হবে এটাই নিয়ম। আওয়ামী লীগ শুধু রাজনৈতিক দলই নয়, একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানও। কাজেই এখানে যোগ্য ও পরীক্ষিতরাই স্থান পাবেন। কোনো বিতর্কিত কিংবা উড়ে এসে জুড়ে বসা ব্যক্তিরা স্থান পাবেন না। দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ২০তম জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে দলে বড় ধরনের শুদ্ধি অভিযান চালাবেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের কোন পর্যায়ের নেতা কী করছেন, বা কী করেন সবই তার নখদর্পণে। সম্মেলনের আগে তিনি এখন থেকেই হোমওয়ার্ক সারছেন। -বিডি প্রতিদিন

৮ এপ্রিল ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে