শনিবার, ০৯ এপ্রিল, ২০১৬, ০৫:৩৪:৫৮

কমিটি গঠনে খালেদার কঠোর গোপনীয়তা

কমিটি গঠনে খালেদার কঠোর গোপনীয়তা

এনাম আবেদীন : কাউন্সিলের পর স্থায়ী কমিটিসহ নির্বাহী কমিটি গঠনে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিষয়টি নিয়ে এ পর্যন্ত দলের কোনো পর্যায়ের নেতার সঙ্গে তিনি আলোচনা করেননি। নিজেই বাসায় বসে তিনি ফাইল তৈরি করছেন।

জানা গেছে, ধূসর রঙের ওই ফাইলটি মাঝেমধ্যেই গুলশান কার্যালয়ে নিয়ে যাচ্ছেন খালেদা। বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসের হাত হয়ে রাতে আবার সেটি চলে যাচ্ছে চেয়ারপারসনের বাসায়। কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এভাবেই কেটে গেছে ২০ দিন। কিন্তু এত দিনেও কমিটি ঘোষিত না হওয়ায় দলের সর্বস্তরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা অনেকেই এ ঘটনাকে সিদ্ধান্তহীনতা এবং শীর্ষ নেতৃত্বের দুর্বলতা বলে মনে করছেন।  

স্থায়ী কমিটির নেতাদের হস্তক্ষেপ ও প্রভাব এড়াতে নির্বাহী কমিটি পরে ঘোষণা করা হতে পারে বলে আভাস মিলেছে। তা ছাড়া স্থায়ী কমিটির শূন্য তিনটি পদে অন্তর্ভুক্তি নিয়েও এক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই আগে যুগ্ম মহাসচিব ও ভাইস চেয়ারম্যানদের নাম ঘোষণা করা হতে পারে। যদিও গত ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ কাউন্সিলে বিএনপির কোনো স্তরের কমিটিই ভেঙে দেওয়া হয়নি। ফলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আগের স্থায়ী কমিটি বহাল আছে এবং ইচ্ছা করলে তারা চেয়ারপারসনের কাছে তদবির করতে বা পরামর্শ দিতে পারেন।

তবে কাউন্সিলের পর দলীয় রাজনীতিতে এক ধরনের শূন্যতা নেমে এসেছে। যে কারণে চেয়ারপারসন না ডাকলে পারতপক্ষে স্থায়ী কমিটির নেতারা গুলশান কার্যালয় বা  খালেদা জিয়ার বাসায় যাচ্ছেন না। কঠোর গোপনীয়তায় নির্বাহী কমিটির তালিকা খালেদা জিয়া একাই তার বাসায় বসে তৈরি করছেন বলে নেতারা ধরে নিচ্ছেন। তাঁদের মতে, এ কাজে তারেক রহমানের পরামর্শও নেওয়া হচ্ছে।

ওই তালিকা তৈরিতে খালেদা জিয়া তার ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয়ার সহযোগিতা নিচ্ছেন বলে বিএনপিতে আলোচনা আছে। কারণ ওই আত্মীয়া আবার গুলশান কার্যালয়ের প্রভাবশালী একজন কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ। দলের মধ্যে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে সাম্প্রতিককালে ওই কর্মকর্তা দলে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। ফলে তার বিরোধীদের ধারণা, তিনিই কৌশল করে চেয়ারপারসনের পরিবারের ওই সদস্যকে কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িয়েছেন। সূত্রমতে, তাদের আলোচনার সূত্র ধরেই বিষয়টি গত দু-তিন দিনে দলের মধ্যে ‘চাউর’ হয়েছে।

গুলশান কার্যালয়ের প্রভাবশালী একাধিক কর্মকর্তার পাশাপাশি বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতাও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। কয়েক দিন ধরে দলের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে তাঁরা রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, এক-এগারোর পর গুলশানের যে বাসায় খালেদা জিয়া বেশ কয়েক মাস ছিলেন, ওই বাসারই অধিবাসী ঘনিষ্ঠ ওই আত্মীয়া। যিনি নিয়মিত এখন খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় যাচ্ছেন বলে সূত্রের দাবি।  

সম্ভাব্য কমিটির ফাইলটি সম্প্রতি গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি দলের বেশ কয়েকজন নেতারও নজর কেড়েছে। কারণ দু-একটি বিষয়ে আলোচনার জন্য মাঝেমধ্যেই ওই ফাইল থেকে খালেদা জিয়াকে কাগজ বের করতে দেখছেন তাঁরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিনিয়র এক নেতা বলেন, মনে হচ্ছে, নানা কাজে আলোচনার মধ্যে হঠাৎ করে কারো নাম মনে পড়লে চেয়ারপারসন তা লিখে নিচ্ছেন। আর সে কারণেই ফাইলটি তিনি বয়ে বেড়ান—যোগ করেন ওই নেতা।

কমিটি গঠন সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, দলের জাতীয় কাউন্সিল নেতা নির্বাচনের দায়িত্ব চেয়ারপারসনের হাতে তুলে দেওয়ায় এখন কমিটি গঠনের এখতিয়ার সম্পূর্ণ তার। ফলে তিনি কখন কোন কমিটি ঘোষণা করবেন সেটি বলা যাচ্ছে না। আবার এ বিষয়ে তিনি কার সহযোগিতা নিচ্ছেন সেটিও না জেনে বলা ঠিক নয়।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মতে, মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও কোষাধ্যক্ষ পদ ঘোষণার পর স্থায়ী কমিটি যেকোনো দিন ঘোষণা হতে পারে। আবার চেয়ারপারসন ইচ্ছা করলে এর আগেও অন্য যেকোনো কমিটি ঘোষণা করতে পারেন। তবে কমিটি ঘোষণা যত আগে হয় দলের জন্য ততই মঙ্গল—বলেন স্থায়ী কমিটির প্রবীণ এই সদস্য।

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেন, কমিটি গঠন সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই। এটি চেয়ারপারসনের এখতিয়ার। তিনি যখন দেবেন তখন হবে।

যুগ্ম মহাসচিব পদে আলোচনায় যারা...

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যুগ্ম মহাসচিবের পদ রয়েছে সাতটি। সর্বশেষ কাউন্সিলে এ পদের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। সূত্রমতে, সাতটি পদের বিপরীতে প্রার্থী রয়েছেন অন্তত ১৫ জন। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা সবাই যুগ্ম মহাসচিব হতে চান। তবে বরিশালের সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ারের ওই পদ পাওয়া প্রায় নিশ্চিত। এ ছাড়া নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু যুগ্ম মহাসচিব হচ্ছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

তাদের বাইরে যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও যুগ্ম মহাসচিব হওয়ার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে। চট্টগ্রামের গোলাম আকবর খন্দকার, ঢাকা মহানগরী বিএনপির আবদুস সালাম, নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবীর খোকনের নামও আলোচনায় আছে। অবশ্য রাজনীতিতে সুবিধার জন্য সালামকে শুভাকাঙ্ক্ষীরা মহানগরী বিএনপির সভাপতি করার পক্ষে। আর কোনো কারণে যুগ্ম মহাসচিব করা না গেলে খায়রুল কবীর খোকনকে যুবদলের সভাপতি করা হবে এটি মোটামুটি নিশ্চিত।

সূত্রমতে, তাঁদের বাইরে ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, রংপুরের আসাদুল হাবিব দুলু, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এহসানুল হক মিলন, নাজিমউদ্দিন আলম, ঝিনাইদহের মশিউর রহমান, বিশেষ সম্পাদক রাজশাহীর নাদিম মোস্তফা যুগ্ম মহাসচিব হতে আগ্রহী। মহিলা নেত্রীদের মধ্যে যুগ্ম মহাসচিব হতে চান শিরিন সুলতানা ও আসিয়া আশরাফি পাপিয়া।

আগের তালিকার ৭ নম্বর যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হওয়ায় দলে কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। তালিকার ওপরের দিকের ছয়জনকে এখন ভাইস চেয়ারম্যান বা উপদেষ্টা করতে হবে। - কালেরকণ্ঠ
৯ এপ্রিল ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে