শনিবার, ০৯ এপ্রিল, ২০১৬, ০৮:১২:১৯

নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদি রুম, এ যেন এলাহিকাণ্ড!

নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদি রুম, এ যেন এলাহিকাণ্ড!

নিউজ ডেস্ক : রাজধানী থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-মাওয়া সড়কের দক্ষিণে কেরানীগঞ্জে ৪ হাজার ৫৯০ বন্দির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন নতুন কারাগার নির্মাণ করা হয়েছে।  ১৯৪ দশমিক ৪১ একর জমির ওপর নির্মিত নতুন কারাগার।  কারাগারের নির্মাণ শুরু হয় ২০০৭ সালে।  এর ব্যয় হয় ৪০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।  

কারাগারের এমনতর নানা ব্যবস্থায় কয়েদি রুম, এ যেন এলাহিকাণ্ড।  ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কেরানীগঞ্জ এটি হবে এশিয়ার সর্ববৃহৎ কারাগার।

হাজতিদের জন্য তৈরি করা হয় পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী, করতোয়া ও মনিহার।  মধুমতি ও রূপসাও কয়েদিদের জন্য।  আর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের রাখা হবে ডেঞ্জার সেল বনফুল, বকুল, শাপলা ও সূর্যমুখীতে।

তৈরি করা হয়েছে ফাঁসির মঞ্চ ও পেরিমিটার ওয়াল।  বন্দিরা পালাতে গেলেই সক্রিয়ভাবে বেজে উঠবে পাগলা ঘন্টি।  রয়েছে জলসিঁড়ি ঘর, গ্রন্থাগার, খোলা মাঠ।

রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-মাওয়া সড়কের দক্ষিণে রাজেন্দ্রপুরে অবস্থিত নতুন এ কারাগার উদ্বোধন করবেন।  নদী ও ফুলের সঙ্গে মিল রেখে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভবনগুলোর নামকরণ করা হয়েছে।  

প্রধান ফটক : কারাগারটিতে বন্দি ধারণক্ষমতা চার হাজার ৫৯০ জন। প্রধান ফটকের বাঁ পাশে রির্জাভ গার্ড হাউজ, তারও বাঁয়ে বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ভবন। প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই ডানপাশে রয়েছে দৈনিক রসদ গ্রহণ ও বিতরণ কক্ষ; তারপর ভর্তি শাখা এবং মুক্তি শাখা। আর ফটকের পাশে রয়েছে জেলারের কক্ষ।

বন্দিরা থাকবেন যেখানে : প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে ডান দিকে তাকালে দেখা যাবে কারাগার ভবন পদ্মা, তার দক্ষিণে যমুনা, তারপরই মেঘনা।  ছয়টি ছয়তলা ভবনে হাজতি এবং একই ধরনের দুটি ভবনে কয়েদিদের রাখা হবে। এসব ভবনের প্রতি তলায় ৪০টি করে কক্ষ; প্রতি কক্ষে ১৩ জন করে বন্দি রাখার ব্যবস্থা।  ২০ হাত দৈর্ঘ্য ও ১০ হাত প্রস্থের প্রতিটি কক্ষে থাকবে চারটি করে সিলিং ফ্যান। পাশেই রয়েছে বাথরুম।

ডেঞ্জার সেল : চারটি চারতলা ভবন হবে ডেঞ্জার সেল।  ৪০০ দুর্ধর্ষ জঙ্গি ও সন্ত্রাসীকে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে।  রয়েছে ডিভিশনপ্রাপ্ত (ভিআইপি) বন্দিদের জন্য ১৬টি বিশেষ কারাকক্ষ।  মেঘনার পূর্বপাশের ভবনটি  চম্পাকলি, যেখানে ভিআইপি বন্দিদের রাখা হবে।  চম্পাকলির উত্তরে সুরমায় রাখা হবে কিশোর অপরাধীদের।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার আরিফুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, কিশোর অপরাধীদের কাশিমপুরে কিশোর সংশোধানাগারে পাঠানো হবে। তবে যাদের বয়স ১৮ থেকে ২২ বছর, তাদের সুরমায় রাখা হবে।
হাজতিদের রাখা হবে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী, করতোয়া ও মনিহারে। কয়েদিরা থাকবেন মধুমতি ও রূপসায়।

শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও গুরুতর মামলার আসামিদের রাখা হবে ডেঞ্জার সেল- বনফুল, বকুল, শাপলা ও সূর্যমুখী নামের চার ভবনে।  চারতলা এসব ভবনের প্রতি কক্ষেই টয়লেট ও ফ্যান রয়েছে।

ফাঁসির মঞ্চ : ফাঁসির মঞ্চ রয়েছে কারাগারের দক্ষিণ অংশের সীমানা প্রাচীরের কাছে বনফুলের সীমানার মধ্যে।  ফাঁসির মঞ্চটি দক্ষিমুখী এবং মঞ্চের ওপর ছাউনি রয়েছে।  একই মঞ্চে একসঙ্গে দুজনকে ফাঁসি দেয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।

বাজবে পাগলা ঘন্টি : এ কারাগারের ডেঞ্জার সেলগুলো কাছাকাছি।  বনফুলের উত্তরে বকুল আর পূর্বপাশে শাপলা। আর বকুলের পূর্বপাশে সূর্যমুখী।

এই চার কারা ভবন ঘিরে রয়েছে ১৮ ফুট উচ্চতার সীমানা প্রাচীর।  তার ওপর দুই ফুট বৈদ্যুতিক তারের সেন্সর।  প্রতিটি ভবনের রয়েছে আলাদা ছোট প্রাচীর।  কোনো আসামি ১৮ ফুট দেয়াল টপকে যেতে চাইলে তারের সেন্সরে স্পর্শ লাগামাত্র নিরাপত্তা ঘণ্টা বেজে উঠবে।  পলায়নপর কয়েদিকে খেতে হবে বৈদ্যুতিক শক।  এখানে এক ভবনের আসামি অন্য ভবনে যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।

জলসিঁড়ি ভবন : প্রধান ফটক দিয়ে সোজা ভেতরে ঢুকলে প্রথমে বাঁ পাশে গ্রন্থাগার এবং তার উত্তরে মানসিক বন্দিদের জন্য জলসিঁড়ি ভবন।  জলসিঁড়ির পূর্বপাশে এমআই ইউনিট ভবন। সেখানে একসঙ্গে আটজন বন্দিকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া যাবে।

বিশেষ শেড : জলসিঁড়ি ভবনের পর বিশাল ফাঁকা জায়গা।  এখানে রয়েছে কেইস টেবিল শেড।  কোন আসামিকে কোন ভবনে নেয়া হবে তা নির্ধারণ করা হয় এ শেডে বসে।  আসামিদের মধ্যে কেউ অপরাধ করলে, সেখানে এনে সাময়িক বিচারও করা হয়।  কেইস শেডের দক্ষিণ-পশ্চিমে মধুমতী ভবন আর পূর্বে সুরমা।  সুরমার দক্ষিণে ওয়ার্ক শেড আর ওয়ার্ক শেডের পূর্বে রয়েছে আটার মিল।

দোতলা ওয়ার্ক শেডে বড় বড় চারটি কক্ষ রয়েছে।  সেখানে বন্দিরা কী কী কাজ করবেন তা এখনো নির্ধারণ হয়নি।

সেলুন, লন্ড্রি, ব্যারাক দুর্জয় : কারাগারের ভেতর সেলুন ও লন্ড্রি ভবনও রয়েছে।  সবকিছু পর্যবেক্ষণের জন্য কারাগারের চারপাশে রয়েছে ৪০ ফুট উঁচু চারটি ওয়াচ টাওয়ার।

কারাগারের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে রয়েছে ব্যারাক দুর্জয়।  ৯৬টি কক্ষে প্রায় ৪০০ কারারক্ষী সেখানে থাকতে পারবেন।

কারাগারের পশ্চিম পাশে তৈরি করা হয়েছে আবাসিক এলাকা।  ৬০০ বর্গফুট আয়তনের ১৭টি ভবন সেখানে তৈরি হচ্ছে।  ৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য ১২৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটও তৈরি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ডেপুটি জেলার আরিফুর রহমান জানান, চম্পাকলিতে ১৬টি ভিআইপি কক্ষ রয়েছে, যাতে ১৬ জন ভিআইপি বন্দি থাকতে পারবেন।

গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের মতোই এটিকে চার ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।  পুরুষের জন্য ২টি পার্ট ও নারী বন্দিদের জন্য ১টি পার্ট এবং কারাগারের বাইরের অংশে ২০০ শয্যার হাসপাতাল।  থাকছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও সুবিধা।

কারাভ্যন্তরে বিশ্বের উন্নত দেশের কারাগারের ন্যায় ৬ তলাবিশিষ্ট ৮টি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।  প্রতিটি ভবনে ৫০০ বন্দিকে রাখা হবে।  রয়েছে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, দুধর্ষ ৪০০ আসামিকে রাখার জন্য ৪ তলাবিশিষ্ট ৪টি ভবন। এতে প্রতিটি ফ্লোরে ১০০ বন্দিকে রাখা হবে।

৬০ জন ভিআইপি (ডিভিশনপ্রাপ্ত) বন্দিকে রাখার জন্য ৬০টি বিশেষ কক্ষ রয়েছে।  কিশোর অপরাধে অভিযুক্ত ১০০ কিশোর বন্দিকে রাখার জন্য রয়েছে বিশেষ সেল ও ৩০ জন মানসিক ভারসাম্যহীন বন্দির জন্য আলাদা ভবন।

কারাগারের বাইরে : কারাগারের বাইরে থাকবে কর্মরত কর্মকর্তাদের ৫০টি পরিবারের আলাদা ইউনিট ও কর্মচারীদের ৩৫০টি পরিবারের জন্য আলাদা ভবন।

রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনোদনে অফিসার্স ক্লাব, কর্মচারীদের জন্য স্টাফ ক্লাব, স্কুল, মসজিদ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ সভার জন্য মিলনায়তন।

এখন শুধু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায়।  প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর  সেখানে পুরাতন কারাগার থেকে বন্দিদের স্থানান্তর করা হবে।
৯ এপ্রিল,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে