সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৬, ০৪:৪৩:৫৯

কোনো উদ্যোগ নেই বিএনপি নেতাদের!

কোনো উদ্যোগ নেই বিএনপি নেতাদের!

কাফি কামাল : দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠানের পর পেরিয়ে গেছে তিন সপ্তাহ। কিন্তু অতিরিক্ত পদ ছাড়ার কোনো উদ্যোগ নেই বিএনপি নেতাদের। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি যুক্ত করা হয়েছে দলের গঠনতন্ত্রে। বলা হয়েছে, কোনো নেতা একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ পদে থাকতে পারবেন না।

কাউন্সিলে সে সংশোধনী পাস হলেও তার বাস্তবায়নে নিজেদের তরফ থেকে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন না নেতারা। দু’চারজন নেতা কেন্দ্রীয় বা জেলার পদ ছাড়ার ব্যাপারে চেয়ারপারসনসহ শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে বেশির ভাগই জেলা কমিটির শীর্ষ পদ ধরে রাখার পাশাপাশি পদোন্নতি চাইছেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে। সংশোধনীতে কেন্দ্রীয় পদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট উল্লেখ না থাকা ও চেয়ারপারসনের বিশেষ বিবেচনার সুযোগ নিতে চাইছেন সবাই। নানা যুক্তি দেখিয়ে করছেন গড়িমসি। চালাচ্ছেন নানামুখী লবিং-তদবির। অনেকে আবার আগেই চাইছেন নিশ্চয়তা।

কেউ কেউ কেন্দ্রীয় পদের জন্য তদবির করতে গিয়ে বলছেন, কিছুদিনের মধ্যেই সম্মেলন করে ছেড়ে দেবেন জেলা বিএনপির দায়িত্ব। গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর ও চেয়ারপারসন কার্যালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। দলের ‘এক নেতা এক পদ’ নীতির ব্যাপারে একমাত্র ব্যতিক্রম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কাউন্সিলের পর তিনিই একমাত্র নেতা যিনি অতিরিক্ত পদ ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে চেয়ারপারসনের কাছে চিঠি দিয়েছেন।

৩০শে মার্চ পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার দুদিনের মধ্যে তিনি কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা চেয়ে চেয়ারপারসনের কাছে চিঠি দেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি এখনও ওই দুটি পদে রয়েছেন। কৃষক দলের কমিটি পুনর্গঠন ও ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটি পুনর্গঠনের আগপর্যন্ত তিনি ওই দুই পদে থাকবেন। তবে অতিরিক্ত দুইপদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দেয়ার মাধ্যমে তিনি পরিষ্কার করেছেন আর ওই দুই পদে থাকবেন না। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত নেয়ার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সে পথে হাঁটেননি আর কেউ।

বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে এক নেতা এক পদ নীতি চূড়ান্ত করা হলেও সেখানে কিছু ফাঁক-ফোকর রয়েছে। প্রথমত, সুনির্দিষ্ট করে বলা নেই- কেন্দ্রীয় কমিটির সকল সম্পাদকীয় পদসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা এর আওতায় পড়বেন কিনা। এ সুযোগে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নানা রকম লবিং-তদবির করছেন। কোন গ্রুপ চাইছেন, যুগ্ম সম্পাদক থেকে উপরের পদগুলোর ক্ষেত্রে এ নীতি কার্যকর হোক, কোন গ্রুপ চাইছেন সম্পাদকীয় পদ থেকেই।

অন্যদিকে গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, চেয়ারপারসন বিশেষ ক্ষেত্রে এটা শিথিল করতে পারবেন। সুনির্দিষ্ট উল্লেখ না থাকা ও চেয়ারপারসনের বিশেষ বিবেচনার সুযোগ পেতে লবিং-তদবির করছেন অতিরিক্ত পদধারী কেন্দ্রীয় নেতারা। পাশাপাশি সমর্থকদের মাধ্যমে দলের মহলে ছড়াচ্ছেন নানা গুঞ্জন।

এ ব্যাপারে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের অন্যতম সফলতা হচ্ছে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে এক নেতা এক পদ নীতি অনুমোদন। কাউন্সিলের আগে গঠনতন্ত্র সংশোধনের সময় সর্বাধিক প্রস্তাব এসেছিল এ ইস্যুতে, কাউন্সিলেও সবচেয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পাস হয়েছে এ সংশোধনী। এটা বিএনপি ও বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি মাইলফলক।

তিনি বলেন, দলে একাধিক পদ দখলে রেখেছেন অনেক নেতাই। মহাসচিব এক নেতা এক পদ নীতিতে চলার পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। এখন অন্যদের সে পথে চলার সময়। আশা করি, দলের বৃহত্তর স্বার্থে অন্যরাও দ্রুত সে পথে হাঁটবেন।

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপি বড় দল হিসেবে নেতাদের নানা বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তবে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে কাউন্সিলে এক নেতা এক পদের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ায় এর অন্যথা করার সুযোগ নেই। সবাই ধীরে ধীরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। দলের একাধিক সূত্র জানায়, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী জেলা সভাপতি পদকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। অন্যদিকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঝালকাঠি জেলা বিএনপি সভাপতি শাহজাহান ওমর বীর উত্তম জেলার পদ ছেড়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে চাইছেন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, আমি চেয়ারপারসনের কাছে বলেছি- আমাকে নির্বাচনে প্রার্থী করলে জেলার দায়িত্ব দিতে হবে। আর নির্বাচনে প্রার্থী না করলে জেলায় থাকার দরকার নেই।

বিএনপির অনেক নেতাই দখলে রেখেছেন একাধিক পদ।  দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও ব্রিগেডিয়ার (অব.) আসম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ও অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম উপদেষ্টা এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু যুগ্ম আহ্বায়কের অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন।

ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে- রাবেয়া চৌধুরী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা, আলতাফ হোসেন চৌধুরী পটুয়াখালী জেলা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে- আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগর, আহমদ আজম খান টাঙ্গাইল, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জ, অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম খুলনা জেলা, আবদুল মান্নান ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বের রয়েছেন। চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু একই সঙ্গে কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক।

যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে- যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ার বরিশাল মহানগর, খায়রুল কবির খোকন নরসিংদী, লায়ন আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদে রয়েছেন। অন্যদিকে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি ও হাবিব-নবী খান সোহেল ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য সচিব এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতির অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। নতুন সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে- ফজলুল হক মিলন গাজীপুর জেলা, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোর, আসাদুল হাবিব দুলু লালমনিরহাট, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনা মহানগর সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম মহানগরের দায়িত্বে রয়েছেন।

যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে যারা গতকাল দায়িত্ব পেয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাদের আগের পদকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। নতুন কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের অনেকেই বিভিন্ন জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।

অতিরিক্ত পদ ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, দলের গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনার কারণে এক নেতা একাধিক পদে থাকতে পারবেন না। কিন্তু সব জায়গায় নেতৃত্ব শক্তিশালী নয়। এই দিকটি বিবেচনা করেই গঠনতন্ত্রে চেয়ারপারসনের বিশেষ বিবেচনার বিষয়টিও যুক্ত করা হয়েছে। এখন তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই হবে।

রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। এখন জেলার নেতাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বসবো। তারা যে পরামর্শ এবং মতামত দেন সেটাই করবো। এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যে- কৃষি সম্পাদক শামসুজ্জোহা খান নওগাঁ, বিশেষ সম্পাদক নাদিম মোস্তফা রাজশাহী জেলা, ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী কুষ্টিয়া, শিল্প বিষয়ক সম্পাদক একেএম মোশাররফ হোসেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক আবুল খায়ের ভূঁইয়া লক্ষ্মীপুর জেলার সভাপতি, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক খালেদা রাব্বানী মৌলভীবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন।

এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন সম্পাদক ও সহসম্পাদকদের মধ্যে- আফজাল এইচ খান ময়মনসিংহ উত্তর, জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া ফরিদপুর, আবদুল হাই মুন্সিগঞ্জ, তৈমূর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ সভাপতি ও আমিনুর রশিদ ইয়াসিন কুমিল্লা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে পুনর্গঠিত কমিটির নতুন যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করায় সংক্রিয়ভাবে একটি করে পদ কমে গেছে নোয়াখালী জেলা সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান, রাজশাহী মহানগর সভাপতি মিজানুর রহমান মিনু, ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি মশিউর রহমানের অতিরিক্ত পদ। তবে এরা সবাই রয়েছেন পুনর্গঠিত কমিটিতে পদোন্নতির তালিকায়। -এমজমিন
১১ এপ্রিল ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে