বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৬, ০২:২৩:১৯

রহস্যজনক 'নিখোঁজ'রা ফিরলেও রহস্য অজানা!

রহস্যজনক 'নিখোঁজ'রা ফিরলেও রহস্য অজানা!

সাহাদাত হোসেন পরশ : রহস্যজনক নিখোঁজের পর কেউ কেউ আবার স্বজনদের কাছে 'ফিরছেন'। দীর্ঘদিন পর পরিবারের 'নিখোঁজ' সদস্যকে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। তবে নিখোঁজ ব্যক্তিরা ফিরে এলেও তাদের অনেকে অজানা ভয় আর আতঙ্কে গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন।

তাদের চোখে-মুখে অস্ফুট ভীতি। তাই স্বজনরা কেউ তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত কথা বলতে চান না। তাদের 'অপহরণের' সঙ্গে কারা জড়িত? কে বা কারা কী কারণে তাদের 'তুলে' নিল? না-কি কাউকে ফাঁসাতে নিজেরাই 'আত্মগোপনে' ছিলেন? যেসব গুপ্তস্থানে অপহৃতদের রাখা হয় সেটির মালিক কারা? অপহৃত এসব ব্যক্তি ফিরলেও এ নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। এমনকি অনেক ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের পক্ষে তাদের পরিবারের সদস্যরা জিডি করলেও তার তদন্ত রহস্যজনক কারণে খুব একটা এগোয় না।

১৬ দিন একটি ঘরে চোখ-হাত বেঁধে আটকে রাখার পর সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর ভাইয়ের বন্ধু মিজানুর রহমান সোহাগ বাড়ি ফিরেছেন। পরিবারের অভিযোগ, গত ২৭ মার্চ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তাকে তুলে নেওয়া হয়। এর আগে রহস্যজনক নিখোঁজের এক সপ্তাহ পর পাওয়া গেছে সাইবার বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহাকে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জিয়া রহমান বলেন, কাউকে বিনা কারণে ধরে নেওয়ার পর দীর্ঘ সময় আটক রাখা মানবাধিকার লঙ্ঘন। কারা, কেন, কী

কারণে এসব করছে এটা জানাও যাচ্ছে না। অধিকাংশ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা মুখ খোলেন না। এর নেপথ্যে কারা রয়েছে এটা অনুসন্ধান করে বের করার দায়িত্ব গণমাধ্যমেরও। এ ছাড়া অন্যকে ফাঁসাতে আত্মগোপনে থাকার নজিরও আমাদের সমাজে রয়েছে। সব মিলিয়ে এ পরিস্থিতি কোনোভাবে কাম্য নয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, নিখোঁজ ও অপহরণের ঘটনায় ভুক্তভোগী অথবা তাদের পরিবারের সদস্যরা থানায় অভিযোগ দিলে তা তদন্ত করে দেখা হয়।

আলোচিত কিছু ঘটনা :বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ পাচারের ঘটনায় গণমাধ্যমে বক্তব্য প্রচারের পর আলোচনায় আসেন সাইবার বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা। এরপরই চলতি বছরের ১৬ মার্চ রাতে রাজধানীর একটি এলাকা থেকে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয় 'ইনসাইট বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন' নামক প্রতিষ্ঠানের ভাইস চেয়ারম্যান জোহাকে। শুরুতে তাকে উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সহায়তা দেয়নি বলে অভিযোগ এলেও থানা পুলিশ ওই ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি নিতে রাজি হয়।

অবশ্য স্বজনরা 'বিশেষ' একটি ফোন পেয়ে আর জিডি করেননি। এক সপ্তাহ পর গভীর রাতে সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জোহাকে রাজধানীর কলাবাগানের বাসায় পৌঁছে দেন। ওই সময় তারা স্বজনদের কাছে দাবি করেন, জোহা ওই রাতে বিমানবন্দর সড়কে উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তাকে চিনতে পেরে বাসায় পৌঁছে দিয়েছেন তারা। বাসার ফেরার পর জোহা গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। তবে তার পরিবারের সদস্যরা জানান, জোহা মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত। জোহার ফিরে আসায় প্র্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

'নিখোঁজ' হওয়ার তিন দিন পর গত জানুয়ারিতে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক শামীম খান তপুকে উদ্ধার করে পুলিশ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মিন্টো রোড থেকে তাকে উদ্ধার করেছিল। অভিযোগ আছে, চট্টগ্রামের জেএমবির এক সদস্যকে তপু তার কক্ষে আশ্রয় দিয়েছিলেন।

এর আগে ২০১৪ সালের এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জ থেকে রহস্যজনকভাবে অপহৃত হন বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক। এর ৩৫ ঘণ্টা পর তিনি ফিরে এলেও এখন পর্যন্ত অপহরণের রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। একই বছর দুই মাস ১০ দিন নিখোঁজের পর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার আবুল হাসানাত পলিনের খোঁজ মিলে। রাজধানীর মিরপুরের দারুসসালাম এলাকায় তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় রেখে যায় অপহরণকারীরা।

মিরপুর ১৩ নম্বর এলাকার বাসায় পৌঁছাতে রিকশাভাড়া বাবদ অপহরণকারী তাকে ৫০ টাকা পকেটেও গুঁজে দেয়। এরপর তিনি চোখ খুলে রিকশা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। ওই বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ছেলেকে বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পৌঁছে দিয়ে নিজের গাড়িতে বাসায় ফিরছিলেন পলিন। স্কুল গেটের সামনে পলিনের গতিরোধ করে দুর্বৃত্তরা তাকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। ২০১৪ সালে সুনামগঞ্জ থেকে অপহরণের সাড়ে তিন মাস পর টঙ্গীতে পাওয়া যায় বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার সহসভাপতি মুজিবুর রহমানকে।

২০১৫ সালের ১০ মার্চ উত্তরার একটি বাসা থেকে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে তুলে নেওয়া হয়। তিনি এখন ভারতে অবস্থান করছেন। রহস্যজনক নিখোঁজের পর উদ্ধার করা ডা. তপুর ভাই সোলায়মান খান বলেন, 'কেন, কী কারণে কারা আমার ভাইকে ধরে নিয়েছে তা জানি না।' এ ব্যাপারে গতকাল ঠিকাদার পলিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'আমাকে কেন, কারা, কী কারণে ধরে নিয়েছিল তা জানি না। তবে ধরে নেওয়ার পর আমার সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করা হয়েছে তা আদালতে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটকে জানিয়েছি। এর বাইরে কিছু বলতে চাই না।' -সমকাল

১৩ এপ্রিল ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে