বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৬, ০৮:৫৯:৪১

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের সর্বশেষ আপডেট

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের সর্বশেষ আপডেট

নিউজ ডেস্ক : আকস্মিক ভয়াবহ ভূমিকম্পে ফাঁকা হয়ে যায় ভবন।  আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে নিচে নেমে আসে মানুষ।  ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিট হবে।  এসময় কেঁপে উঠে রাজধানীসহ পুরো দেশ।  ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১।

সময়টা ঠিক সন্ধ্যা হওয়ায় রাজধানীতে ব্যস্ত ছিল কর্মজীবী সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।  কেউ হয়তো দিনের কাজ শেষে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরছিলেন, আবার কেউ হয়তো একটু আগেই বাসা থেকে কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন।  

কিন্তু হঠাৎ ঝাঁকুনিতে সবকিছুই যেন উলোট-পালট হয়ে যায়।  কাজের ব্যস্ততায় ভূমিকম্পের অনুভূতি একটু দেরিতে টের পেলেও পরক্ষণেই নগরবাসীর মধ্যে ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়।

সুউচ্চ ভবন থেকে সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে নিচে নেমে আসে লোকজন।  চারদিকে শুরু হয় মানুষের হইহুল্লোড়।  যে যেভাবে পারছে আত্মরক্ষায় ছুটছে।  কেউ কেউ হয়তো সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা রেখে ঘরেই বসেছিলেন।  লোকজন নিচে নেমে এসে আল্লাহর নাম জবতে থাকেন।

স‍াভারে বিভিন্ন ভবন থেকে নামতে গিয়ে ৪০ জন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ চারজন, চট্টগ্রামে ৩০ জনসহ শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।  চট্টগ্রামে ৬টি ভবন হেলে পড়েছে বলে জানা গেছে।  আতঙ্কে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন।

জানা গেছে, ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়িতে ঢাবি শিক্ষার্থী, অন্তঃসত্ত্বাসহ চারজন আহত হয়েছেন।  তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

আহতরা হলেন বৃষ্টি আক্তার (১৮), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তারিকুল ইসলাম ওরফে তারেক (২৫), অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ নাসরিন আক্তার (৩৮) ও মো. সাঈদ। এদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, নাসরিন আক্তার ও মো. সাঈদের অবস্থা আশঙ্কাজক।  তাদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।  এছাড়া  প্রতিনিধিদের তথ্য অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো ২৬ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

রাজধানীর মধুবাগ মাদরাসার বেশ কয়েকজন শিশুর হাত ও পায়ে চোট লেগেছে।  পরে গুরুতর আহতদের মগবাজারের ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ভূমিকম্পে আহত ৮ থেকে ১০ জন শিশু জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে।

চট্টগ্রামে ভূমিকম্পে অন্তত ৬টি ভবন হেলে পড়েছে।  প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে নগরের চান্দগাঁও, হালিশহর আবাসিক এলাকা এবং লাভলেইন, সাগরিকা, রহমতগঞ্জ ও আমতল এলাকায় ভবনগুলো হেলে পড়ে।

ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বি-ব্লকের ৮ নম্বর সড়কের ৫৩৮ নম্বর হোল্ডিংয়ের ছয়তলা ভবনটি পশ্চিমে প্রায় এক ফুট হেলে গেছে।  ভবন থেকে লোকজনকে বের করে দেয়া হচ্ছে।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আবু মো. শাহজাহান কবির বলেন, ৫৩৮ নম্বর বাড়িতে ১০টি পরিবার বসবাস করে।  বাড়ির নিচতলা গাড়ি রাখার গ্যারেজ।  ভূমিকম্পে বাড়িটি প্রায় এক ফুট পশ্চিম দিকে কাত হয়ে গেছে।  

এদিকে নগরের রহমতগঞ্জ এলাকায় বিবেকানন্দ নামের একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল হেলে পাশের ভবনে লেগে গেছে।  রহমতগঞ্জের এক বাসিন্দা জানান, স্কুলটি চারতলা ভবনের। প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে ভবনটি পার্শ্ববর্তী আরেকটি ভবনের সঙ্গে লেগে গেছে।

আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক এম এ মালেক জানান, নগরের লাভলেইন এলাকায় তিনতলা, হালিশহর বি-ব্লক আবাসিক এলাকায় পাঁচতলা এবং সাগরিকা শিল্প এলাকায় পাঁচতলাবিশিষ্ট একটি পোশাক তৈরি কারখানার ভবন হেলে পড়েছে।  ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা কাজ করছেন।

এদিকে আমাদের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ায় ভূমিকম্পন অনুভূত হয়েছে।  বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৫৬ মিনিটে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়।  এ সময় বিভিন্ন বাড়িতে ও ভবনে থাকা লোকজন আতঙ্কে রাস্তায় নেমে আসে।

খুলনা প্রতিনিধি জানান, খুলনায় হঠাৎ চেয়ার-টেবিল-ফ্যানসহ পুরো ভবন কেঁপে উঠে।  কিছু বুঝে ওঠার আগেই দু’বার ঝাঁকুনি দেয়।  ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি টের পেয়েই খুলনার অধিকাংশ ভবনের বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে আসেন।  সবার মধ্যে শুরু হয় ব্যাপক আতংক। কিছু সময়ের মধ্যে সড়কের সব যানবাহনও দাঁড়িয়ে পড়ে।

এমনকি খুলনার শান্তিধাম মোড়স্থ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রোগীরাও ভয়ে বের হয়ে আসেন।  তবে ভূমিকম্পে নগর বা জেলার কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি।

রাজধানীর রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি ভূ-কম্পনের সময় নগরীর শেরেবাংলা রোড দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। এমন সময় হঠাৎ মোটরসাইকেল দুলতে থাকে।  এতে প্রথমে তিনি ভয় পেয়ে যান।  পরক্ষণেই ভূমিকম্প বুঝতে পেরে নিরাপদ স্থানে দাঁড়িয়ে পড়েন।  

এছাড়া নগরীর শান্তিধাম, কাকলিবাগ, টুটপাড়া ও ফুল মার্কেট এলাকায় দেখা যায়, ভূমিকম্পের  আতঙ্কে এলাকার বিভিন্ন ভবন থেকে লোকজন রাস্তায় নেমে এসেছে। বিশেষ করে নারী-পুরুষ ও শিশুরা বেশি আতংকিত হয়ে পড়েন।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে মৃদু ভূ-কম্পন অনুভূত হয়েছে।শহররে নবীনবাগরে স্কুলছাত্র জান্নাতুল ফরেদৌস রাতুল বলেন, ‘আমি ঘরের মধ্যে খাটে বসে বই পড়ছিলাম। হঠাৎ করে খাট লাফালাফি শুরু কর।  আমি ভয়ে বাইরে বের হয়ে যাই।’

ভূ-কম্পন নিয়ে কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, ভূমিকম্পে কক্সবাজার শহরের বড় বড় দালানগুলোর বাসিন্দারা আতংকে বের হয়ে আসে। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

শুধু বাংলাদেশেই নয়, একই সময়ে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালেও ভূকম্পন অনুভূত হয়।  এর উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের মাওলাইকে বলে জানা গেছে। ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল ১২৫ কিলোমিটার।

আবহওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ঢাকা আবহওয়া অফিস ভূমিকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে ৪২০ দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমার সীমান্তে এ ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়।  এটি একটি মেজর ক্যাটাগরির ভূমিকম্পন বলে জানান তারা।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থামার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, মিয়ানমারের মাওলাই জেলার ৭৪ কিলিমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এ ভূকম্পনের উৎপত্তিস্থল।  

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ইন্ডিয়া-ইউরোশিয়া প্লেটের ঘর্ষণে এ ভূমিকম্প উৎপন্ন হয়।  

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, মিয়ানমারে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।

স্থানটি বাংলাদেশ-ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত সংলগ্ন।রিখটার স্কেলে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ৬.৯।  এর কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠের ১৩৪ কিলোমিটার গভীরে।

রাত পোহালেই বাঙালির ঘরে ঘরে শুরু হবে নববর্ষ উদযাপন।  পয়লা বৈশাখের ঠিক আগের রাতে এমন ভূমিকম্প স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মধ্যে সাময়িক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।  অনেকেই বলছেন, আল্লাহ তা'য়ালা কখন কি করেন তিনিই ভালো জানেন।  আবার কেউ কেউ বলছেন, এটা একটা আলামত।  তাই সঙ্গতভাবেই নিজেকে প্রশ্ন করে চলাফেরা করা উচিত।
১৩ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে