বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৬, ০১:২৬:৩৪

আওয়ামী লীগে আসছে তারুণ্যের চমক

আওয়ামী লীগে আসছে তারুণ্যের চমক

রফিকুল ইসলাম রনি : আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে থাকছে তারুণ্যের চমক। এতে প্রাধান্য পাবেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি-জিএস। ত্যাগী দক্ষদের পাশাপাশি স্থান পাবেন প্রায় এক ডজন নারী। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সামনে রেখে দলকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। উপজেলা-জেলা, মহানগর, কেন্দ্র সর্বত্রই কাউন্সিলের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমান কমিটি থেকে বাদ পড়বেন অনেক নেতা। আসবে নতুন মুখ। বাদ পড়া ঠেকাতে এবং নতুন অন্তর্ভুক্তির জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে চলছে লবিং-তদবির। এসব নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সব সারির নেতারা। শীর্ষ নেতারা আশা করছেন, সম্মেলনের মাধ্যমে তারুণ্যনির্ভর নতুন নেতৃত্ব পাবে আওয়ামী লীগ। যারা দলকে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সময়ের প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। সূত্রমতে, বিশ্বরাজনীতির প্রতি নজর রেখেই আগামী নেতৃত্বে দক্ষ, যোগ্য, ত্যাগী ও পরিশ্রমী তরুণ নেতৃত্ব দেখতে চান শেখ হাসিনা। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর দলের প্রবীণদের পাশাপাশি সরকার পরিচালনায় মন্ত্রিসভাসহ বিভিন্ন দফতরে তরুণদের জায়গা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দায়িত্বপ্রাপ্ত তরুণ সদস্যরা যোগ্যতা প্রমাণে প্রবীণদের চেয়ে পিছিয়ে নেই।

বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দলেও এর প্রতিফলন চান সভাপতি। জানা গেছে, আগামী ১০ ও ১১ জুলাই রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। দলটির সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সম্মেলন প্রস্তুত করতে ১১টি উপ-কমিটিও ঘোষণা করা হয়। এবারের কাউন্সিলে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। যে কারণে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের দৃষ্টি জাতীয় কাউন্সিলের দিকে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, দলের সাধারণ সম্পাদক পরিবর্তন হচ্ছে কিনা, এটাই সম্মেলনের মূল আকর্ষণ। কারণ সভাপতি পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই যে থাকছেন, এ বিষয়ে দ্বিমত নেই কারও মধ্যে। সম্মেলনের আগে কেউ নির্দিষ্ট কোনো পদের প্রার্থী হিসেবে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন না। এবারও সম্মেলন ঘিরে এমন তত্পরতা দেখা যাচ্ছে না। তবে হাবভাবে, দলীয় কর্মকাণ্ডের তত্পরতায় এবং নিজ অনুসারীদের মধ্যে একান্ত আলোচনায় কেউ কেউ নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন। এর ফলে তৈরি হয়েছে নানা বলয়ও।

দলের তৃণমূল কাউন্সিলররা চাইলে আপনি তৃতীয়বার সাধারণ সম্পাদক হবেন কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে কিছুটা হতচকিত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত সোমবার বলেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিল নেতা তৈরি করে। অপেক্ষা করেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কারা আসছেন, কয়জনের কমিটি হবে, সেটি এখন জানার কোনো সুযোগ নেই। সেটি কাউন্সিলেই জানা যাবে, সেখানেই নেতা নির্বাচিত হবেন।

দলের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, সাধারণ সম্পাদকের বাইরে আরেকটি আগ্রহের জায়গা হচ্ছে জ্যেষ্ঠ যেসব নেতা রয়েছেন, এক সময়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন, তারা পুরনো অবস্থানে ফিরছেন কিনা। কারণ, তাদের অনেকেই এখন সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় তাদের গুরুপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এর বাইরে সম্পাদকমণ্ডলী কারা থাকছেন, বাদ পড়ছেন কে কে এটাও আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গঠনতন্ত্র অনুসারে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাইরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ১৩ জন হবেন। তবে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন মারা যাওয়ায় এবং আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বহিষ্কৃত হওয়ায় দুটি পদ ফাঁকা হয়েছে। ৭৩ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ২৬ জন। আর বাকিগুলো সম্পাদকীয় পদ। এবারের সম্মেলনে যুগ্ম সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলী ও সদস্য পদে বড় রদবদলই হবে বলে মনে করছেন দলের নেতারা। কারণ, এই পদগুলোর অধিকাংশ নেতাই প্রায় ছয় বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন।

এ ছাড়া ময়মনসিংহ (পরবর্তীকালে কুমিল্লা ও ফরিদপুর) বিভাগের কার্যক্রম শুরু হলে সাংগঠনিক সম্পাদকের সংখ্যা সাত থেকে বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সংখ্যা ১০ হতে পারে বলে জানা গেছে। এতে পুরনোদের পাশাপাশি নবীনদের প্রাধান্য থাকবে।

সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে যে তারুণ্যের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে তার প্রমাণ মিলেছে ঢাকা মহানগরের কমিটি ঘোষণায়। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে একটা বার্তা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, যাদের কারণে দল বিতর্কিত হয়েছে কিংবা যারা দায়িত্বশীল পদে থেকেও দলকে যথোপযুক্ত সহযোগিতা করেননি, তাদের দলীয় পদ টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন হবে।

এদিকে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা চান আগামী নেতৃত্বে দক্ষতা এবং যোগ্যতার পাশাপাশি ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হোক। অনেক জেলায় স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তাদের পছন্দনীয় নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেখতে চান। পছন্দীয় নেতার পক্ষে প্রচার চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে পুরনোরা বিদায় নেন, নতুনরা জায়গা পান। এবারও তাই হবে। তবে দলে এবার নারী নেতৃত্ব বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। -বিডি প্রতিদিন

১৪ এপ্রিল ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে