শুক্রবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:৫৯:১৫

কাঁটাতারের দুপাশে লাখো মানুষের ঢল

কাঁটাতারের দুপাশে লাখো মানুষের ঢল

নিউজ ডেস্ক : নববর্ষের আনন্দ ওপার বাংলায় থাকা আত্বীয়স্বজনের সাথে ভাগাভাগি করতে এক দিন আগেই পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ও বোদাপাড়া সীমান্তে অনুষ্ঠিত হলো দুই বাংলার নাগরিকদের মিলনমেলা।

প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে এ মিলনমেলা হয়ে আসছিল। ওপারে ভারতের জলপাইগুড়ির রায়গঞ্জ থানার খালপাড়া, ভিমভিটা, গোমস্তাবাড়ী ও বড়ুয়াপাড়া গ্রাম। বিজিবি-বিএসএফের গ্রিন সিগন্যালের পরই উভয় দেশের লাখো মানুষ ছুটে গিয়ে কাঁটাতারের বেড়ার দুপাশে অবস্থান নেন। শুরু হয়ে যায় দুই বাংলার মিলনমেলা। কিন্তু এবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের কারণে পহেলা বৈশাখে বিএসএফ মিলনমেলার অনুমতি দেবে কি না- এমন আশঙ্কায় এক দিন আগেই বুধবার উভয় দেশের নাগরিকরা জড়ো হন সীমান্তের দুপাশে। সকাল থেকেই বাস, মিনিবাস, অটোরিকশা ও ভ্যানে করে দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন আসতে থাকেন অমরখানা সীমান্তের দিকে।

ঘড়ির কাঁটায় ১০টা বাজার আগেই ওই সীমান্তের আশপাশে জড়ো হন হাজারো মানুষ। কিন্তু বিএসএফ সাক্ষাতের অনুমতি না দেয়ায় তারা প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে সীমান্তের কাছাকাছি গাছ ও বাঁশঝাড়ের নিচে অবস্থান নেন। বেলা সোয়া একটার দিকে বিএসএফ গ্রিন সিগন্যাল দিলে হুড়মুড়িয়ে সবাই দৌড়ে কাঁটাতারের বেড়ার ধারে চলে যান। ওপার থেকেও মানুষজন চলে আসেন বেড়ার ধারে। উৎসবের ঢল নামে কাঁটাতারের বেড়ার দুপাশে। ৭৪৪ নম্বর মেইন পিলারের ১ থেকে ৭ নম্বর সাব-পিলার পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডজুড়ে উভয় দেশের নাগরিকদের মিলনমেলা শুরু হয়। দেখা-সাক্ষাতের সময় প্রিয়জন ও আত্মীয়স্বজনের সামর্থ্য অনুযায়ী উপহার-সামগ্রী তুলে দেন একে অপরকে। বিজিবি-বিএসএফের উপস্থিতিতেই বেড়ার ফাঁক দিয়ে মালামাল ছুড়ে দেয়া-নেয়া হয়। ভারতের নাগরিকরা বেশির ভাগই ছুড়ে দিয়েছেন শাড়ি, লুঙ্গি ও বাচ্চাদের কাপড়। আর বাংলাদেশের নাগরিকরা দিয়েছেন বিভিন্ন ধরনের খাবার। বিকাল ৩টার পরে বিজিবি-বিএসএফ বাঁশি ফুঁকিয়ে বেড়ার কাছ থেকে নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের সরিয়ে দিলে ইতি ঘটে মিলনমেলার।

স্থানীয়রা জানান, পাক-ভারত বিভক্তির আগে বর্তমান পঞ্চগড় জেলা ছিল ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার অধীন। ৪৭-এ পাক-ভারত বিভক্তির পর সীমান্তবর্তী এ দেশের অনেকের আত্মীয়স্বজন ভারতীয় অংশে থেকে যান। ৭০ দশকেও উভয় দেশের লোকজন প্রায় বিনা বাধায় যাতায়াত করতে পারলেও ৮০-এর দশকে তা থেমে যায়। এ ছাড়া ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সীমান্তজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করায় যাতায়াত একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে অর্থের অভাবে পাসপোর্ট-ভিসা করতে অসমর্থ হওয়ায় আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আর সে কারণে নববর্ষের এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে উভয় দেশে বসবাসকারী লোকজন।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় অমরখানা সীমান্ত দিয়ে দেখা গেছে ভারতে অবস্থানরত স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা বাংলাদেশি নাগরিকরা যত্রতত্র দাঁড়িয়ে আবার কেউ বসে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু বিজিবি-বিএসএফ অনুমতি না দেয়ায় তারা বেড়ার পাশে যেতে পারছেন না। এরই মধ্যে উভয় সীমান্তে হাজির হয়েছেন দুই বাংলার লাখো মানুষ। বিজিবির পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি না থাকলেও বিএসএফ অনুমতি না দেয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকে।

অবশেষে বেলা সোয়া একটার দিকে বিএসএফ অনুমতি দিলে বাংলাদেশি নাগরিকরা হুড়মুড়িয়ে বেড়ার দিকে দৌড় দিতে থাকেন। ওপারের নাগরিকরাও হাজির হন বেড়ার কাছে। মুহূর্তেই প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কাঁটাতারের বেড়ার দুপাশ হয়ে যায় লোকে লোকারণ্য।-মানবজমিন
১৫/০৪/১৬/এমটিনিউজ২৪/এএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে