রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৬, ০৪:৫৪:১৮

দুই ভাগ হচ্ছে ঢাকা মহানগর বিএনপি

দুই ভাগ হচ্ছে ঢাকা মহানগর বিএনপি

হাবিবুর রহমান খান : দুই ভাগ হচ্ছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আদলেই মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ নামে থাকবে আলাদা কমিটি। নেতৃত্বের বিকাশ, নেতাকর্মীদের জবাবদিহিতা এবং সংগঠনকে গতিশীল করার লক্ষ্যে বিএনপির বেশির ভাগ নেতাই মহানগরকে দুই ভাগ করার পক্ষে।

দলটির হাইকমান্ডেরও এতে ইতিবাচক সায় রয়েছে। স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটি ঘোষণার পরপরই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মহানগর দুই ভাগ করে নতুন কমিটি গঠনের কাজ শুরু করবেন বলে দলটির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে। তবে দলের ক্ষুদ্র একটি অংশ ঢাকা মহানগরকে দুই ভাগে বিভক্ত করার পক্ষে নেতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে।

এদিকে মহানগর দুই ভাগ হচ্ছে এমন খবরে নতুন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে লবিং তদবির শুরু করেছেন নেতারা। দলের একটি সূত্র জানায়, মহানগর দুই ভাগ হলে হাইপ্রোফাইল নেতাদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হতে পারে। ঢাকা মহানগরীর দুই প্রভাবশালী নেতা মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকার নেতৃত্ব সরকারবিরোধী আন্দোলনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয়।

তাই ভবিষ্যতে সিনিয়রদের ওপর ভরসা না করে তরুণদের হাতে নেতৃত্ব দেয়ার পক্ষে দলের প্রায় সব স্তরের নেতাকর্মী। খোকা ও আব্বাস নেতৃত্ব না থাকলেও মহানগরের রাজনীতি হাতছাড়া করতে চান না তারা। দুই ভাগ করা হলে তাদের অনুসারীদের শীর্ষ পদে বসাতে নানা তৎপরতা শুরু করেছেন।

২০১৪ সালের ১৮ জুলাই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ৫২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আসম হান্নান শাহ বলেন, ঢাকা মহানগরকে দুই ভাগ করা হলে সাংগঠনিকভাবে রাজনীতিতে গতি আসবে। ত্যাগী ও যোগ্যদের দিয়ে কমিটি করা হলে সংগঠনও শক্তিশালী হবে।

বিএনপির নবনির্বাচিত যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা মহানগর বিএনপি দুই ভাগ হচ্ছে এটা নিশ্চিত। তবে নেতৃত্বে কারা আসছেন তা নিয়ে এখনও আলোচনা শুরু হয়নি।

তিনি বলেন, চেয়ারপারসন এ মুহূর্তে দলের স্থায়ী কমিটি ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। এগুলো হওয়ার পর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পূর্ণাঙ্গ করার পাশাপাশি মহানগর নিয়ে কাজ শুরু করবেন তিনি।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকায় আন্দোলনে খোকা-সালামের  কমিটি ব্যর্থ হওয়ায় মহানগর ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন খালেদা জিয়া। বিএনপির স্থায়ী কমিটির মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে হাইভোল্টেজ আহ্বায়ক কমিটি দেয়া হয়। কিন্তু আব্বাস-সোহেলের কমিটিও খোকা-সালামের পথেই হাঁটে। এ পরিস্থিতিতে আব্বাস-সোহেলকে বাদ দিয়ে মহানগরকে গতিশীল করার দাবি উঠেছে।

জানা গেছে, ঢাকাকে দুই ভাগ করা নিয়ে দলের সিনিয়র নেতা এবং জাতীয়তাবাদী ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা অনানুষ্ঠানিকভাবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এক্ষেত্রে বেশির ভাগই বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে ঢাকাকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগ করার পক্ষে মত দেন। খালেদা জিয়াও তাদের পরামর্শকে ইতিবাচকভাবে নেন। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী ও স্থায়ী কমিটি গঠনের পরপরই ঢাকা মহানগর বিএনপির পুনর্গঠনে হাত দেবেন তিনি।

আব্বাস ও খোকার সরাসরি নেতৃত্বের অবসান ঘটলেও তাদের বলয়মুক্ত হচ্ছে না মহানগর। মহানগর নেতাকর্মীরা মনে করে, ঢাকার রাজনীতিতে প্রভাবশালী এ দুই নেতার অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ সংগঠনের জন্য ইতিবাচকই হবে। কারণ এরা দু’জন দীর্ঘদিন মহানগরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রতিটি অলিগলিতে এদের সমর্থক রয়েছে। তাই আব্বাস-খোকার বলয়মুক্তর চিন্তা না করে কিভাবে তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো যায় সে উদ্যোগ নিতে হবে।

নতুন কমিটিতে খোকা ও আব্বাস অনুসারীদের সমন্বয় করতে হবে। কারণ এ দুই প্রভাবশালী নেতার যে কোনো একজনের অনুসারীরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেলে অন্য নেতার সমর্থকরা নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারেন। ফলে সংগঠনের কাজে স্থবিরতা নেমে আসার আশংকা রয়েছে।  তাই শীর্ষ দুই পদে আব্বাস ও খোকার অনুসারীদের সমন্বয় করে নেতৃত্ব দেয়ার পক্ষে নেতাকর্মীরা।

জানা গেছে, ঢাকা উত্তরে সভাপতি হিসেবে সাবেক কমিশনার এমএ কাইয়ুমের নাম বেশ আলোচনায় রয়েছে। আব্বাস ও খোকা দুজনের সঙ্গেই কাইয়ুমের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। উত্তরে সাধারণ সম্পাদক পদে সাবেক কমিশনার আহসান উল্লাহ হাসান, যুবদল উত্তরের সভাপতি মামুন হাসানের নাম আলোচনায় রয়েছে।
দক্ষিণের সভাপতি হতে আগ্রহী আবদুস সালাম। তিনি দীর্ঘদিন ঢাকা মহানগরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সদস্য সচিব ছিলেন।

তবে দলের একটি অংশ বর্তমান সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে দক্ষিণের সভাপতি করার পক্ষে। এক নেতার এক পদ কার্যকর হলেও চেয়ারপারসনের বিশেষ বিবেচনায় তা সম্ভব। ওই অংশটি সোহেলের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নবী উল্লাহ নবীকে চাচ্ছেন। তবে শেষ পর্যন্ত সোহেলকে মহানগরীতে নাও রাখা হতে পারে। খোকা অনুসারীরা সালামকে সভাপতি ও নবী উল্লাহ নবীবে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখতে চান। এরা দু’জনই খোকার সমর্থক। তবে আব্বাস সমর্থকরা চাচ্ছেন সালাম সভাপতি হলেও সাধারণ সম্পাদক পদটি যেন তাদের অনুসারীদের মধ্য থেকে করা হয়।

সেক্ষেত্রে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিবের নাম বেশ আলোচনায় রয়েছে। খোকার অনুসারী আবদুস সালামকে দক্ষিণের সভাপতি করা হলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আব্বাস অনুসারী হাবিবের সম্ভাবনাই বেশি। হাবিব মির্জা আব্বাসের খুবই আস্থাভাজন। তবে দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আব্বাস সমর্থক সাবেক কমিশনার হারুন অর রশিদ হারুনের নামও আলোচনায় রয়েছে।

ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির উপদেষ্টা আবদুস সালাম যুগান্তরকে বলেন, দল যেখানে ভালো মনে করে সেখানেই দায়িত্ব দেবে। তবে মহানগরীতে কাজ করার সুযোগ দিলে দলের জন্য ভালো হবে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে মহানগরীর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছি। মহানগর ছাড়া আমার রাজনীতির কোনো জায়গা নেই। দায়িত্ব দিলে মহানগরের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশার কথা জানান তিনি। -যুগান্তর
১৭ এপ্রিল ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে