সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৬, ০৪:৫৬:৩০

সেই সিজারের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন শফিক রেহমান

সেই সিজারের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন শফিক রেহমান

নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনায় অভিযুক্ত রিজভী আহমেদ সিজারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বিএনপি-ঘনিষ্ঠ বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত শফিক রেহমানের। যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত একবার সিজারের সঙ্গে তার বৈঠকও হয়েছে।

এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ফোনেও শফিক রেহমান সিজারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। গ্রেফতারের পর পাঁচ দিনের রিমান্ডের প্রথম দিন গতকাল রোববার শফিক রেহমানকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সিজার জাসাসের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে। শফিক রেহমানকে যে মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে তার এজাহারে বলা হয়, বিএনপি ও জোটভুক্ত ঊর্ধ্বতন নেতাদের নির্দেশে জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনা করেছিলেন এই সিজার। এ জন্যই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা জয়ের বিষয়ে তথ্য পেতে এফবিআই সদস্যকে ঘুষের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ঘটনা প্রমাণ হওয়ায় গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের আদালত সিজারকে কারাদণ্ড দেন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওই ঘটনায় ঢাকায় দায়ের করা একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) সূত্র ধরে তদন্ত করতে গিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনা করা হয়। তবে মূল পরিকল্পনাটি হয় ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। পরে ওই ঘটনায় পল্টন থানায় মামলা হলে এর তদন্ত করতে গিয়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে গত শনিবার তাকে গ্রেফতার করে পাঁচ দিনের হেফাজতে নেওয়া হয়।

ওই ঘটনায় দায়ের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার হাসান আরাফাত সমকালকে বলেন, সিজারের সঙ্গে শফিক রেহমান যুক্তরাষ্ট্রে একবার বৈঠক করেছেন বলে তথ্য রয়েছে। এ ছাড়া তিনি তার সঙ্গে ফোনে একাধিকবার কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে শফিক রেহমানের কী ধরনের কথা হয়েছে- হেফাজতে রেখে তা জানার চেষ্টা চলছে। হেফাজতের প্রথম দিন তিনি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও দিয়েছেন।

ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সিজারের সঙ্গে শফিক রেহমানের বৈঠকে আর কারা উপস্থিত ছিলেন, তা জানার চেষ্টা চলছে। এর বাইরে আর কোথাও সিজারের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছিল কি-না, সে বিষয়ে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

এদিকে শফিক রেহমানের মতো একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনায় বিভিন্ন সংগঠন নিন্দা ও প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে হত্যা পরিকল্পনার ঘটনায় গ্রেফতার শফিক রেহমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে অনেক সংগঠন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ সমকালকে জানান, সুনির্দিষ্ট মামলায় শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে মামলার অন্য আসামিদের বিষয়ে এবং তাদের পরিকল্পনার বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বেশকিছু তথ্যও দিয়েছেন। তা যাচাই করা হচ্ছে। রিমান্ডের চার দিন বাকি রয়েছে। তাকে এজাহারে থাকা অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে।

ডিবি পুলিশের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, শফিক রেহমান দেশের একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। অবশ্য তাকে কোনো লেখালেখি, মতামত প্রকাশ বা সাংবাদিকতার কোনো ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়নি। সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবু রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে তাকে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা তার সঙ্গে সৌজন্যমূলক আচরণ বজায় রেখেই জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। শারীরিক অবস্থাও ভালো রয়েছে।

শফিক রেহমানকে ২০১৫ সালের ৪ আগস্ট পল্টন থানার যে মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে এর এজাহারে বলা হয়, জাসাসের সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, আমেরিকার নিউইয়র্কে, যুক্তরাজ্যে ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় একত্র হয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ জন্য অর্থায়নও করা হয়।

ডিবির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, সিজারের বাবা মামুন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তা ছাড়া মামলার তদন্তের স্বার্থে ডিবির দুই কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু হচ্ছে।

এদিকে গতকাল দুপুরে শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমান সাংবাদিকদের জানান, তিনি ঢাকার ব্রিটিশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে ঘটনা জানিয়েছেন। তার স্বামী যেহেতু যুক্তরাজ্যের নাগরিক, তাই দূতাবাস তার বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলবে বলে তাকে আশ্বস্ত করেছে। -সমকাল
১৮ এপ্রিল ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে