বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০৪:৩৮

বিবিসির বিশ্লেষণ, শফিক রেহমান বিএনপিতে কেন এতটা প্রভাবশালী?

বিবিসির বিশ্লেষণ, শফিক রেহমান বিএনপিতে কেন এতটা প্রভাবশালী?

নিউজ ডেস্ক : দলের কোনো পদ-পদবীতে তিনি নেই। কিন্তু তবুও তিনি দলে ‘ক্ষমতাবান’ হিসেবে পরিচিত। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনেক সিনিয়র নেতা ভূমিকা রাখতে না পারলেও, তিনি দলকে প্রভাবিত করতে পারেন। অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিতে পর্দার আড়াল থেকে যিনি এ ভূমিকা রাখনে তিনি হচ্ছেন সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া সিনিয়র সাংবাদিক রেহমান।

বিএনপির সাথে শফিক রেহমানের ঘনিষ্ঠতা অনেকটা প্রকাশ্য। বিএনপি’র নীতি নির্ধারণে শফিক রেহমান কেন এতটা গুরুত্বপূর্ণ? দলে তার প্রাথমিক সদস্য পদ নেই। তারপরেও কেন তিনি বিএনপিতে এতো প্রভাবশালী?

বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন শফিক রেহমান খালেদা জিয়ার অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত।

যাদের পরামর্শ বা মতামতকে খালেদা জিয়া সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন করেন তাদের মধ্যে শফিক রেহমান অন্যতম।

শফিক রেহমান নিজেও সে কথা জানালেন। গত মার্চ মাসের শুরুতে বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাৎকারে শফিক রেহমান বলেছিলেন , ‘আমি কৃতজ্ঞ যে তিনি (খালেদা জিয়া) এ রকম উপদেশ মাঝে-মধ্যে নিয়েছেন।’

বিএনপির নীতি নির্ধারণে শফিক রেহমানের মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়।

শফিক রেহমান মনে করেন, তিনি রাজনীতির বাইরে থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রে হয়তো সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) হয়তো সেটা বুঝতে পেরেছিলেন যে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমি হয়তো তাকে সঠিক সময়ে সঠিক উপদেশ দিয়েছি। তিনি যখন জেল থেকে ছাড়া পেলেন তখন আমার বাড়িতে এসেছিলেন।’

বিভিন্ন সময়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্যের বিষয়বস্তু নির্ধারণেও শফিক রেহমানের ভূমিকা থাকে বলে জানা যায়। এছাড়া বিভিন্ন নির্বাচনে তিনি বিএনপির ইশতেহার প্রণয়নেও ভূমিকা রেখেছেন।

বিএনপি থেকে শমসের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগের পর দলটির পক্ষে যে কয়েকজন ব্যক্তি ঢাকার কূটনীতিক পাড়ায় যোগাযোগ রাখেন তাদের মধ্যে শফিক রেহমান অন্যতম।

তার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায় সর্বশেষ অনুষ্ঠিত বিএনপি’র কাউন্সিলে। সে কাউন্সিলে শফিক রেহমান আন্তর্জাতিক কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৮০’র দশকে ‘যায়যায়দিন’ সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদনার মাধ্যমে শফিক রেহমানের ব্যাপক পরিচিতি গড়ে উঠে।

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় তৎকালীন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেন।

কিন্তু তখন বিএনপির সাথে শফিক রেহমানের ঘনিষ্ঠতা ছিল না। ১৯৯২ সালের দিকে তিনি লন্ডন থেকে ফিরে আসার পর ক্রমেই বিএনপির দিকে ঝুঁকে পড়েন।

শফিক রেহমান বলেন, ‘আমরা সবাই একসময় মুসলিম লীগে ছিলাম। পরে সবাই আওয়ামী লীগ হয়েছি। এরপরে কেউ আওয়ামী লীগ আবার কেউ বিএনপি হয়েছে।’

এর কারণ কী? সাংবাদিক পরিচয় থেকে কেন তিনি বিএনপির সাথে ঘনিষ্ঠ হলেন? বিবিসি বাংলার সাথে সাক্ষাৎকারে এসব প্রশ্নের উত্তর তিনি দিয়েছেন।

শফিক রেহমানের বর্ণনায়, ‘আমি ক্রমেই খালেদা জিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়লাম। কাজ শুরু করলাম তার জন্য। কারণ দেখলাম নেত্রী হিসেবে তিনি অনেক সাহসী। আমি খালেদা জিয়ার সাহসের প্রশংসা করি।’

শফিক রেহমান খালেদা জিয়াকে ব্যক্তি হিসেবে ‘গণতান্ত্রিক’ বলে মনে করেন।

কিন্তু দলে যার এতো প্রভাব তিনি কোনো পদ-পদবীতে আসলেন না কেন?

শফিক রেহমান বলেন যে কোনো পদ-পদবীর জন্য নয়, খালেদা জিয়ার জন্য কাজ করা তিনি ‘নাগরিক দায়িত্ব’ মনে করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদকে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনা মামলায় শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন শফিক রেহমান রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তবে সরকার বলছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগরে ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়েছে। সূত্র: বিবিসি
২০ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে