বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৬, ০১:৪২:৩৭

বাংলাদেশের ওপর চাপ তীব্র হয়েছে

বাংলাদেশের ওপর চাপ তীব্র হয়েছে

নিউজ ডেস্ক: সমকামী অধিকার বিষয়ক দুই কর্মীকে হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশের ওপর চাপ তীব্র হয়েছে। বুদ্ধিজীবী, লেখক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ধারাবাহিক গা শিউরে ওঠা হামলার সর্বশেষ শিকার ওই দুই অধিকারকর্মী। এক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে বলা হয়েছে, সোমবার রাতে চাপাতি ও অস্ত্র হাতে কমপক্ষে ৬ জন প্রবেশ করে ঢাকায় জুলহাজ মান্নানের এপার্টমেন্টে। সেখানেই তাকে ও তার বন্ধু মাহবুব তন্ময়কে কুপিয়ে হত্যা করে তারা। জুলহাজ মান্নান ছিলেন এলজিবিটি (নারী সমকামী, পুরুষ সমকামী, উভগামী ও হিজড়া) সম্প্রদায়ের একটি ম্যাগাজিন ‘রূপবান’-এর সম্পাদক। মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো বলছে, সর্বশেষ এই হত্যাকাণ্ড ও শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রফেসরকে হত্যার ঘণ্টা এটাই প্রমাণ করে যে, হামলাকারীরা তাদের টার্গেটের পরিধি বিস্তৃত করেছে। এসব মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সুবিচার ও তাদের বৃহত্তর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানোনো হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক চাম্পা প্যাটেল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসরকে হত্যার একদিন পরেই এলজিবিটি সম্প্রদায়ের একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও তার বন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এতে দেশের ভেতরে যারা শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের সুরক্ষায় ঘাটতি রয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার যেহেতু এসব সহিংস গ্রুপগুলোকে বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হচ্ছে, সেহেতু হামলাকারীরা তাদের টার্গেট বিস্তৃত করেছে। তারা তাদের টার্গেটে পরিণত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর ও এলজিবিটিআই কর্মীদের। মান্নান ও তন্ময়কে হত্যায় নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। নিহত দুজনই সমকামী অধিকার নিয়ে প্রচারণার কারণে ইসলামপন্থিদের তরফ থেকে হুমকি পেয়েছিলেন। জন কেরি ইউএসএইডের স্থানীয় এ সদস্য ও অন্য এক বাংলাদেশি হত্যাকে নৃশংস হত্যা বলে নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি অপরাধীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন টুইটারে। শুধু গত মাসেই বাংলাদেশে উদার ও ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে চারজনকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ২৬ বছর বয়সী একজন অনলাইন এক্টিভিস্ট। গত বছরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে চারজন ব্লগার ও প্রকাশককে। সরকারিভাবে ধর্মনিরপেক্ষ এই দেশে গত এক বছর থেকে হত্যা করা হয়েছে খ্রিস্টান, হিন্দু, সুফি, আহমাদি, শিয়া মুসলিমদের। আদতে দেশটি সুন্নি মুসলিম অধ্যুষিত। এসব হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের কাউকে শাস্তি দেয়া হয় নি। তবে ২০১৩ সালে আহমেদ রাজিব হায়দারকে হত্যার অভিযোগে বাংলাদেশের একটি আদালত দুজন ছাত্রকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দিয়েছেন। আহমেদ রাজিব হায়দার হলেন ধর্মনিরপেক্ষ লেখক হিসেবে প্রথম হামলার শিকার। তাকে হত্যার অভিযোগে আরও ৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সর্বশ্রেষ্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসরকে হত্যাসহ অনেকগুলো হত্যার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস)। ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার ও লেখকদের হত্যার দায় স্বীকার করছে আল কায়েদার বাংলাদেশি শাখাও। তবে এসব দায় স্বীকারের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ সরকার। সরকার বলছে, এসব হত্যার জন্য দায়ী দেশের ভিতরকার ইসলামপন্থি গ্রুপগুলো। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ দুই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করেছেন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও এর ইসলামপন্থি মিত্র জামায়াতে ইসলামীর ওপর। তাদের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ এনে বলেছেন, তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিভিন্নভাবে গুপ্ত হত্যা ও জঘন্য হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে বিএনপি ও জামায়াত। এমন হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে।
সরকারের বক্তব্যের সমালোচনা করেছে বাংলাদেশের মিডিয়া। তারা বলছে, হামলার পিছনে যে বা যারাই থাকুক, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। ঢাকা ট্রিবিউন এক সম্পাদকীয়তে লিখেছে, হামলাকারীদের উদ্দেশ্য আতঙ্ক ও ঘৃণা সৃষ্টি করা। তাদেরকে থামাতে হবে। প্রশমন করার মাধ্যমে এসব হত্যা বন্ধ হবে না। অবশ্যই ঘাতকদের ধরে সব নাগরিকদের সুরক্ষা পূরণ করার দায়িত্ব সরকারের।
ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, জুলহাজ মান্নান দুই বছর আগে ‘রূপবান’ ম্যাগাজিন চালু করেন। এর মধ্য দিয়ে তা হয়ে ওঠে বাংলাদেশে সমকামীদের অধিকার আদায়ের একটি প্লাটফর্ম। কিন্তু এ দেশটিতে সমকামিতা অবৈধ। এ গ্রুপটি ১৪ই এপ্রিলে বাংলা নববর্ষে বার্ষিক রেইনবো র‌্যালি বের করে থাকে। এ বছর তা বাতিল করা হয়, ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপের কারণে। র‌্যালির পরিকল্পনা নিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপিকে মান্নান বলেছিলেন, অনলাইনে তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে ইসলামপন্থিরা।-মানবজমিন

২৭ এপ্রিল,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে