বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৬, ০১:৩২:১৫

একাধিক হত্যার নেপথ্যে কে?

একাধিক হত্যার নেপথ্যে কে?

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশে ভয়াবহ সিরিজ হামলার ঘটনাপ্রবাহ দেশে ও বিদেশে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এ সহিংসতার নেপথ্যে কে বা কারা তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নিতান্ত সামান্য।

কতজন নিহত হয়েছেন?
ধর্মনিরপেক্ষ লেখক, ব্লগার, অধ্যাপক, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য ও দুজন বিদেশি নাগরিকসহ কমপক্ষে ২০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে হওয়া এসব হামলার দায় দেয়া হয়েছে উগ্রপন্থিদের। চলতি এপ্রিল মাসের শেষের দিকে দুই দিনে তিন ব্যক্তির হত্যা মানুষের মধ্যে শঙ্কা বাড়িয়েছে যে সহিসংতা বেড়েই চলেছে। গত অক্টোবরে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যা (একজন ইতালিয়ান ও একজন জাপানি) সহিংসতায় নতুন মাত্রা যোগ করে। নিরাপত্তা নিয়ে আরও প্রশ্ন উঠেছে। এসব হামলার অনেকগুলোতে ভুক্তভোগীকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।
সহিংসতা কি বাড়ছে?
তেমনটাই মনে হচ্ছে। প্রথমে টার্গেট করা হয় ধর্মনিরপেক্ষ ও নাস্তিক ব্লগার ও লেখকদের। কিন্তু এখন জঙ্গিরা তাদের টার্গেটের পরিধি বিস্তৃত করেছে বলে মনে হচ্ছে। ২৩শে এপ্রিল হত্যার শিকার হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাস্তিক ছিলেন না। কিন্তু তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন যা অনেক কট্টরপন্থি গোষ্ঠী ‘অনৈসলামিক’ বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাংলাদেশে উগ্রপন্থা ক্রমবর্ধমান বলে প্রতীয়মান হয়। ধর্মনিরপেক্ষ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে যাদেরকে ধর্মের বিরোধী বলে ধারণা করা হয় তাদের প্রতি অনেকেই কোনো সহানুভূতি দেখায় না। ওই ধারণার কোনো ভিত্তি থাকুক বা না থাকুক। একজন অধ্যাপক হত্যার একদিন পরই ঢাকায় একজন সমকামী অধিকার অ্যাক্টিভিস্ট ও তার বন্ধুকে হত্যার ঘটনা- জঙ্গিরা যে তাদের টার্গেটের তালিকা বিস্তৃত করছে তার প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হামলাগুলো চালাচ্ছে কারা?  
এটা এখনও অস্পষ্ট। বাংলাদেশে অসংখ্য জঙ্গিগোষ্ঠী রয়েছে। ইসলামিক স্টেট বা আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট কথিত গ্রুপগুলো হামলাগুলোর যে দায় স্বীকার করেছে তা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছে সরকার। তারা বরং দায় চাপিয়েছে বিরোধী দলগুলো বা স্থানীয় কট্টরপন্থি গ্রুপগুলোর ওপর। সরকারের অভিযোগ, এসব দল দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চায়। বিরোধীরা অবশ্য এসব দাবি অস্বীকার করেছে। এলজিবিটি ম্যাগাজিন সম্পাদক হত্যাকাণ্ডের পর ২৫শে এপ্রির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিরোধী দলগুলো এসব গুপ্তহত্যায় জড়িত কেননা তারা সরকার ও দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চায়। ইতালিয়ান ত্রাণকর্মী সিজার তাভেলা ও জাপানি কৃষক কুনিও হোশি গেল শরতে একইভাবে খুন হন। ওই হামলাগুলোর দায় আইএস স্বীকার করে বলে বলা হয়। কিন্তু সরকার যখন বলছে, বাংলাদেশে আইএসের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান নেই, তখন অনেক বিশ্লেষকের ভাস্য এর গুরুত্ব সামান্যই কেননা অনেক স্থানীয় উগ্রপন্থি গ্রুপ আছে যারা একই ধ্যানধারণা পোষণ করে। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং বর্তমানে একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক শওকত হোসেইন গত বছর বলেছিলেন, ‘প্রতিটি কট্টরপন্থি গোষ্ঠীর মধ্যেই কোনো না কোনো আন্তঃসংযোগ রয়েছে কেননা তারা একই ধারণা পোষণ করে। কিন্তু বিদেশি হত্যায় আইএসের কোনো যোগসূত্র আছে কি না সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই।’
পুলিশ কি কোনো হামলাকারীকে ধরেছে?      
গত বছর বাংলাদেশে চারজন ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সরকারের ওপর মনোযোগ ফেলেছে। অক্টোবরে হামলাকারীরা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে একজন খ্রিষ্টান যাজককে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করে। পুলিশ হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গিগোষ্ঠী জামা’আতুল মুজাহিদীন এর ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। আর ইসলামের সুফি ঘরানার একজন ধর্মীয় শিক্ষককে (পীর বলেও পরিচিত) ঢাকার তার নিজ বাড়িতে হত্যা করা হয়। কিন্তু ভুক্তভোগীদের তালিকা বেড়ে চললেও তদন্তে সামান্যই অগ্রগতি করেছে পুলিশ। শুধুমাত্র ২০১৩ সালের ব্লগার আহমেদ রাজিব হায়দায় হত্যাকাণ্ড একমাত্র ঘটনা যেখানে কাউকে দণ্ড দেয়া হয়েছে। অন্য হত্যাকাণ্ডগুলোর জন্য কাউকে শাস্তি দেয়া হয় নি। বরং অনেক ঘটনায় পুলিশ অপরাধীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয় নি। উদাহরণস্বরূপ, লেখক অভিজিত রায়কে কুপিয়ে হত্যার এক বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। কিন্তু কাউকে দণ্ড দেয়া হয় নি। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্যের কারণে পুলিশ এসব তদন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না। এসব মন্তব্যের মধ্যে রয়েছে নাস্তিক ব্লগারদের সমালোচনা। গত সপ্তাহে তিনি ধর্মের সমালোচনাকারী ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য করে কড়া হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের লেখায় আমি কোনো মুক্ত চিন্তা দেখি না, আমি দেখি নোংরামি। এসব কথা কেন লিখবে? কেউ যদি আমাদের নবীর বিরুদ্ধে বা অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু লেখে সেটা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
বিরোধীরা বলছে, তাদের ও ব্লগারদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, বিশ্বাসযোগ্য একটি তদন্তে বাধা দিচ্ছে।-মানবজমিন

২৮ এপ্রিল,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে