নিউজ ডেস্ক : চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর নির্ধারণ করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ। এক বিবৃতিতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় কুমার দাস জানান, আগামী ১৪ মে সকাল ১০ টায় ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র/ছাত্রীসহ সচেতন ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানান তিনি। এছাড়া সমাবেশ সফল করার জন্য শুক্রবার ঢাকায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রতিনিধি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষা বিষয়ক কিছু প্রচলিত উক্তি আছে যেমন, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড; যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত; শিক্ষার কোনো বয়স নেই ইত্যাদি। এই স্লোগানগুলো জনপ্রিয় হলেও বাস্তব জীবনে এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
এতে বলা হয়, আমরা শিক্ষিত হচ্ছি, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠগুলো থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অজর্ন করছি কিন্তু জাতির মেরুদণ্ড শক্ত বা মজবুত করতে পারছি না। কারণ অর্জিত বিদ্যা দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজে লাগানোর মত পর্যাপ্ত সুযোগ আমরা পাচ্ছি না।
বিবৃতিতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় মাস্টার্স ডিগ্রিধারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৭ শতাংশ বেকার বাংলাদেশে এবং সর্বনিম্ন ৭ শতাংশ শ্রীলংকায়। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত বেকার নিয়ে জাতি কিভাবে উন্নত হবে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
শিক্ষার কোনো বয়স নেই বলা হচ্ছে অথচ একজন শিক্ষার্থীর বয়স ত্রিশ বছর পার হলেই তাকে আর সরকারি/বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়সের সীমাবদ্ধতা বাংলাদেশ ব্যতিত পৃথিবীর আর কোনো দেশে আছে কিনা আমাদের জানা নেই।
বিবৃতিতে বলা হয়, ৫৭ বছরের কর্মজীবী পৌড়কে যেখানে অবসরের বয়স বাড়িয়ে কাজ করার আরো সুযোগ তৈরি করে দেয়া হচ্ছে সেখানে একজন যৌবনদীপ্ত তরুণকে ৩০ বছরেই পৌড়ত্বের শিকল পড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। আমাদের শোষণ করার জন্য চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়সের সীমাবদ্ধতা প্রচলন করেছিল যে বৃটিশ সরকার, তাদের নিজেদের দেশেই তারা চাকরিতে প্রবেশে বয়সের কোনো সীমাবদ্ধতা রাখেনি।
অন্যান্য দেশের উদাহরণ টেনে বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন উদাহরণ রয়েছে যেমন- ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন প্রদেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৮ থেকে ৪০ বছর, শ্রীলংকায় ৪৫, ইন্দোনেশিয়ায় ৩৫, ইতালীতে ৩৫ বছর কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩৮, ফ্রান্সে ৪০, ফিলিপাইন, তুরস্ক ও সুইডেনে যথাক্রমে সর্বনিম্ন ১৮, ১৮ ও ১৬ এবং সর্বোচ্চ অবসরের আগেরদিন পর্যন্ত, দক্ষিণ আফ্রিকায় চাকরি প্রার্থীদের বয়স বাংলাদেশের সরকারি চাকরির মত সীমাবদ্ধ নেই।
সেখানে চাকরি প্রার্থীদের বয়স ২১ হলে এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে যে কোনো বয়সে আবেদন করতে পারে। রাশিয়া, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়ার মত দেশে যোগ্যতা থাকলে অবসরের আগেরদিনও যে কেউ সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল গভর্নমেন্ট ও স্টেট গভর্নমেন্ট উভয় ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়স কমপক্ষে ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৫৯ বছর। কানাডার ফেডারেল পাবলিক সার্ভিসের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে তবে ৬৫ বছরের উর্দ্ধে নয় এবং সিভিল সার্ভিসে সর্বনিম্ন ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৬০ বছর পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে আবেদন করা যায়।
বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৩১ জানুয়ারি, ২০১২ তারিখে নবম জাতীয় সংসদের তৎকালীন মাননীয় স্পিকার বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করার জন্য ৭১ বিধিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাননীয়মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরবর্তীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১২ তারিখে ২১তম বৈঠকে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছরে উন্নীত করার সুপারিশ করেন।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, নবম জাতীয় সংসদের বহু সংসদ সদস্য এ ব্যাপারে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসকগণও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। ১০ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রীসহ বহু এমপি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর বিষয়ে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন এবং প্রায় প্রতিটি অধিবেশনেই এ ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। জন-গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় একটি বিষয় সংসদে এতবার উঠার পরও কেন তা বাস্তবায়িত হচ্ছেনা তা বড় বিস্ময়কর।
২৮ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস