শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৬, ০৩:৩২:৩০

সংসদের স্টিকার সাঁটানো গাড়িটি খুঁজছে গোয়েন্দারা

সংসদের স্টিকার সাঁটানো গাড়িটি খুঁজছে গোয়েন্দারা

নিউজ ডেস্ক: সংসদ সদস্য স্টিকার লাগানো একটি বিলাসবহুল রেঞ্জ রোভার গাড়ি খুঁজছে শুল্ক গোয়েন্দারা। গাড়িটির গ্যারেজ নম্বর ঢাকা মেট্টো শ ০০-০১৫১।

বৃহস্পতিবার শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গাড়িটি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কার্নেট সুবিধার অপব্যবহার করে দেশে আনা হয়েছে। এবং দীর্ঘদিন সংসদের স্টিকার সাঁটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি অবৈধ এসব গাড়ির বিরুদ্ধে শুল্ক গোয়েন্দারা অভিযানে নামলে গাড়িটি লুকিয়ে ফেলা হয়।

শুল্ক গোয়েন্দাদের তথ্যানুযায়ী, ২০০৮-২০১৩ সালের মধ্যে এসব গাড়ি দেশে আনা হয়। নিয়ম অনুযায়ী গাড়িগুলো ২০১৪ সালে ফেরত যাওয়ার কথা থাকলেও ভুয়া নম্বর প্লেট এবং ভিআইপিদের স্টিকার সাঁটিয়ে গাড়িগুলো রাস্তায় চলতে দেখা যায়। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর ২০১৪ সালের শেষের দিকে অবৈধ দেড়শ’ গাড়ির তালিকা তৈরি করে মাঠে নামে গোয়েন্দারা। 

তথ্যমতে, চলতি মাসেই জব্দ করা হয় ৬টি বিলাসবহুল গাড়ি। এগুলোর মধ্যে বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ, পোর্শেসহ রয়েছে নামিদামি আরো কয়েকটি ব্র্যান্ডের গাড়ি।

গত ২৪ এপ্রিল রোববার গুলশান আজাদ মসজিদের কাছে ২৪ রোডের ১১ নম্বর বাড়ি থেকে পোর্শে ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি (নম্বর- ঢাকা মেট্টো ঘ, ১১-৮৩০২) জব্দ করে গোয়েন্দারা। এমপি কোটা সুবিধা নিয়ে এই গাড়িটি আনা হয়েছিল। ২০০৬ সালে ১৬ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন সাংসদ কোটায় গাড়িটি আমদানি করেন। আনার তিন মাসের মধ্যেই ৪৫০০ সিসির গাড়িটি ৫ কোটি শুল্ক পরিশোধ না করে ২১ জানুয়ারি প্রেস্টিজ মটরস নামে এক প্রতিষ্ঠানের মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২০০১ সালে আব্দুল মতিন বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন।

২০ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে সিলেট শুল্ক গোয়েন্দা অফিসের সামনে চিঠি লিখে একটি লেক্সাস জিপ গাড়ি রেখে যাওয়া হয়। বিলাসবহুল গাড়িটি ২০০৭  সালে তৈরি।  চেসিস নম্বর জেটিজেএইচকে ৩১ইউ৬০২০১৫৭৮২। ইঞ্জিন নম্বর ২জিপিএ০৫৬৯৬৪। পাঁচ সিটের সিলভার রঙের গাড়িটির আনুমানিক মূল্য দেড় কোটি টাকা। 

১২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে বনানীর এফ ব্লকের ৩ নম্বর রোডের ১১২ নং বাড়ী থেকে বিএমডব্লিউ’র এক্স-ফাইভ সিরিজের এই গাড়িটি জব্দ করা হয়। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কার্নেট সুবিধার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে গাড়িটি আমদানি করা হয়। এর রেজিস্ট্রেশন নম্বরও ভুয়া। গাড়ির মালিক জাহিদ হোসেন বৈশাখী টেলিভিশন ভবনের মালিক ও ঠিকাদারী ব্যবসা করেন। তিনি ৩ বছর আছে সিলেটের সাগর আহমেদের কাছ থেকে গাড়িটি কেনার দাবি করেন।

১০ এপ্রিল রোববার ভোররাতে সিলেট থেকে ৫ কোটি টাকা মূল্যের একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। টানা ৩৬ ঘণ্টা অভিযান চালানোর পর গাড়িটি জব্দ করা হয়। মার্সিডিস বেঞ্জের ১৯৮০ সিসির সিডিআই অ্যালিগ্যান্স-২০০৬ মডেলের গাড়িটি ২০১২ সালে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ক্রয় করেন লন্ডন প্রবাসী আব্দুল মালেক। কেনার পর থেকে গাড়িটি ভুয়া (ঢাকা-৬১৪/ও) রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্লেট লাগিয়ে চালানো হত। গাড়িটি রাখা হতো আব্দুল মালেকের মালিকানাধীন সিলেটের এয়ারপোর্ট রোডের ই/১০ বিএম টাওয়ারে। তথ্যমতে শুল্ক গোয়েন্দারা শুক্রবার সকালে বিএম টাওয়ারে অভিযান চালায়। কিন্তু এর আগেই আব্দুল মালেক গাড়িটি অন্যত্র সড়িয়ে ফেলেন। পরে টাকা ৩৬ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে সিলেট থেকেই গাড়িটি জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দারা।

৭ এপ্রিল বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে প্যাসিফিক গ্রুপের চেয়ারম্যান শফিউল আজিম মহসিনের বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিলাসবহুল জিপ জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

৫ এপ্রিল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে শুল্ক ফাঁকি এবং ভুয়া রেজিস্ট্রেশন করা একটি বিএমডাব্লিউ এক্স-৫ জিপ জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। গাড়িটির মালিক কাজী রেজাউল মোস্তফা। তিনি গুলশান ২ এর ১০৪ নম্বর রোডের ৫জি নম্বর বাড়িতে থাকেন। গাড়িটি ওই বাড়ি থেকেই জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দারা।

এছাড়াও, গত বছর গুলশান এলাকা থেকে একটি বিএমউব্লিউ এবং ধানমন্ডি থেকে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ জব্দ করা হয়েছিল।

২৯ এপ্রিল ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে