নিউজ ডেস্ক: ধর্মীয় সম্প্রীতির সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের অধিকারী বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। এক মঞ্চ থেকে এ কথা উচ্চকণ্ঠে জানিয়েছেন হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতারা। সেই সঙ্গে ইসলামী চিন্তাবিদরা জানালেন, কাউকে 'নাস্তিক' আখ্যা দিয়ে মানুষ হত্যা ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না। যারা ইসলামের নামে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে কিংবা হত্যাকাণ্ডের সমর্থনে ফতোয়া দিচ্ছে, তারা খোদ ইসলাম এবং মুসলিম উম্মার শত্রু। তাদের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
একই মঞ্চে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আবারও দৃঢ়কণ্ঠে বলেছেন, বাংলাদেশে 'আইএস' নেই। যারা আছে তারা এ দেশীয় জঙ্গি। তাদের বিরুদ্ধে সরকার সবসময়ই কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে জঙ্গিবাদ দমনে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পুলিশ। এতে ইসলামী চিন্তাবিদ, ওলামা, মাশায়েখ, হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরোহিত, খ্রিস্টান যাজক, বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরুরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শোলাকিয়া ঈদ জামাতের ইমাম ও ইসলামী চিন্তাবিদ মওলানা ফরিদউদ্দিন মাসাউদ, ইসলামী চিন্তাবিদ সৈয়দ ইব্রাহিম খলিল, ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ মহারাজ, বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সংঘনায়ক ধর্মাধিপতি শুদ্ধাননন্দ মহাথেরো, ঢাকার আর্চবিশপ ফাদার প্যাট্রিক ডি রোজারিও এবং আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ, ইসকনের বাংলাদেশের সভাপতি সত্য রঞ্জন বাড়ৈ। অনুষ্ঠানে সব ধর্মের ধর্মীয় নেতা এবং তাদের অনুসারীদের উপস্থিতি এদেশের দীর্ঘ অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের অখণ্ড চিত্রই প্রতিফলিত করে।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আইএসের নামে দায় স্বীকার করা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেন, 'আরে বাবা, কোথায় আইএস? এখানে অনেক আলেম, ওলামারা আছেন, তাদের কেউই তো বলছেন না যে, তারা আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এদেশের মসজিদ-মাদ্রাসা কোথাও এর অস্তিত্বের কথা শোনা যায়নি।'
তিনি বলেন, এদেশের মানুষ কখনই খুন ও নৈরাজ্য সমর্থন করে না। দু-একটি হত্যা ঘটিয়ে আইএসের মতবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা কখনও সফল হবে না। তিনি জানান, এই ধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মেলন বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়েও করা হবে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক শহীদুল হক বলেন, ধর্মের নামে কটূক্তি কিংবা হত্যাকাণ্ড কোনোটাই সহ্য করা হবে না। কেউ কটূক্তি করলে তা যেমন শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে, তেমনি হত্যাকারীদের বিরুদ্ধেও আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইএস আছে দাবি করে বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য কোনো কোনো পক্ষ মায়াকান্না দেখাচ্ছে । কিন্তু তারা জঙ্গি দমনের নামে সিরিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তানে কী করেছে তার উদাহরণ বিশ্বের সামনে আছে।
মওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসাউদ বলেন, নাস্তিক আখ্যা দিয়ে হত্যাকাণ্ড ইসলাম কখনও সমর্থন করে না। ইসলাম এসেছে শান্তির বাণী নিয়ে। মানুষের হৃদয়ে প্রেম ও শাশ্বত মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে। যারা এই আদর্শের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ইসলামের নামে মানুষ হত্যার ফতোয়া দেয়, তারা প্রকৃতপক্ষে ইসলামের শত্রু। তাদের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এই সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এক লাখ আলেম-ওলামার সই নিয়ে একটি জাতীয় ঘোষণা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ইসলামে হত্যাকারীদের কোনো স্থান নেই। মহানবীর (সা.) বাণীতে আস্থা রাখলে মত ও পথ নির্বিশেষে আগে মানুষকে ভালোবাসতে হবে।
সৈয়দ ইব্রাহিম খলিল বলেন, ইসলাম কখনই ভিন্নমতের কাউকে হত্যা করতে বলেনি। ইসলাম উদার ও পরমতসহিষ্ণুতার ধর্ম।
স্বামী ধ্রুবেশানন্দ মহারাজ বলেন, মানবের মাঝে শান্তি প্রতিষ্ঠাই সব ধর্মের মূল মর্ম। সব ধর্মের শাশ্বত বাণী হচ্ছে মানব কল্যাণ।
বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সংঘনায়ক ধর্মাধিপতি শুদ্ধনানন্দ মহাথেরো বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ সব ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। সেটি বাংলাদেশের প্রকৃত চেতনা।
ঢাকার আর্চবিশপ ফাদার প্যাট্রিক ডি রোজারিও বলেন, মানবতার বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠাই সব ধর্মের মূল ভিত্তি। ধর্ম প্রচারকরা মানবতার মর্মবাণীই বার বার উচ্চারণ ও প্রচার করেছেন। এই সত্যটি সবাইকে মনে রাখতে হবে। মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হতে না পারলে ধর্মের পথে নির্বাণ লাভ কখনও সম্ভব নয়।-সমকাল
২৯ এপ্রিল ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/সবুজ/এসএ