শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১১:৫৯:০২

চলে গেলেন ঢাকার শেষ সরদার

চলে গেলেন ঢাকার শেষ সরদার

আপেল মাহমুদ : অতীতে ঢাকার বাইশ পঞ্চায়েত সরদাররাই সমাজব্যবস্থা পরিচালনা করতেন। যাঁরা সরদার নির্বাচিত হতেন তাঁদের পাগড়ি পরিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করা হতো। তেমনি একজন সরদার ছিলেন মগবাজারের আক্তার সরদার। তাঁকে বলা হতো ঢাকার জীবিত শেষ সরদার। গত ২৬ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টায় তিনি মারা যান। আজ তাঁর কুলখানি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ঢাকার জীবন্ত সরদারদের শেষ সূর্য অস্তমিত হলো।

তাঁর আরেকটি পরিচয় ছিল, তিনি ছিলেন মগবাজারের আদি মগ সম্প্রদায়ের বংশধর। দ্বিতীয় ইসলাম খাঁ (১৬৩৫-৩৯ খ্রিস্টাব্দ) যখন ঢাকার সুবেদার তখন চট্টগ্রামে নিযুক্ত মগ রাজার গভর্নর ও রাজার ভ্রাতুষ্পুত্র মুকুট রায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে পরিবার-পরিজনসহ ঢাকায় এসে আশ্রয় নেন। এ আশ্রয়প্রাপ্ত মগ রাজার বংশধরদের সুবেদারের নির্দেশে ঢাকা শহরের উত্তরাঞ্চলের গহিন জঙ্গলে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। তাদের আশ্রয়ের এলাকাটিই পরবর্তীকালে মগবাজার নামে নামকরণ হয়েছিল। তাঁরা যে বাড়িতে বাস করছেন সে বাড়ি ‘মগবাজার সরদার বাড়ি’ নামে খ্যাত। ওসমান গনি সরদার নবাব সলিমুল্লাহর কাছ থেকে পাগড়ি পরে সরদারি দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর দুই ছেলে আক্তার সরদার ও শাহাবুদ্দিন সরদার একই দায়িত্ব পালন করেন।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানবিরোধী সব আন্দোলনে ঢাকার হাতে গোনা যে কজন সরদার নেতৃত্ব দেন এর মধ্যে আক্তার সরদার ছিলেন অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তিনি সবার শ্রদ্ধা অর্জন করেন। একাত্তরে মগবাজারের সরদার বাড়িটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন আশ্রয়কেন্দ্র। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার পর যখন কেউ প্রকাশ্যে এর প্রতিবাদ করার সাহস পাননি, তখন তিনি শুধু এর প্রতিবাদই করেননি নিজের বাড়িকে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার জন্য ছেড়ে দেন। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে কেউ ১৫ আগস্ট পালনের সাহস না করলেও আক্তার সরদার মগবাজার মোড়ে গরু জবাই করে মাইকে শেখ মুজিবের ভাষণ বাজিয়ে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছেন।

আক্তার সরদারের ভাতিজি এবং সাবেক সংসদ সদস্য আসমা জেরিন ঝুমু বলেন, ‘শুধু সরদার হিসেবেই তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন ছিল না, তিনি এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন এবং সাতষট্টির ছয় দফা আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য প্রথম মশাল মিছিল মগবাজার মোড় থেকে বের হয় আক্তার সরদারের নেতৃত্বে। এতে কয়েকজন নিহত হওয়া ছাড়াও তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনে তাঁর মা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।’ -কালের কন্ঠ
২৯ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে