শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৬, ০৩:১১:৪৯

ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের ‘মৃত্যুগাঁথা’ এখনই লেখা...

ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের ‘মৃত্যুগাঁথা’ এখনই লেখা...

নিউজ ডেস্ক : ব্লগার, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্টদের উপর অব্যাহতভাবে হামলার ঘটনায় একদিকে দুর্বল প্রতিক্রিয়া দেখানো হচ্ছে, অন্যদিকে ধর্মীয় রক্ষণশীলদের প্রতি আরও বেশি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পড়ছে সরকার। এতে 'ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের' ভবিষ্যত নিয়ে শংকা তৈরি হয়েছে।

ব্রিটেনের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন 'দ্য ইকোনমিস্ট'র এক প্রতিবেদনে এই শংকার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

গত ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানের বাসায় মার্কিন দূতাবাসের সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনার পর ইকোনমিস্ট 'ভায়োলেন্সেস ইন বাংলাদেশ: ক্যাম্পেইন অব টেরর এগেইন্সট বাংলাদেশ'স লিবারেল ভয়েসেস' শীর্ষক বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতার ভবিষ্যত নিয়ে ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির আলী রিয়াজের বক্তব্য তুলে ধরা হয়।

তিনি বলেন, 'একটি ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের মৃত্যুগাঁথা এখনই লেখাটা হয়তো বেশি আগেভাগেই হয়ে যাবে। তবে, একই কথা ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে বলা যায় না।'

জুলহাজ হত্যার ব্যাপারে ইকোনমিস্ট উল্লেখ করে, হত্যাকারীরা এসেছিল কুরিয়ার কোম্পানির কর্মী হিসেবে। সন্দেহ উদ্রেককারী পাঁচ-ছয় জনের একটি দল। ২৫ এপ্রিল ঢাকার একটি ফ্ল্যাটে তাদের বহন করা পার্সেলের প্যাকেট ছিল চাপাতিতে ভরা। বাসায় প্রবেশ করেই তারা সমকামী অধিকার কর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধুকে হত্যা করে।
 
এ হত্যাকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় জোটকে দায়ী করেন। তবে কয়েক ঘণ্টা পর আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় একটি সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করে।
 
প্রতিবেদনে জুলহাজের পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়, সমকামী ও হিজড়া পাঠকদের জন্য বাংলাদেশের প্রথম ম্যাগাজিন ‘রূপবানের’ সম্পাদক ছিলেন তিনি। তিনি ইউএসএআইডিতেও কর্মরত ছিলেন। এ মাসের শুরুতে জুলহাজ সমকামী ও হিজড়া তরুণদের নিয়ে 'রঙধনু র‌্যালি' আয়োজনের চেষ্টা করার পর থেকেই মৃত্যুর হুমকি পেয়ে আসছিলেন।
 
চলতি মাসে জুলহাজের মতো চারজন উদারপন্থি নিহত হন জানিয়ে ২৩ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিমকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার কথা উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়, অধ্যাপকের হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতায় সন্দেহভাজন হিসেবে মৌলবাদী দলের এক সদস্যকে আটক করা হয়। আইএসের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে, এমন দাবি করা একটি দল এ হামলার দায়ও স্বীকার করে।
 
গত বছর একই ধরনের হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন বুদ্ধিজীবী, ব্লগার বা ধর্মীয় সংখ্যালঘু। এসব অপরাধের কোনোটির জন্যই কাউকে দণ্ডিত করা হয়নি বলে জানায় ইকোনমিস্ট। আলী রিয়াজ বলেন, রাষ্ট্রের দুর্বল প্রতিক্রিয়ার কারণেই হত্যাকাণ্ডগুলো গতি পাচ্ছে।
 
ব্রাসেলস-ভিত্তিক এনজিও ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ বাংলাদেশের ‘ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত প্রভাবিত ও অকার্যকর’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। প্রতিবেদনটিতে 'আপত্তিকর মতামত প্রকাশকারীরা কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হলে তার দায় সরকার গ্রহণ করবে না'- প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্য উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, 'কট্টরপন্থি' দল হেফাজতে ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের সমালোচনা করত। তবে সম্প্রতি বিভিন্ন ধর্মীয় ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান তারা সমর্থন করছেন।
 
২০১৪ সালের নির্বাচনে পর্যাপ্ত জনসমর্থন না পাওয়ায় শেখ হাসিনা ধর্মীয় রক্ষণশীলদের প্রতি আরও বেশি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পড়ছেন বলেও মন্তব্য করে ইকোনমিস্ট গত মার্চে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট দুই মিনিটে খারিজ হওয়ার কথা উল্লেখ করেছে।

তবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি আংশিকভাবে ধর্মীয় দলের সঙ্গে উল্টোপথে ধাবিত হচ্ছে বলে জানায় সাময়িকীটি। তাদের মতে, বিএনপি ভারত ও পশ্চিমা বিশ্বে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরির চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে। প্রধান ইসলামী মিত্রদল জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে নিজেদের দূরত্ব তৈরি করেছে তারা। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের কারণ দলটির নেতাদের ফাঁসির বিরুদ্ধে এখন আর প্রতিবাদ জানায় না বিএনপি। দলটির ক্ষমতা কাঠামোতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী গয়েশ্বর রায়ও উঠে এসেছেন ওপরের দিকে, যা মাত্র এক বছর আগেও ছিল অকল্পনীয়। - যুগান্তর
৩০ এপ্রিল ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে