রবিবার, ০১ মে, ২০১৬, ০৯:০৩:১০

আজ মহান মে দিবস, সেদিন কি ঘটেছিল শিকাগোতে?

আজ মহান মে দিবস, সেদিন কি ঘটেছিল  শিকাগোতে?

নিউজ ডেস্ক : আজ মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। মে দিবস উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস-আদালত, কলকারখানায় আজ ছুটি থাকবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।

বঞ্চিত খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষদের অধিকার আদায়ের ইতিহাস ১৩০ বছর পেরুল। হাজার বছরের বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের এদিন বুকের রক্ত ঝরিয়েছিলেন শ্রমিকেরা।

শ্রম ঘণ্টা কমিয়ে আনার দাবিতে এদিন শ্রমিকরা যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। সে ডাকে শিকাগো শহরের তিন লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ বন্ধ রাখেন।

শ্রমিক সমাবেশকে ঘিরে শিকাগো শহরের হে মার্কেট রূপ নেয় লাখো শ্রমিকের বিক্ষোভ সমুদ্রে। এক লাখ ৮৫ হাজার নির্মাণ শ্রমিকের সঙ্গে আরো অসংখ্য বিক্ষুব্ধ শ্রমিক লাল ঝান্ডা হাতে সমবেত হন সেখানে। বিক্ষোভ চলাকালে এক পর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে ১০ শ্রমিক প্রাণ হারান।

এদিকে হে মার্কেটের ওই শ্রমিক অসন্তোষের আগুন জ্বলে উঠে গোটা দুনিয়ায়। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। অবশেষে তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

পরে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করতে শুরু করে।

রক্ত দিয়ে কেনা শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার এদিনটিকে বাংলাদেশও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। ব্রিটিশ আমল তথা ১৯৩৮ সালে নারায়ণগঞ্জে প্রথম মে দিবস পালিত হয়। তারপর পাকিস্তান আমলেও মে দিবস যথাযথ উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে পালিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শাসন থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে বিপুল উদ্দীপনা নিয়ে মে দিবস পালিত হয়। ওই বছর সদ্য স্বাধীন দেশে ১ মে সরকারি ছুটি ঘোষিত হয়।

মে দিবস উপলক্ষে আজ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিবসটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৭টায় দৈনিক বাংলা মোড়ে অবস্থিত শ্রম ভবনের সামনে থেকে একটি বর্ণাট্য র‌্যালি বের হবে। এটি শেষ হবে প্রেসক্লাবে এসে। এতে নেতৃত্ব দেবেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। মে দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে এরই মধ্যে শ্রম ভবন, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কদ্বীপ ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মে দিবসের তাত্পর্য তুলে ধরে সভা, সেমিনার, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

মে দিবস উপলক্ষে আজ বিকাল ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির উদ্যোগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে বক্তব্য দেবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টির উদ্যোগে বিকাল ৩টায় কাকরাইলে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বক্তব্য দেবেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ ও কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের উদ্যোগে সকাল ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বেলা ১১টায় সায়েদাবাদ টার্মিনাল শ্রমিক কমিটির উদ্যোগে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা।

এ ছাড়া মে দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে একাধিক সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় শ্রমিক লীগ, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল, জাতীয় শ্রমিক জোট, শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ—স্কপ, কর্মজীবী নারী, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, জাসদ, গণফোরাম, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন, শ্রমিক ঐক্য, জেএসডি, বাসদ, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন, গণসংস্কৃতি ফ্রন্ট, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন—টাফ, বাংলাদেশ বস্ত্র পোশাকশিল্প শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস মজদুর ইউনিয়ন, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, জাতীয় শ্রমিক পার্টি, সিটিজেন এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ আওয়ামী মোটরচালক লীগ এবং পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করবে। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে।
০১ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে