অধ্যাপক ড. আমেনা মহসীন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসীন বলেছেন, আমলা কেন্দ্রিক পে-স্কেল করে শিক্ষকদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। একটি বিশেষ শ্রেণি সরকারকে চালাচ্ছে। যে জাতি শিক্ষককে সম্মান দিতে জানে না সে জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের তাণ্ডব চলছে। পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানা যায়, সরকার দলীয় নেতা ও এমপিরা দখল, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও হচ্ছে না। সোমবার প্রতিবেদককে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল নেই। যেটিকে বিরোধী দল বলা হচ্ছে সেটিও সরকারের একটি অংশ। যেখানে বিরোধী মত নেই, নির্যাতিতদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই সেখানে প্রকৃত গণতন্ত্র থাকতে পারে না। এখানে বিরোধী দলগুলোরও ঘাটতি রয়েছে। কারণ তারা জনগণের ইস্যুগুলো নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে পারছে না। ঢাবির এই শিক্ষক বলেন, বর্তমানে টকশো, সংবাদ ইত্যাদির ওপর সরকার নজরদারি করছে।
আমরা ভাষা আন্দোলন করেছি শুধু বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য নয়, বলার স্বাধীনতার জন্যও। কিন্তু সেই বলার স্বাধীনতাই আজ বাধাগ্রস্ত। গণতন্ত্রের জন্য এটি খুবই বিপজ্জনক। সরকার চাইলেই আরও সহনশীল হতে পারে। এ কাজগুলো সরকারের অদূরদর্শিতার প্রমাণ। জনগণ সব কিছু জানে এবং বুঝে। আগে বিএনপি সরকারের ভুলের জন্যই কিন্তু জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছিল।
আমেনা মহসীন বলেন, আপাতদৃষ্টিতে দেশে এক ধরনের স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এই স্থিতিশীলতা বিতর্কিত এবং এর ভিত্তিও অনেক দুর্বল। আধিপত্যের মাধ্যমে এই স্থিতিশীলতা এসেছে, যা গণতান্ত্রিক দেশে কখনো কাম্য হতে পারে না।
তিনি বলেন, সরকার উন্নয়নের কথা বলছে। কিন্তু সুশাসন ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা মানবীয় উন্নয়ন চাই। যেখানে সবারই কথা বলার অধিকার থাকবে। আলোচনা-সমালোচনা থাকবে। সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা আসবে এটাই স্বাভাবিক। সমালোচনা মানেই নেতিবাচক না।
বিরুদ্ধ মতকে বিবেচনা করেই সামনের দিকে এগোতে হবে। কিন্তু আমরা দেখি বাজেটের আগে আলোচনা হলেও সরকার এসব আমলে নেয় না। বিভিন্ন বিষয়ে জনগণের স্বার্থকে উপেক্ষা করা হয়। বিশ্ববাজারে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম কমলেও আমাদের দেশে এগুলোর দাম বেড়েছে। এখনো রানা প্লাজার শ্রমিকরা তাদের ক্ষতিপূরণ পায়নি। সরকার যে উন্নয়ন প্যারাডাইমের কথা বলছে তা প্রশ্নবিদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, বহির্বিশ্বে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। আমেরিকা জিএসপি ফিরিয়ে দিচ্ছে না। নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি, শিশু নির্যাতনের ঘটনা ইত্যাদি কারণেও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।-বিডিপ্রতিদিন
৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে