বৃহস্পতিবার, ০৫ মে, ২০১৬, ০২:০৭:৫৪

লন্ডনে বিএনপি নেতা, দেশে আওয়ামীলীগের ইউপি চেয়ারম্যান

লন্ডনে বিএনপি নেতা, দেশে আওয়ামীলীগের ইউপি চেয়ারম্যান

শফিউল আলম দোলন: নাম তার হিরণ মিয়া। সিলেট সদরের লামাকাজি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আবার লন্ডনে বিএনপি নেতা। যুক্তরাজ্য বিএনপির ক্রয়ডন শাখার আহ্বায়ক কমিটির যুগ্মআহ্বায়ক। দেশে আওয়ামী লীগের সমর্থনে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার পরও লন্ডনে গিয়ে বিএনপি নেতা হিসেবে আছেন তিনি।

 হিরণ মিয়ার মতো আরও অনেক লোককেই আর্থিক সুবিধা নিয়ে যুক্তরাজ্যে বিএনপির বিভিন্ন শাখা কমিটিতে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাধারণ সম্পাদক এম কয়সর আহমেদের বিরুদ্ধে। এ ধরনের অভিযোগে এখন তোলপাড় চলছে যুক্তরাজ্য বিএনপি। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য বিএনপির নির্বাহী কমিটির বৈঠকে সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অনাস্থাজ্ঞাপন করেন কমিটির নেতারা। এতে সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট নেতারা।

এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিমউদ্দিন সেলিম বলেন, ঘটনা সত্য। একজন নেতার বক্তব্যে আরেকজন নেতার বিরুদ্ধে তহবিল তছরুপের অভিযোগ উঠলে দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে একটু বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু পরে সিনিয়র নেতাদের  হস্তক্ষেপে তা সমাধান হয়। তবে একটি দলের ফোরাম মিটিংয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই পারে।

জানা গেছে, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমানে নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট খলিলুর রহমান তার বক্তৃতায় কতিপয় নেতার বিরুদ্ধে তহবিল তছরুপের অভিযোগ উত্থাপন করলে তার জের ধরেই বৈঠকে গণ্ডগোল শুরু হয়। বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপনের পর এ নিয়ে মারামারি ও হট্টগোলের বাধলে ব্রিটিশ পুলিশ এবং সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে বৈঠকটি শেষ হয়।

এ সম্পর্কে অ্যাডভোকেট খলিলুর রহমান এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমার বক্তৃতার জের ধরেই বৈঠকে গণ্ডগোলটি শুরু হয়। কারণ এতে কিছু নেতার বিরুদ্ধে সংগঠনের তহবিল তছরুপের অভিযোগ ছিল। পরে সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে আসে এবং স্বাভাবিকভাবেই বৈঠকটি শেষ হয়। জানা যায়, ২৬ এপ্রিল পূর্ব-লন্ডনের ‘ওয়াটারলিলি’ হলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের বেশির ভাগেরই অভিযোগ ছিল যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম কয়সর আহমেদের বিরুদ্ধে। সংগঠনের বিপুল অঙ্কের তহবিল তছরুপসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন তারা। মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির শাখা কমিটিতে লোকজন নিয়োগের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।

ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৈঠকের গোলযোগের ছবিসহ ভিডিও প্রচার করা হয়। এ ছাড়া বৈঠকে উপস্থিত নেতারা দলে একক আধিপত্য বিস্তারসহ নানা ধরনের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও তোলেন সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানকে বলয়াবদ্ধ করে সমস্ত কার্যক্রমে একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য বিএনপির সব নেতাকর্মীকে তারেক রহমানের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখারও অভিযোগ করেন অনেকে।

এ ছাড়া দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অজান্তে তার নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজিসহ ঢাকা থেকে লন্ডনে যাওয়া নেতাদের তারেক রহমানের সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে দেখা করিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেসসচিব মুশফিকুল ফজল আনসারি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি পারভেজ মল্লিককে ব্যবহার করে এক সময় তারেক রহমানের সঙ্গে পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা লাভ করেন কয়সর আহমেদ। এর আগে বিএনপির রাজনীতিতে তার কোনো ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ ছিল না।

বৈঠকে উপস্থিত যুক্তরাজ্য বিএনপির একাধিক নেতা অভিযোগ করেন, সাধারণ সম্পাদক সম্প্রতি সাংগঠনিক ক্ষেত্রে রীতিমতো একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছেন লন্ডনে। সেখানে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানকে প্রকারান্তরে জিম্মি করে ফেলেছেন তিনি। তারেক রহমানের চারপাশে এমনভাবে একটি বলয় তৈরি করেছেন, যা ভেদ করে আর কোনো নেতাকর্মীর সেখানে প্রবেশ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেসব অভিযোগ নিয়েই গণ্ডগোলের সূত্রপাত। পরে হাতাহাতি ও মারামারি।-বিডি প্রতিদিন

৫মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে