বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:৩৮:৩১

বাস-ট্রেন-লঞ্চে বাড়িমুখী মানুষের চাপ

বাস-ট্রেন-লঞ্চে বাড়িমুখী মানুষের চাপ

ঢাকা : রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গতকাল বুধবার ছিল ঈদে বাড়িমুখী মানুষের ঢল। পবিত্র ঈদুল আজহার আগে গতকাল শেষ কর্মদিবস হওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। ট্রেন ও লঞ্চে ছিল মানুষের ভিড়। বেশির ভাগ ট্রেন প্রায় সময়মতো ছেড়ে যাওয়ায় ভিড়ে কষ্ট হলেও বিলম্বের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয়নি যাত্রীদের।

কমলাপুর রেলস্টেশনে সকাল থেকেই ছিল বাড়িমুখী মানুষের ভিড়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর চাপও বাড়তে থাকে। কোনো কোনো ট্রেনে উঠতে মানুষকে হিমশিম খেতে হয়েছে। কেউ দরজা দিয়ে, কেউ জানালা দিয়ে ট্রেনের কামরায় উঠেছেন। ট্রেনের ছাদেও উঠেছেন অনেকে। বিমানবন্দর স্টেশনেও ছিল একই চিত্র। এ স্টেশনে ট্রেনে উঠতে যাত্রীদের কষ্ট হয়েছে বেশি। কারণ, কমলাপুর থেকেই ট্রেনগুলো এসেছে যাত্রীবোঝাই হয়ে।

দুপুরের পর যাত্রীদের চাপ অনেক বেড়ে যায়। ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা কামরায় ওঠার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জসহ অপেক্ষকৃত কম দূরত্বের ট্রেনের ছাদেও অনেক যাত্রী দেখা গেছে। তবে বেশির ভাগ ট্রেন নির্ধারিত সময়ের অল্প পরে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের বিলম্বের ভোগান্তি পোহাতে হয়নি।

রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস গতকাল তিন ঘণ্টা দেরি করায় এর যাত্রীদের এ সময় স্টেশনে অপেক্ষা করতে হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী যান কর্মকর্তা মজিবুর রহমান বলেন, বুধবার সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। তবে রাজশাহীগামী ধূমকেতু ছাড়া অন্য কোনো ট্রেন ১৫-২০ মিনিটের বেশি দেরি করেনি। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে বিশেষ কয়েক জোড়া ট্রেন ঢাকা ছেড়েছে। তিনি বলেন, যাত্রীদের সেবা দিতে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

সদরঘাটে মানুষের ঢল: সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলগামী মানুষ পরিবার-পরিজন ও মালামাল নিয়ে সকাল থেকেই টার্মিনালে চলে এসেছেন। দুপুর ১২টার পর থেকে যাত্রীদের ভিড়ে টার্মিনালের পন্টুনগুলোতে তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। অনেক যাত্রী টার্মিনাল এলাকায়ই চাদর ও পাটি বিছিয়ে বসে লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করেন। কারণ, লঞ্চ ছাড়বে সন্ধ্যায়, তখনো ঘাটে আসেনি।

ঘাটে যেসব লঞ্চ ছিল সেগুলোতে অনেক যাত্রী উঠেছেন। বরিশালগামী পারাবত-১১ লঞ্চের যাত্রী ইমরান হোসেন বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় লঞ্চ ছাড়বে। কিন্তু যানজটে পড়লে লঞ্চে জায়গা পাওয়া যাবে না, এ আশঙ্কায় মিরপুর থেকে বেলা তিনটায় টার্মিনালে চলে এসেছেন। যানজটের কারণে গুলিস্তান থেকে টার্মিনালে আসতে ঘণ্টা খানেক সময় লেগেছে। এরপর তো জট আরও বাড়বে। এত আগে এসেও ডেকে ভালো জায়গা পাননি।

পটুয়াখালীগামী কাজল ৭ লঞ্চের যাত্রী ইশতিয়াক আহমেদ এসেছেন মুগদা থেকে। তিনি বললেন, ‘টার্মিনাল এলাকায় হকারদের উৎপাতে নাজেহাল অবস্থায় আছি। অন্তত ঈদের সময়ে টার্মিনাল থেকে হকার উচ্ছেদ করা দরকার ছিল।’ কেউ কেউ অভিযোগ করলেন বেশি ভাড়া নেওয়ার। যেমন হুলারহাটগামী একটি লঞ্চের যাত্রী বিলকিস বেগম বলেন, ডেকের ভাড়া লঞ্চের কর্মচারীরা ২৮০ টাকা দাবি করছেন। কিন্তু গত সপ্তাহে তিনি ২২০ টাকা ভাড়া দিয়ে এসেছেন।

অবশ্য অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থার উপদেষ্টা ও টিপু লঞ্চের মালিক গোলাম কিবরিয়া বলেন, দুই দিন পর ঈদ। অথচ এখনো লঞ্চে কাঙ্ক্ষিত যাত্রী দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ লঞ্চে নির্ধারিত যাত্রীবোঝাই করার আগেই লঞ্চ ছেড়ে দিতে বাধ্য করছে।

নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত সুপার মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, নৌ-পুলিশের শতাধিক সদস্য সদরঘাটে দায়িত্ব পালন করছেন। গতকাল যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় ছিল। সেই ভিড় সামলানোর পাশাপাশি লঞ্চগুলো যেন অতিরিক্ত যাত্রী না তুলতে পারে, লঞ্চগুলোর বের হতে যেন সমস্যা না হয় এবং কেউ যেন ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে লঞ্চে ওঠার চেষ্টা না করেন, সেগুলো নিশ্চিত করা হচ্ছে।

নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বিভিন্ন গন্তব্যে ৫৭টি লঞ্চ নির্ধারিত সময়ের আগেই ছেড়ে গেছে। দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য নিয়মিত লঞ্চগুলো ছাড়া আরও ২৫টি বিশেষ লঞ্চের ব্যবস্থা রয়েছে। -প্রথম আলো
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে