শনিবার, ০৭ মে, ২০১৬, ১২:২৬:২৬

আটকা পড়ে গেছে বিএনপির কমিটি পুনর্গঠন

আটকা পড়ে গেছে বিএনপির কমিটি পুনর্গঠন

কাফি কামাল: অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার কারণে আটকে গেছে বিএনপির কমিটি পুনর্গঠন কার্যক্রম। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কাউন্সিলররা সর্বসম্মতভাবে কমিটি পুনর্গঠনের দায়িত্ব ও ক্ষমতা দিয়েছিলেন। কাউন্সিলের পর সাধারণত স্থায়ী কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু বিএনপিতে এবার মাঝারি সারির পদ ঘোষণার মাধ্যমেই শুরু হয় পুনর্গঠন। তিন ধাপে ঘোষণা করা হয়েছে- মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৪২ নেতার নাম। কিন্তু এসব পদে নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি ও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের ঘটনায় দলের কয়েকজন নেতা ও চেয়ারপারসন কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠেছে শীর্ষ নেতৃত্বকে পক্ষপাতদুষ্ট তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা ও পদ বাণিজ্যের অভিযোগ।

এর মধ্যে একজন নেতার বিরুদ্ধে দিলকুশার একটি আবাসিক হোটেলে কক্ষ ভাড়া নিয়ে কমিটি বাণিজ্যে এবং চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কমিটি গঠনে প্রভাব খাটানোর গুঞ্জন এখন নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। এ নিয়ে নিজ নিজ বলয়ে উচ্চকিত দলের সিনিয়র ও মাঝারি সারির নেতাদের একাংশ। শীর্ষস্থানীয় পদের আগে মাঝারি পদ দিয়ে পুনর্গঠন শুরু হওয়ায় ক্ষুব্ধ সিনিয়র নেতারা। এছাড়া মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দায়িত্ব দেয়ার পর তার বদলে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের কমিটি ঘোষণা নিয়েও ওঠেছে প্রশ্ন। দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতার ভূমিকা নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। যা বিএনপিতে তৈরি করেছে অস্থিরতা। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে পড়েছে যে ১৮ই এপ্রিল সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের নাম ঘোষণার পর আটকে গেছে পুনর্গঠন। পরের দুই সপ্তাহে আর কোন পদে নেতাদের নাম ঘোষণা করতে পারেনি দলটি।

দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বিএনপির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা যে কোন সময় ঝড় বইয়ে দিতে পারে দলটির ওপর। এমন পরিস্থিতিতে পুনর্গঠন কার্যক্রম অঘোষিতভাবেই স্থগিত রেখেছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এখন থেকে শীর্ষ দুই নেতা একমত হওয়ার আগ পর্যন্ত স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাসহ সম্পাদকমণ্ডলীর কোন পদে কোন নেতার নাম ঘোষণা করা হবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সবচেয়ে বিলম্বিত হতে পারে স্থায়ী কমিটি ও ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ঘোষণায়। কারণ শীর্ষস্থানীয় পদের পুনর্গঠন আগে হলে সিনিয়র নেতারা সম্পাদকীয় পদে পুনর্গঠনের সময় প্রভাব বিস্তার করেন।


এদিকে নির্বাচনের মাধ্যমে দলের স্থায়ী কমিটি ও ভাইস চেয়ারপারসন পদে পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে বিএনপিতে। দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, কয়েকজন সিনিয়র নেতা এ ব্যাপারে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও তৈরি করেছেন। শিগগির প্রস্তাবটি চেয়ারপারসনের কাছে উত্থাপন করার কথা রয়েছে। তবে প্রস্তাবটির বাস্তবায়ন নির্ভর করছে শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদনের ওপর। এদিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য দীর্ঘদিন ধরে বয়সজনিত নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। এর মধ্যে অন্তত তিনজনের পরিস্থিতি নাজুক। তারা স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও অংশ নিতে পারেন না। যার কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন দলের গুরুত্বপূর্ণ নীতি-নির্ধারণে তাদের খুব একটা সহযোগিতা পান না। এ নিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে দলীয় মহলে নানা নেতিবাচক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলকে ঘিরে আলোচনা ছিল- বাস্তবতা বিবেচনায় স্থায়ী কমিটি থেকে বাদ পড়তে পারেন কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা। কিন্তু নানা কারণে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। অন্যদিকে, দলের একাধিক নেতা স্থায়ী কমিটিতে পদোন্নতি চান। এ জন্য তারা চেয়ারপারসন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানসহ দলের নানা মহল ও বিএনপির শুভাকাঙক্ষী মহলে নানা লবিং-তদবির চালাচ্ছেন। কাউন্সিলের আগে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে স্থায়ী কমিটিতে পদের সংখ্যা বাড়ানোর একটি প্রস্তাবও এসেছিল। বাছাই কমিটিতে সে প্রস্তাব বাদ পড়লেও পরিস্থিতি বিবেচনায় ভাইস চেয়ারম্যান পদের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩৫-এ উন্নিত করা হয়েছে। পদের সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পদোন্নতি প্রত্যাশীদের প্রতিযোগিতা। বিএনপি কয়েকটি সূত্র জানায়, পদ প্রত্যাশীদের প্রতিযোগিতা ও বাস্তবতার নিরিখে কার্যকর নেতৃত্ব গঠনে নির্বাচনের একটি প্রস্তাব আলোচনায় আনেন কিছু সিনিয়র নেতা। সংশ্লিষ্ট একজন নেতা জানান, কাউন্সিলররা ভোট দিয়ে তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করে নেবেন।

শীর্ষ নেতৃত্ব একমত হলেই সেটা সম্ভব। সেক্ষেত্রে প্রথমে স্থায়ী কমিটি ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে পদোন্নতি প্রত্যাশীদের দুটি আলাদা তালিকা প্রণয়ন করে দেবেন চেয়ারপারসন। সারা দেশের কাউন্সিলরদের জন্য তিনদিন সময় দেয়া হবে। চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক সিসি টিভির পর্যবেক্ষণে দুটি বক্স থাকবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে এসে কাউন্সিলররা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে যাবেন। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী দুই বা তিনজন সিনিয়র নেতা পুরো বিষয়টির দেখভাল করবেন। প্রয়োজনে তাদের পদ-পদবীর বিষয়টি চেয়ারপারসন আগেই নির্ধারণ করে দেবেন। সূত্র জানায়, এটা স্থায়ী কমিটির সব পদেও করা যেতে পারে আবার শূন্য পদেও করা যেতে পারে। সূত্র আরও জানায়, নির্বাচনের মাধ্যমে এ দুইটি পদের নেতৃত্ব নির্বাচিত হলে দেশের রাজনীতি যা হবে একটি মাইলফলক। সারা দেশের নেতাকর্মীদের কাছে তাদের ভাবমূর্তি ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। তাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা বাস্তবায়নে নেতাকর্মীদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন।

এছাড়া দেশের মানুষসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বে বিএনপি নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। ওদিকে কাউন্সিলে চেয়ারপারসনের ওপর কমিটি গঠনের দায়িত্ব ক্ষমতা দেয়ায় স্থায়ী কমিটি ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে গেলে গঠনতান্ত্রিকভাবে কোন জটিলতা দেবে কিনা এমন প্রশ্নও এসেছে নেতাদের আলোচনায়। তবে দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা জানান, চেয়ারপারসনের একটি বার্তা দেয়ার মাধ্যমে এই দুইপদে নির্বাচনের ভার কাউন্সিলরদের ওপর ছেড়ে দিতে পারেন। যা বরং চেয়ারপারসনের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনকে আরও উজ্জ্বলতা দেবে।-মানবজমিন

৭ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে