শনিবার, ০৭ মে, ২০১৬, ০৩:১৪:০১

নয়াপল্টন বিএনপির কার্যালয় নেতাদের ঠাণ্ডা লড়াই

নয়াপল্টন বিএনপির কার্যালয় নেতাদের ঠাণ্ডা লড়াই

হাবিবুর রহমান খান: ‘দফতর যার নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় তার’- এমন ধারণাই পোষণ করেন বিএনপির সব স্তরের নেতাকর্মী। আর এ ধারণা থেকেই কেন্দ্রীয় কার্যালয় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে মরিয়া দলটির শীর্ষ নেতারা। দীর্ঘদিন ধরে দফতরের দায়িত্বে থাকা দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে সরিয়ে তার বিরোধীরা এর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

তবে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হওয়ার পরও দফতর নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান রিজভী আহমেদ। এ নিয়ে নেতাদের মধ্যে চলছে ঠাণ্ডা লড়াই। দফতর ও সহদফতর সম্পাদক পদে নিজেদের আস্থাভাজন লোক বসাতে লবিং-তদবিরে ব্যস্ত তারা। তবে সৎ, যোগ্য এবং দলের প্রতি নিবেদিত কোনো নেতার হাতেই দফতরের দায়িত্ব দেবেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।


বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে আরও জানা গেছে, ‘এক নেতার এক পদ’ গঠনতন্ত্রে কার্যকর হওয়ায় এবার দফতর সম্পাদক পদে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা বেশি। দফতরে নতুন মুখ এলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দলের মধ্যে নয়া মেরুকরণ হতে পারে। তবে অতীতের কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে দলের চেয়ারপারসন তার বিশেষ ক্ষমতাবলে শেষ মুহূর্তে রিজভীকে দফতরের দায়িত্বেও রাখবেন বলে প্রত্যাশা তার সমর্থকদের।


এ ছাড়া দফতরের পাশাপাশি নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদ নিয়েও চলছে জোর লবিং। ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মীর নজরও এখন ওই পদের দিকে। কে আসছেন ওই পদে তা নিয়ে সর্বত্র চলছে আলোচনা। অতীতের রীতি অনুযায়ী ছাত্রদল নিয়ন্ত্রণ ছাত্রবিষয়ক সম্পাদকের হাতেই থাকে। বিএনপির সিনিয়র নেতারাও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদককেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন।


২০০৯ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পঞ্চম কাউন্সিলের আগ থেকেই দফতরের মূল দায়িত্ব পালন করে আসছেন রুহুল কবির রিজভী। ওই কাউন্সিলের পর গঠিত কমিটিতে রিজভীকে দফতরের দায়িত্বে নিয়োজিত রেখেই যুগ্ম মহাসচিব করা হয়। সেই থেকে দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা সামলাচ্ছেন তিনি। বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে দলের অবস্থান মিডিয়াতে তুলে ধরার জন্য বিএনপির ভেতরে ও বাইরেও তার সুনাম রয়েছে।

ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর রুহুল কবির রিজভীকে এর পুরস্কারস্বরূপ সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর পর অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে দফতরের দায়িত্ব দেয়া ঠিক হবে কিনা তা নিয়ে তার প্রতিপক্ষরা একটি ইস্যু তৈরির চেষ্টা করছেন।
তবে রিজভী আহমেদ এ বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। তার ঘনিষ্ঠ কয়েক নেতা জানান, দফতরের দায়িত্ব নেয়ার ব্যাপারে তার (রিজভীর) আগ্রহ রয়েছে। সহজেই তিনি দফতর হাতছাড়া করতে চান না। কিন্তু দলীয় গঠনতন্ত্রে ‘এক নেতার এক পদ’-এর বিধান থাকায় দফতরের দায়িত্বে থাকা তার জন্য কঠিন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে একমাত্র দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিশেষ ক্ষমতাবলে রিজভী আহমেদকে দফতরের দায়িত্ব দিতে পারেন।


যদি শেষ মুহূর্তে অন্য কাউকে দফতর সম্পাদক করা হয়, সে ক্ষেত্রে ওই পদটিতে নিজের পছন্দের লোককে বসাতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন রিজভী আহমেদ ও তার প্রতিপক্ষরা। রিজভীবিরোধীরা চাচ্ছেন, দফতর সম্পাদক পদে নতুন কাউকে নিয়োগ দিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রিজভীর প্রভাব খর্ব করতে।


বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, চেয়ারপারসনের নির্দেশে তিনি দফতরের দায়িত্ব পালন করছেন। অন্য কাউকে দায়িত্ব দিলে তিনি তা ছেড়ে দেবেন।
জানা গেছে, দফতর সম্পাদক হিসেবে তিনজনের নাম আলোচনায় রয়েছে। তারা হলেন : গত নির্বাহী কমিটির সহদফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন ও সহতথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শাকিল ওয়াহেদ সুমন।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনজন সহদফতর সম্পাদক থাকার কথা থাকলেও এখন আছে চারজন। চেয়ারপারসন মনে করলে নতুন কমিটিতে এ সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকতে পারে অথবা বাড়তেও পারে। গত নির্বাহী কমিটিতে সহদফতর সম্পাদক হিসেবে ছিলেন আসাদুল করিম শাহীন, শামীমুর রহমান শামীম ও তাইফুল ইসলাম টিপু। জানা গেছে, নতুন নির্বাহী কমিটিতে সহদফতর সম্পাদকদের একজন কি দু’জন বাদে বাকিদের অন্য পদে পদোন্নতি দেয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এ পদে দেখা যেতে পারে ৩-৪টি নতুন মুখ।

নতুন মুখ হিসেবে সহদফতর সম্পাদক হতে যারা লবিং চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে আছেন : স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহসভাপতি মুনির হোসেন, রিয়াজউদ্দিন আহমেদ নসু, বেলাল আহমেদসহ আরও কয়েকজন নেতা।
জানতে চাইলে এবিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, তাকে বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক করার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা করা হয়নি। তবে দল যেখানে দায়িত্ব দেবে তা যথাযথ পালনের চেষ্টা করবেন।
এদিকে বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে ছাত্র ও সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদক হতে সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেকেই দৌড়ঝাঁপ করছেন। রীতি অনুযায়ী সাবেক ছাত্রনেতাদেরই এই দুটি পদে জায়গা করে দেয়া হয়। তবে অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে এবার এ দুটি পদের নেতৃত্ব অনেকটা ভেবেচিন্তে দেয়া হতে পারে।


ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদের জন্য আলোচনায় প্রথমেই আছেন সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল। তিনি নিজেও এ পদের প্রত্যাশী। জানতে চাইলে হেলাল বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক। আমরা প্রত্যাশা করছি, তিনি তার সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে যোগ্য ব্যক্তির হাতেই ছাত্রবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব তুলে দেবেন।’


গত নির্বাহী কমিটির সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক হতে চান। তবে তার প্রথম পছন্দ যুবদলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদ। টুকুকে ওই দুই পদের একটি দেয়া হলে তিনি ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদ চাইবেন না।

এ পদের জন্য আরও আলোচনায় আছেন ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ। যদি শেষ পর্যন্ত হেলালকে সম্পাদক করা হয় তবে আবেদকে সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদক করা হতে পারে বলে দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। অবশ্য সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদক হওয়ার জন্য সাবেক ছাত্রনেতা আমিরুজ্জামান খান শিমুল, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, ওবায়দুল হক নাসির, আবদুল মতিন, রাজীব আহসান জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।


জানতে চাইলে বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ বলেন, ছাত্র ও সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদ দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি পদে এমন কাউকে নিয়োগ দিতে হবে যারা ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্ব উঠে সংগঠনের জন্য কাজ করবেন। ছাত্রদলের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন।-যুগান্তর

৭ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে