সোমবার, ০৯ মে, ২০১৬, ০২:১৭:৩১

দ্বিধাদ্বন্দ্বে পদপ্রত্যাশীরা, শীর্ষপদের জন্য জোর লবিং

দ্বিধাদ্বন্দ্বে পদপ্রত্যাশীরা, শীর্ষপদের জন্য জোর লবিং

হাবিবুর রহমান খান: বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি না দলটির অঙ্গসংগঠন- কোথায় জায়গা নিশ্চিত হবে তা নিয়ে দলটির পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গঠনের বিষয়টি ঝুলে যাওয়ায় নেতাদের মধ্যে এ অনিশ্চয়তা দিন দিন আরও বাড়ছে। যে কারণে তারা কে কোথায় থাকতে চান- তা নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে লবিং-তদবিরও করতে পারছেন না। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।


সূত্র জানায়, ‘এক নেতার এক পদ’ দলের গঠনতন্ত্রে কার্যকর হওয়ায় পদপ্রত্যাশী নেতারা আরও বেশি চাপের মধ্যে আছেন। অঙ্গসংগঠনের জন্য লবিং করার পর কোনো কারণে সেখানে জায়গা না হলে নির্বাহী কমিটিতে পদ পাওয়া কঠিন হতে পারে- এমন ভাবনা পেয়ে বসেছে তাদের। তাই অনেকে কৌশলে অঙ্গসংগঠনের পাশাপাশি নির্বাহী কমিটির জন্যও লবিং চালাচ্ছেন।


জানা গেছে, পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে যারা অঙ্গসংগঠনে থাকতে চান তারা চাচ্ছেন আগে অঙ্গসংগঠনগুলোর কমিটি গঠন করা হোক। যাতে করে অঙ্গসংগঠন থেকে বাদ পড়লে নির্বাহী কমিটিতে জায়গা পাওয়া যায়। এদের মতে, আগে অঙ্গসংগঠনগুলোর কমিটি গঠন করা হলে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ সংঘাত-সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।


সংশ্লিষ্টদের মতে, অঙ্গসংগঠনের আগে নির্বাহী কমিটি করা হলে পদবিন্যাসেও জটিলতা দেখা দিতে পারে। নির্বাহী কমিটিতে পদ দেয়া অনেককেও আবার অঙ্গসংগঠনে জায়গা দেয়া হতে পারে। এক নেতার এক পদ হওয়ার কারণে তাদের নির্বাহী কমিটির পদ ছেড়ে দিতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই পদে নতুন কাউকে কো-অপ্ট করা নিয়ে সৃষ্টি হতে পারে জটিলতা। এসব বিষয় সামনে রেখে দলের বড় একটি অংশ নির্বাহী কমিটির আগে অঙ্গসংগঠনগুলো পুনর্গঠনের পক্ষে।

সূত্র জানায়, বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতারও এতে সায় রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আজ রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। অঙ্গসংগঠনগুলো আগে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হলে দ্রুতই যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষক দলের নতুন কমিটি করা হবে। এসব কমিটিতে পদ পেতে ইতিমধ্যে নেতারা নানা মাধ্যমে লবিং-তদবির শুরু করেছেন।

 

ঢাকার নেতাদের ছাড়িয়ে কেউ কেউ লন্ডনেও যোগাযোগ করছেন। অনেকের সমর্থকরা তাদের বড় ভাইকে অঙ্গসংগঠনের শীর্ষপদ দিতে সিনিয়র নেতাদের কাছে দাবি জানাচ্ছেন। অনেকে তাদের সমর্থকদের নিয়ে নয়াপল্টন থেকে গুলশান কার্যালয়ে নিয়মিত মহড়া দিচ্ছেন।


জানা গেছে, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলসহ বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন রয়েছে। ছাত্রদল ও শ্রমিক দল ছাড়া সবগুলোই মেয়াদোত্তীর্ণ। মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে এসব কমিটি পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে আসলেও সেই দাবি বাস্তবায়িত হয়নি এখনও। ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার পর তিন দফায় মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ ১৮ এপ্রিল সাংগঠনিক সম্পাদকের নাম ঘোষণার পর থমকে আছে স্থায়ী ও পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি ঘোষণা।

এ নিয়ে দলের মধ্যেই নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। দলের বড় একটি অংশ চাচ্ছে নির্বাহী কমিটি গঠনে যখন দেরি হয়েছে, এই ফাঁকে অঙ্গসংগঠনের কমিটিগুলো করা হোক। বিশেষ করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল ও কৃষক দলের নতুন কমিটি গঠন নিয়ে জোর আলোচনা চলছে দলটির অভ্যন্তরে।
সূত্র জানায়, যুবদলের বর্তমান সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আর কমিটিতে থাকছেন না। সভাপতি হিসেবে এর আগে খায়রুল কবির খোকন আলোচনায় থাকলেও তাকে নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব করা হয়েছে। এ অবস্থায় সভাপতি হতে জোর লবিং চালাচ্ছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব। এছাড়া সভাপতি হিসেবে আলোচনায় আছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।

যুবদলের সভাপতি করা হবে এজন্য এ্যানীকে যুগ্ম মহাসচিব করা হয়নি বলে দলের মধ্যে আলোচনা আছে। এ্যানীর জুনিয়র  হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব করা হয়েছে। নীরবকে শেষ মুহূর্তে সভাপতি করা না হলে তাকে নির্বাহী কমিটির যুববিষয়ক সম্পাদক করা হতে পারে। তবে নীরবের ঘনিষ্ঠ কয়েক নেতা জানান, নীরব যুবদল করতেই আগ্রহী। প্রয়োজনে তাকে বর্তমান পদে রাখলেও তার সম্মতি রয়েছে।

এ দু’জনের বাইরে সভাপতি হিসেবে সাবেক ছাত্রনেতা সানাউল হক নীরুর নাম আলোচনায় রয়েছে। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে লবিং চালাচ্ছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। তাকে সাধারণ সম্পাদক পদ দেয়া না হলে তিনি যুবদল করবেন কিনা তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। সেক্ষেত্রে টুকু নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক হতে আগ্রহী। যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আরও আলোচনায় আছেন- মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, এসএম জাহাঙ্গীর।

এছাড়া সুপার ফাইভ বা গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে লবিং চালাচ্ছেন- খন্দকার মাশুকুর রহমান, মোরতাজুল করিম বাদরু, হামিদুর রহমান হামিদ, মামুন হাসান, রফিকুল আলম মজনু, মাহবুবুল হাসান পিংকু, কেআই খলিল, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, আবদুল বারী ড্যানী, খালেক হাওলাদার, জাকারিয়া মঞ্জু, মোনায়েম মুন্না, কাজী রফিক প্রমুখ।

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল  বলেন, তিনি আর যুবদলে থাকছেন না এটা চেয়ারপারসনকে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। দলের চেয়ারপারসন কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তবে তা নির্বাহী কমিটির আগে না পরে হবে তা নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।


জানা গেছে, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব করা হয়েছে। ওই পদে নতুন মুখ আসছে এটা নিশ্চিত। সংগঠনের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু সভাপতি হতে আগ্রহী। কিন্তু দলের একটি প্রভাবশালী অংশ চাচ্ছে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপুকে সভাপতি করতে। সে ক্ষেত্রে বাবুকে সাধারণ সম্পাদক করা হতে পারে। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক হতে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিবের নাম আলোচনায় রয়েছে।

সফিউল বারী বাবুকে সাধারণ সম্পাদক করা হলে এদের মধ্যে একজনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হবে। মহিলা দল পুনর্গঠন নিয়েও আলোচনা রয়েছে। সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাকে সভাপতি করা হচ্ছে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় আছেন- সাবেক সংসদ সদস্য হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আক্তার, রেহেনা আক্তার রানু, নীলোফার চৌধুরী মনি ও সুলতানা আহমেদ। মহাসচিব হওয়ার পর কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির পদ ছেড়ে দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দ্রুত কৃষক দলের নতুন কমিটি করতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদুকে নির্দেশ দেন তিনি। জানতে চাইলে দুদু বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু না করলেও ভেতরে ভেতরে পুনর্গঠন কাজ শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দ্রুত দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। আশা করি শিগগিরই কৃষক দলের নতুন কমিটি হবে।-যুগান্তর

৯ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে