সোমবার, ০৯ মে, ২০১৬, ০৭:৪০:৫০

লাল ফাইলে মোড়ানো নিজামীর ফাঁসির রায়ের কপি কেন্দ্রীয় কারাগারে

লাল ফাইলে মোড়ানো নিজামীর ফাঁসির রায়ের কপি কেন্দ্রীয় কারাগারে

ঢাকা : মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর করা রিভিউ খারিজের পর প্রকাশিত রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপির অনুলিপি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেছে।  

৯ মে সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মীরা রায়ের কপি কারাগারে নিয়ে যান।  ঢাকা মেট্রো চ-৫৩ ৮১২১ নম্বরের একটি গাড়িতে করে দুই কর্মচারী কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যান।

২২ পৃষ্ঠার রায়ের কপিটি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছানোর পর নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হয়ে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে কারাগারের উদ্দেশ্য পাঠানো হয় লাল ফাইলে মোড়ানো রায়ের কপি।  সেটি কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে সন্ধ্যা ৭টার দিকে।

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় আজ সোমবার প্রকাশ হয়।  

আদালত বলেছেন, গণহত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন নিজামী।  

নিজামীর রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর প্রকাশ করেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।

সোমবার সুপ্রিমকোর্ট রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।  রায় প্রকাশের পর তা ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।  সেখান থেকে রায়ের কপি যায় কারাগারে।

যদি রাষ্ট্রপতির কাছে নিজামী ক্ষমা প্রার্থনা না করেন, তবে যেকোনো সময় ফাঁসি কার্যকর হতে পারে।  নিজামীর আত্মীয়-স্বজনরা জানিয়েছেন, আল্লাহ ছাড়া তিনি কারো কাছে ক্ষমা চাইবেন না।  

জামায়াতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নিজামী তার স্বজনদের জানিয়েছেন, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন না।  আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না।  

৫ মে গত বৃহস্পতিবার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ খারিজ করে দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।  

চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।  বেলা সাড়ে ১১টায় এজলাসে এসে প্রধান বিচারপতি শুধু বলেন, ‘ডিসমিসড’।

বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন বিচারপতি নাজমুন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।  

রিভিউ আবেদন খারিজের পর নিজামীর ফাঁসি কার্যকরে রজনীর অপেক্ষায় আছে কারা কর্তৃপক্ষ।

রিভিউ আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর শুরু হবে নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া।  নিয়ম অনুযায়ীম রিভিউ খারিজের রায়ের অনুলিপি কারাগারে যাবে।  

রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করলে দণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকবে না।  নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকরে এখনো মাত্র একটি ধাপ।  সেই ধাপে না গেলে যেকোনো সময় ফাঁসি কার্যকর করা হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, নিজামীর মামলায় সব নিয়ম অনুসরণ করা হবে। রিভিউ খারিজ হওয়ায় এখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে।  তবে তিনি যদি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এ ক্ষেত্রে তাকে সে সুযোগ দেয়া হবে।

কারা কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানিয়েছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আইনি পদক্ষেপসমূহ দ্রুত সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যেই নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থান্তান্তর করা হয়েছে।

কারা সূত্র জানায়, এরই মধ্যে কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করতে  নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।  নিজামীর ফাঁসি নতুন কারাগারে হলে এটি হবে কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রথম ফাঁসি।

তবে কোনো কারণে সেখানে ফাঁসির মঞ্চের সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন না হলে বেছে নেয়া হতে পারে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারের ফাঁসির মঞ্চ।

তবে কাশিমপুর কারাগার থেকে নিজামীকে কেরানীগঞ্জে না নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়ায় সেখানেই ফাঁসি কার্যকরের সম্ভাবনা বেশি।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর জানান, নিজামীকে এখানে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে।  সেটি আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল।

রোববার মধ্যরাতে কারাগারে আনার আগে থেকেই নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয় বলে জানা গেছে। মূল ফটকের বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।  পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন নিজামী। ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।

গত ১৫ মার্চ আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। এরপর ২৯ মার্চ নিজামীর আইনজীবীরা সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জমা দেন।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে করা একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন নিজামীকে গ্রেপ্তার করা হয়।  ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

২০১২ সালের ২৮ মে ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচার শুরু হয়।
৯ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে