ঢাকা : মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রিভিউ
খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শোনেনো হয়েছে।
আজ সোমবার রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে রায় পড়ে শোনানো হয়।
এ তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে রিভিউয়ের পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শোনানো হয়েছে।
এর আগে আজ দুপুরে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপিতে সই করেন বিচারপতিরা। এরপর রায়টি প্রকাশ করা হয়। রায় প্রকাশের পর বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে রায়ের কপি সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
ট্রাইব্যুনাল থেকে রায়ের কপি সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। এরপরই মতিউর রহমান নিজামীকে রায় পড়ে শোনানো হয়।
এদিকে মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি আজ রাতে অথবা যেকোনো সময় যেকোনো মুহূর্তে কার্যকর হয়ে যেতে পারে। এ লক্ষ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে ফাঁসির মঞ্চ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কারাগার প্রস্তুত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও প্রস্তুত। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি আসলেই রায় কার্যকরের আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভা থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত নেতা নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে নিজামী যদি প্রাণ ভিক্ষা না চান তাহলে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
নিজামীর করা রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) আবেদন খারিজ করে ৫ মে এ রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
অন্য তিন বিচারপতি হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়ের মধ্যদিয়ে শেষ হতে যাচ্ছে আলবদর বাহিনীর সর্বোচ্চ নেতা নিজামীর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আইনি লড়াই। তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকরের বিষয়টিও চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছালো।
তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
নিজামীকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যা ও ধর্ষণসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) প্রমাণিত ৮টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে ৪টিতে ফাঁসি ও ৪টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
এর মধ্যে ৩টিতে ফাঁসি ও ২টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। অন্য তিনটিতে চূড়ান্ত রায়ে দণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন নিজামী, যার মধ্যে একটিতে ফাঁসি ও দু’টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ছিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে।
এর আগে ৯ মে সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মীরা রায়ের কপি কারাগারে নিয়ে যান। ঢাকা মেট্রো চ-৫৩ ৮১২১ নম্বরের একটি গাড়িতে করে দুই কর্মচারী কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যান।
২২ পৃষ্ঠার রায়ের কপিটি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছানোর পর নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হয়ে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে কারাগারের উদ্দেশ্য পাঠানো হয় লাল ফাইলে মোড়ানো রায়ের কপি। সেটি কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে সন্ধ্যা ৭টার দিকে।
নিজামীর আত্মীয়-স্বজনরা জানিয়েছেন, আল্লাহ ছাড়া তিনি কারো কাছে ক্ষমা চাইবেন না।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, নিজামীর মামলায় সব নিয়ম অনুসরণ করা হবে। রিভিউ খারিজ হওয়ায় এখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে তিনি যদি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এ ক্ষেত্রে তাকে সে সুযোগ দেয়া হবে।
কারা কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানিয়েছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আইনি পদক্ষেপসমূহ দ্রুত সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যেই নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থান্তান্তর করা হয়েছে।
কারা সূত্র জানায়, এরই মধ্যে কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নিজামীর ফাঁসি নতুন কারাগারে হলে এটি হবে কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রথম ফাঁসি।
তবে কোনো কারণে সেখানে ফাঁসির মঞ্চের সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন না হলে বেছে নেয়া হতে পারে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারের ফাঁসির মঞ্চ।
তবে কাশিমপুর কারাগার থেকে নিজামীকে কেরানীগঞ্জে না নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়ায় সেখানেই ফাঁসি কার্যকরের সম্ভাবনা বেশি।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর জানান, নিজামীকে এখানে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। সেটি আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল।
রোববার মধ্যরাতে কারাগারে আনার আগে থেকেই নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয় বলে জানা গেছে। মূল ফটকের বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন নিজামী। ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
গত ১৫ মার্চ আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। এরপর ২৯ মার্চ নিজামীর আইনজীবীরা সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জমা দেন।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে করা একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন নিজামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
২০১২ সালের ২৮ মে ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচার শুরু হয়।
৯ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম