ঢাকা : নিজামীর পরিবারের সদস্যদের শেষবারের মতো ডেকেছে কারা কর্তৃপক্ষ। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর তাদের কারাগারে ডাকা হয়েছে।
বিকেলে কারাগার থেকে বেরিয়ে জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিজামীকে একটি প্রতিনিধি দল জিজ্ঞাসাবাদ করে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না। এ দলে ছিলেন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রিজনস) ইকবাল কবীর, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির।
কারাসূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করতে জল্লাদ রাজু ও সহযোগীরা মহড়া শুরু করেছেন। ফাঁসি দেয়ার আগে নিজামীকে গোসল করানো হবে এবং জমটুপি পরিয়ে ফাঁসির মঞ্চে তোলা হবে।
এ সময় উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসক মো. সালাহ উদ্দিন, সিভিল সার্জন আবদুল মালেক মৃধা, জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
এদিকে জীবনের শেষ সময়টা কারাগারেই কাটাচ্ছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী। কেন্দ্রীয় কারাগারের রজনীগন্ধা সেলের ৮ নম্বর কক্ষে আছেন তিনি। সেল থেকে নিজামীর ফাঁসির মঞ্চের দূরত্ব মাত্র ২০ গজ।
সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন। উপরের নির্দেশের অপেক্ষায় কারা কর্তপক্ষ। নির্দেশ এলেই জামায়াত নেতা নিজামীকে নেয়া হবে ফাঁসির মঞ্চে।
রিভিউ আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ৯ মে কারাগারে আসে সেই কপি। ফাঁসির রায়ের কপি রাতেই পড়ে শোনানো হয় মতিউর রহমান নিজামীকে।
সূত্রটি জানায়, সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় রায় পড়ে শোনানোর পর গলা শুকিয়ে যায় নিজামীর। এরপর ওই রাতে কারারক্ষীদের কাছ থেকে ১৭ বার পানি চেয়ে পান করেন তিনি।
সূত্রে জানা যায়, মৃতুদণ্ডের রায় পড়ে শোনানোর পর গভীর রাত পর্যন্ত নিজামী সেলের মধ্যে পায়চারী করছিলেন। পরে রাত ২টার দিকে ঘুমাতে যান তিনি। ভোরা রাতে উঠে আবার ফজরের নামাজ আদায় করেন তিনি।
কারাগার সূত্র জানায়, অন্য বন্দিদের সঙ্গে নিজামীকেও সকালের নাস্তা দেয়া হয়। দুটি রুটি ও এক বাটি ভাঁজি দিলে কিছু ভাঁজি বাদে সব খেয়ে নেন। তবে ডিম, চা খাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ নেই তার। তার চায়ের অভ্যাস নেই বললেই চলে।
এদিকে নিজামীর ফাঁসি কার্যকরে প্রধান জল্লাদ শাহজাহানও সন্ধ্যা নাগাদ কাশিমপুর কারাগার থেকে এসে পৌঁছাবেন। প্রাণ ভিক্ষার আবেদন এবং পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎসহ আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে চকবাজারের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারেই ফাঁসির মঞ্চে ঝোলানো হবে নিজামীকে।
কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশের দোকানীরা জানান, ফাঁসি কার্যকরের আগে কারাগার এলাকার আশপাশের সব দোকান বন্ধ রাখতে কারা কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়ে থাকেন। তবে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো নির্দেশনা পাননি তারা।
তবে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর একটিই চাওয়া, তা হলো পরিবারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করা। এমন আগ্রহের কথা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকাশ করেছেন তিনি।
নিজামী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে চান কি না এবং প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না একজন ডেপুটি জেলার তার কাছে জানতে চাইলে তিনি কারাগারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানাবেন বলে জানান।
উল্লেখ্য, নিয়মানুযায়ী রায় পড়ে শোনানোর পরবর্তী সাতদিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার সুযোগ রয়েছে।
তবে নিজামীর দল জামায়াতের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, নিজামী তার স্বজনদের জানিয়েছেন, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন না।
আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না তার। তাই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে নিজামীকে ফাঁসির রশিতে ঝোলাতে আইনগত আর কোনো বাধা থাকবে না।
এদিকে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফাঁসির প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেছেন কারা কর্মকর্তারা। বৈঠকে ছিলেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. ইকবাল, কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির, জেলার নেসার আলমসহ বেশ কয়েকজন কারা কর্মকর্তা।
নিজামীর রিভিউ খারিজ করে দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় প্রধান বিচারপতি শুধু বলেন, ‘ডিসমিসড’।
১০ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম