মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০১৬, ১১:১৪:৩১

নিজামীকে তওবা পড়ালেন মাওলানা মনির হোসেন

নিজামীকে তওবা পড়ালেন মাওলানা মনির হোসেন

নিউজ ডেস্ক : রাত ১০টার আগেই গোসল করানোর পর নিজামীকে তওবা পড়ান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পুকুরপাড় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মনির হোসেন।

ফাঁসির মঞ্চে উঠার আগে নিজামী পরিবার দেখা করতে গেলে দলের সব নেতাকর্মীকে ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন।  তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেষ দেখায় পরিবারসহ দলের নেতাকর্মীদের এ পরামর্শ দিয়ে যান নিজামী।   

এ কথা জানিয়েছেন নিজামীর ভাতিজি।  তবে তাৎক্ষণিকভাবে তার নাম জানা যায়নি।

মঙ্গলবার রাতে নিজামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

নিজামীর ভাতিজি জানান, তারা যখন কারাগারের ভেতর প্রবেশ করেন তখন নিজামী নামাজ পড়ছিলেন।  এরপর তিনি তাদের জানান, তিনি নিজে শক্ত আছেন এবং পরিবারসহ দলের নেতাকর্মীদের ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দেন।

নিজামীর সঙ্গে দেখা করে পরিবারের সদস্যরা ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে কারাগার থেকে বেরিয়ে যান।
নিজামীর সঙ্গে এটিই যে তার পরিবারের শেষ দেখা তা অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কথায়।  সন্ধ্যায় তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাননি তিনি।

জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি আজ রাতেই কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ফাঁসির পরে নিজামীর মৃত্যু নিশ্চিতসহ মরদেহ পরীক্ষার লক্ষ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে ঢুকেছেন ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল মালেক মৃধা।

মঙ্গলবার রাত ১০টায় কারাগারের ভেতরে যান তিনি।

কারা সূত্র জানিয়েছে, ফাঁসি কার্যকরের সময় ফাঁসির মঞ্চের পাশে উপস্থিত থাকবেন সিভিল সার্জন আব্দুল মালেক মৃধা, ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. সালাউদ্দিন, পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মফিজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগরের একজন ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবীর।

এছাড়া মঞ্চের পাশে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একজন প্রতিনিধি ও র‌্যাবের একজন প্রতিনিধি।  থাকবেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার ও দুজন ডেপুটি জেলার।

মঞ্চের চারদিকে ঘিরে থাকবে কারারক্ষীরা।  থাকবেন একজন প্রধান জল্লাদ ও সহযোগী জল্লাদরা।  ফাঁসি কার্যকরের পর নিজামীকে মৃত ঘোষণা করবেন উপস্থিত সিভিল সার্জন।

ফাঁসি কার্যকরের পর জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর মরদেহ নিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, কারাগারের কারা কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে চারটি অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করা হয়েছে।  পরবর্তী নির্দেশনা পেলে অ্যাম্বুলেন্স চারটি বকশিবাজার আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে রাখা হবে।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় থাকা জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে শেষবারের মত সাক্ষাৎ করেন তার পরিবারের সদস্যরা।  পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আছেন স্ত্রী শামসুন্নাহার নিজামী, দুই ছেলে ড. খালিদ ও ব্যারিস্টার নাজিব মোমিন, মেয়ে খাদিজা মহসীনা, বড় ছেলের স্ত্রী, দুই নাতি, নিজামীর চাচাতো ভাই, ভাইয়ের মেয়ে।  

মনমথপুর কবরস্থানেই তাকে সমাহিত করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।  তবে বাবা-মায়ের কবরের পাশে শায়িত করা হচ্ছে না।  যে জায়গায় তাকে সমাহিত করা হবে সে জায়গাটি পরিষ্কারও করা হয়েছে।

১০ মে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর মতিউর রহমান নিজামীর ভাতিজা আব্দুর রহিম খান গণমাধ্যমকে এসব কথা জানান।

তিনি বলেন, চাচা (নিজামী) এখানে এসে বলেছিলেন, মনমথপুর কবরস্থানে বাবা-মায়ের পাশে শায়িত হতে চান।  কিন্তু সেই স্থানে জায়গা না দিয়ে কিছুটা দূরে তার মামার কবরের পাশে শায়িত করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম বলেন, কবরস্থানসহ সম্ভাব্য সব জায়গাগুলোই দেখেছি।  নিজামীর বাবা-মায়ের কবরের পাশের জায়গাটি জঙ্গলাকীর্ণ।  এটি একদিনে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়।  তাই সেখানে দাফনের চিন্তা বাদ দিতে হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। মরদেহ আসার পর দাফনের সব কার্যক্রম শুরু করবো।

এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কারা কর্তৃপক্ষ নিজামীর পরিবারের সদস্যদের দেখা করতে ফোন দেয়।  অবশ্য নিজামীর সঙ্গে দেখা করার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল।  সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারকে ডাকা হয়েছে বলে জানান তাদের আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম।

এদিকে নিজামীও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করতে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে সম্মতি জ্ঞাপন করেছিলেন।  পরে আজ সন্ধ্যার পর তাদের কারাগারে ডাকা হয়।  কথা হয় পরিবারের লোকজনের সাথে।

সূত্র জানায়, জল্লাদ রাজুর নেতৃত্বেই নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর হতে পারে।  এর আগে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা) ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করেছিলেন রাজু।  জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময়ও সহযোগী ছিলেন এই রাজু।।

জীবনের শেষ সময়টা কারাগারেই কাটালেন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী।  কেন্দ্রীয় কারাগারের রজনীগন্ধ্যা সেলের ৮ নম্বর কক্ষে আছেন তিনি।  সেল থেকে নিজামীর ফাঁসির মঞ্চের দূরত্ব মাত্র ২০ গজ।

সূত্রটি জানায়, গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় রায় পড়ে শোনানোর পর গলা শুকিয়ে যায় নিজামীর।  এরপর ওই রাতে কারারক্ষীদের কাছ থেকে ১৭ বার পানি চেয়ে পান করেন তিনি।

তবে মতিউর রহমান নিজামীর দুটিই চাওয়া ছিল।  এরই মধ্যে একটি পূরণ হয়েছে।  অন্যটি আর পূরণ হচ্ছে না।  দুটিই চাওয়ার মধ্যে একটি পরিবারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করা এবং অন্যটি তার বাবা-মায়ের পাশে তাকে সমাহিত করা।  
১০ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে