বুধবার, ১১ মে, ২০১৬, ০৯:৩৭:৪০

নিজামীর অজানা অধ্যায়গুলো

নিজামীর অজানা অধ্যায়গুলো

নিউজ ডেস্ক : মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। রাজনীতিবিদ- আরো স্পষ্ট করে বললে ইসলামি রাজনীতিবিদ। এই পরিচয়ে তিনি সব চেয়ে বেশি পরিচিত। তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর আমির এবং সাবেক মন্ত্রী।

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর জন্ম ১৯৪৩ সালের ৩১ মার্চ পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার মনমতপুর গ্রামে। তার পিতা মরহুম লুৎফর রহমান খান। তার শিক্ষা জীবনের বড় অংশই কেটেছে মাদ্রাসায়। শুরুতে বাংলা মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছিলেন বছর খানেক।

এরপর থেকে স্নাতক পর্যন্তই তিনি মাদ্রাসায় পড়েছেন। ষাট এর দশকের শেষে কামিল পাশের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন।

মাওলানা নিজামীর ছেলে নকিবুর রহমান জানিয়েছেন, তার বাবার শৈশব-কৈশোর কেটেছে পাবনার সাথিয়ায়।

জেনারেল এরশাদের সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় জামায়াতে ইসলামী সাথিয়াসহ পাবনা অঞ্চলে আবারও সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা চালায়।

এরই মধ্যে মাওলানা নিজামী জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল হলেও সাথিয়া-বেড়া এলাকায় মাঠপর্যায়ে তার সরাসরি কর্মকাণ্ড শুরু হয় এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।

সাথিয়ায় যে ইউনিয়নে তার বাড়ি, সেই ধোপাদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন আহমেদ খান বলছিলেন, তিনি নিজেও সেই নির্বাচনকে ঘিরেই জানতে পারেন নিজামী সম্পর্কে।

৯১ সালে নিজামী সাথিয়া এবং বেড়া এলাকা নিয়ে পাবনা-১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ২০০১ সালে জামায়াত বিএনপির সাথে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলে একই আসনে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সেই জোট সরকারে নিজামী প্রথমে কৃষি এবং পরে শিল্প মন্ত্রী হয়েছিলেন।

তিনি ষাটের দশকে মাদ্রাসার ছাত্র থাকার সময়ই জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন।

৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত নিজামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন। এরপর নিজামী ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন।

তিনি পর্যায়ক্রমে ঢাকা মহানগরীর আমীর, এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল, সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালের ১৯ নবেম্বর জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমীর নির্বাচিত হন। এখন পর্যন্ত তিনি এই মহান দায়িত্বে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।

নকিবুর রহমান বলেছেন, তার বাবা ধাপে ধাপে মূল দল জামায়াতের আমীর হয়েছেন।

অধ্যাপক গোলাম আযম জামায়াতের আমীরের পদ থেকে অবসর নেয়ার পর ২০০০ সালে ঐ পদে নির্বাচিত হন মতিউর রহমান নিজামী। সেই থেকে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি জামায়াতের আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তার বিরুদ্ধে বিচারে বড় অভিযোগ এসেছে, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছাত্র সংঘের নেতা হিসেবে আল বদর বাহিনী গঠন করেছিলেন।

আল বদর বাহিনীর বিরুদ্ধেই বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো সংঘটিত করার অভিযোগ রয়েছে। তবে মাওলানা নিজামী এবং তার দল সবসময় কোনো হত্যাযজ্ঞে জড়িত থাকার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে জামায়াত এবং ছাত্র-সংঘের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনেকে দেশ ছেড়ে পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মতিউর রহমান নিজামীও ছিলেন।

স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াত নতুনভাবে সাংগঠনিক যে ভিত্তি দাঁড় করিয়েছে, সেজন্য মাওলানা নিজামীর অবদানকে গুরুত্বের সাথে দেখা হয়।

মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ৭১এর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম চলেছে ২০১২ সাল থেকে। এতে তাকে মৃত্যদণ্ড দেয়া হয়। সর্বশেষ তার রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে গেলে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১০মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
১১ মে, ২০১৪/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে