বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০১৬, ০১:৩২:৪০

জল্লাদকে নিজামী আমি প্রস্তুত

জল্লাদকে নিজামী আমি প্রস্তুত

নিউজ ডেস্ক : তখন রাত প্রায় ১২টা। সময় হয়ে এসেছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর হতে চলেছে। সেকথা তখন মতিউর রহমান নিজামী নিজেও জানেন। কারা কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তখন পাঁচ জল্লাদ রজনীগন্ধা সেলে।

হঠাৎ সেময় প্রস্তুত নিজামীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জল্লাদদের তিনি নিজেই বলেন ‘চলেন’। এরপর ধীর পায়ে নিজামী হেঁটে যান ফাঁসির মঞ্চে দিকে। দণ্ড কার্যকরের আগ পর্যন্ত রজনীগন্ধায় ছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামী। তাকে ফাঁসির মঞ্চে নিতে বেগ পেতে হয়নি জল্লাদদের বলে কারা সূত্র জানায়।

কারা সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত পৌনে ৮টায় তিনটি মাইক্রোবাসে করে নিজামীর স্বজনরা কারাগারে আসেন। তাদের মধ্যে ছিলেন নিজামীর স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ মোট ১৮ জন। নিজামীর সঙ্গে শেষ দেখা করতে কারাগারে এসছিলেন তারা। রাত ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে কারাগার থেকে বের হয়ে গাড়িতে চলে যায় নিজামীর স্বজনরা। মেয়ে খাদিজা তখন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি অনেকটা শব্দ করে কান্না জুড়ে দেন। তখন নিজামী তাদের সান্ত্ব্তনা দিয়ে বলেছেন, তোমরা শক্ত হও। আমি বিচলিত নই। আমার জন্য দোয়া করো। এক পর্যায়ে তিনি সবাইকে নিয়ে মোনাজাত করেন এবং সেটি দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে।

কারাসূত্র জানায়, তাকে সকালের নাস্তা দেওয়া হয়। নাস্তা ছিল দুটি রুটি ও এক বাটি ভাজি। তবে ডিম, চা লাগবে কিনা, এমন প্রশ্ন করলে তিনি ‘না’ বলেন। তবে নাস্তা শেষে তিনি পরিবারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রের তথ্য, দুপুরে খাবারের আগে তিনি গোসল করেন। জোহরের নামাজ আদায় করেন। পরে তাকে দুপুরের খাবার দেওয়া হয়। তার খাবারের তালিকায় ছিল ভাত, ডাল, রুই মাছ ও করলা ভাজি। তিনি খাবার খেয়ে আবার কোরআন তেলাওয়াত ও তসবিহ পাঠ শুরু করেন। দুপুরের পর তিনি বিশ্রামে যান। কিছু সময় তিনি ঘুমিয়ে কাটান। বিকালে আসরের নামাজ আদায়ের পর তাকে হাল্কা নাস্তা করতে দেওয়া হয়।

এশার নামাজ আদায়ের পরে রাতের খাবার দেওয়া হয়। তার খাবারের মেন্যুতে ছিল ভাত, ডাল ও মাছ। তিনি রাতের খাবার শেষ করে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে তার প্রিয় কিছু খাবার সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি সে খাবারও খেয়েছেন।

কারা সূত্রের খবরানুযায়ী, কারা মসজিদের ইমাম মনির হোসেন নিজামীকে তওবা পড়িয়ে কনডেম সেল থেকে বের হতেই জল্লাদরা কনডেম সেলে ঢোকেন। জামায়াতের আমির যুদ্ধাপরাধী


নিজামীকে জম টুপি পরিয়ে বের করেন। তারা নিজামীকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে দাঁড় করান। ততক্ষণে ফাঁসির মঞ্চে হাতলের কাছে প্রস্তুত প্রধান জল্লাদ রাজু।

এরপর ফাঁসির মঞ্চে তোলার পরই জম টুপির ওপর ফাঁসির ম্যানিলা রশি টেনে নিজামীর গলায় পরিয়ে দেন অপর এক জল্লাদ। হাত-পা বেঁধে দেওয়া হয় তার। রাজু তা ভালো করে যাচাই করে রশির হাতলে হাত রাখেন। জল্লাদ রাজুর চোখ তখন জেল সুপারের হাতে থাকা রুমালের দিকে।

সূত্রানুযায়ী খবর, রাত ১২ টা ১০ মিনিটে জেল সুপার হাত থেকে রুমাল মাটিতে ফেলতেই জল্লাদ রাজু ফাঁসির রশির হাতলে টান দেন। পায়ের নিচের পাটাতন সরে গিয়ে রশিতে ঝুলতে থাকে যুদ্ধাপরাধী নিজামী। নির্ধারিত সময় পর নামিয়ে আনা হয় তার মরদেহ। এরপর মরদেহে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করেন সিভিল সার্জন।

গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তার মরদেহবাহী দুটি অ্যাম্বুলেন্স পাবনার পথে রওনা দেয়। মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে পুলিশ ও র‌্যাবের তিনটি করে মোট ছয়টি গাড়ি রয়েছে। বুধবার সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি নিজামীর গ্রামের বাড়ি সাঁথিয়ার মন্মথপুর গ্রামে পৌঁছায়।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুর নিজ গ্রামের বাড়িতে বুধবার সকাল ৭টা ১২ মিনিটের দিকে নিজামীর জানাজা ও ৭টা ২০ মিনিটের দিকে দাফন সম্পন্ন হয়। নিজ গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হয়েছে।

এদিকে আজ বুধবার জোহরের নামাজের পরই মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া মতিউর রহমান নিজামীর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। মসজিদের ভেতর ওই জানাজা পড়ানো হয়। এতে অংশ নেন জামায়াত শিবির কর্মীরা। এ সময় মস‌জি‌দের বাইরে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতা‌য়েন ছিল।

জানা গেছে, জানাজার নামাজের আগে জামায়াত শি‌বি‌রের কর্মীরা অন্যান্য মুস‌ল্লি‌দের স‌ঙ্গে জোহ‌রের নামা‌জে অংশ নেন। এরপর জানাজা সম্পন্ন ক‌রে দ্রুত মস‌জিদ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন তারা। এসময় অনেককেই ‘ভি’ চিহ্ন (বিজয়সূচক) দেখাতে দেখা গেছে। গতকাল কারাগারে নিজামীর সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করতে এসেও দুই স্বজন ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়েছিলেন।

অবশ্য জামায়াতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, জানাজার নামাজে অংশগ্রহণের জন্য সকাল থেকেই বায়তুল মোকাররম এলাকায় মানুষ জড়ো হতে থাকেন। তবে পুলিশ দুপুর ১টার আগে কাউকে মসজিদের ভেতর প্রবেশ করতে দেয়নি। আজানের পর পুলিশ গেট খুলে দেয়।

১২ মে ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে