বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০১৬, ০৩:৫৮:০৫

মনোনয়ন বাণিজ্য, গোপনে তদন্ত করছেন খালেদা জিয়া

মনোনয়ন বাণিজ্য, গোপনে তদন্ত করছেন খালেদা জিয়া

এনাম আবেদীন:  পদ ও মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়টি গোপনে তদন্ত করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, এ প্রশ্নে তদন্ত কমিটি গঠন করা না হলেও নিজের বিশ্বস্ত লোকদের দিয়ে এরই মধ্যে তিনি খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন। কারণ দলের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তিনি একরকম চাপের মুখে পড়েছেন। স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ নেতা গত সোমবারের বৈঠকে ওই অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন।

যদিও স্থায়ী কমিটির গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ই শুধু এ ধরনের কমিটি গঠনের বিরোধিতা করে বলেছেন, কমিটি করা হলে তার সূত্র ধরে গণমাধ্যমে আরো বেশি লেখার সুযোগ তৈরি  হবে। পাশাপাশি খালেদা জিয়াও যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেন, সরকার ষড়যন্ত্র করে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য এসব করাচ্ছে।

তবে দলের সিনিয়র নেতারা এই প্রথম কোনো ঘটনা তদন্তের ব্যাপারে একাট্টা হওয়ায় চেয়ারপারসন পরিস্থিতির গুরুত্ব আঁচ করতে পেরেছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলোর ধারণা, স্থায়ী কমিটির নেতারা ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় খালেদা জিয়া নতুন করে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছেন। সূত্র আরো মনে করে, সরকার লেখাচ্ছে বলে যে যুক্তি বা অভিযোগ সেটি খালেদা জিয়া তাঁর ‘ইগো’র কারণে করে থাকতে পারেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি যে হয়েছে, এটি তিনি নিজেও অনুধাবন করতে পেরেছেন।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী  কমিটির প্রবীণ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, তদন্ত কমিটি হয়তো হবে না। কিন্তু চেয়ারপারসন এ ঘটনাটি খতিয়ে দেখবেন এমন আলোচনাই হয়েছিল স্থায়ী কমিটিতে। ফলে খোঁজখবর তিনি নেবেন এটিই স্বাভাবিক।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। কিন্তু চেয়ারপারসন বলেছেন, বিষয়টি তিনি দেখবেন। ফলে খোঁজখবর তিনি নিতেই পারেন। সেটি যেকোনো মাধ্যমে হতে পারে বলেন তিনি।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, তদন্ত কমিটির ব্যাপারে চেয়ারপারসন কিছু বলেননি। তবে ‘দেখবেন’ যখন বলেছেন, তখন অবশ্যই তিনি খোঁজখবর নিতে পারেন। নিজস্ব কাউকে দিয়ে খালেদা জিয়া তদন্ত করাবেন কি না জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, হতে পারে। তবে আমি কিছু জানি না।

উল্লেখ্য, গত পৌর ও চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ‘বাণিজ্য’ হয়েছে বলে বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু নেতা ওই ঘটনায় জড়িত। বিশেষ করে দলের একজন সহদপ্তর সম্পাদকের ব্যাংক হিসাবে এক বছরে সাড়ে চার কোটি টাকা লেনদেনের ঘটনা ফাঁস হওয়ায় আরো বেশি তোলপাড় হচ্ছে।

পাশাপাশি চেয়ারপারসন কার্যালয়ের শিমুল বিশ্বাস ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ কমিটি ঘোষণায় প্রভাব বিস্তার করছেন বলে দলে আলোচনা ছড়িয়েছে। সব মিলিয়ে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে পরিস্থিতি পর্যালোচনার উদ্যোগ নেন খালেদা জিয়া। আর ওই বৈঠকেই নেতারা বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের তুলাধোনা করেন।

লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এ পর্যন্ত ঘোষিত কমিটি নিয়ে ক্ষুব্ধ। ফলে তিনিও তৎপর হয়েছেন কমিটি গঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। সব মিলিয়ে পদ ও মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে খালেদা জিয়া একরকম বাধ্য হচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।-কালের কন্ঠ

১২ মে, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে