নিউজ ডেস্ক : বিভিন্ন আইনি ফাঁক ফুকুর গলে দেশের বাইরে অর্থ পাচারে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন রাজনীতিবিদরা। বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলা ‘পানামা পেপারস’-এ নাম আসা ব্যক্তিদের পেশা পর্যালোচনা করে এ তথ্য প্রকাশ করেছে ডেনমার্কের গবেষকরা।
এতে দেখা যায়, রাজনীতিবিদদের পরের অবস্থানে আইনজীবী, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও বিভিন্ন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। তবে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পেশার ব্যক্তিদের পার্থক্যও অনেক। বিশ্লেষণী এ তথ্যের পাশাপাশি পানামা পেপারসের বিশাল তথ্যভাণ্ডার থেকে দিন দিন বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন নাম।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপার্থী হিসেবে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলা মার্কিন ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামই নতুন করে কমপক্ষে ৩ হাজার ৫৪০ বার পাওয়া গেছে। অর্থ পাচারের এ তালিকার সঙ্গে সম্পৃক্ততায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও উজবেকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীরা। সমালোচনার ঝড় উঠেছে হলিউডের হার্টথ্রব নায়িকা হ্যারি পটার ছবির এমা ওয়াটসনের অফশোর কোম্পানির মালিকানা ধরা পড়ায়।
ব্রিটিশ দৈনিক ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ডেনমার্কের অ্যাপ্লাইড ম্যাথ ও কম্পিউটার সায়েন্সের সিনিয়র রিসার্চার ফিন অরুপ নেইলসনের তৈরি করা বাবল চার্টে পেশাভিত্তিক তুলনা পাওয়া গেছে। এতে আইনজীবী, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও বিভিন্ন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের পরের ধাপগুলোয় ক্রমান্বয়ে আছেন অর্থনীতিবিদ, অভিনেতা, ফিল্ম প্রডিউসার, গায়ক, লেখক, চিত্র পরিচালক, কূটনীতিক, সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।
এর বাইরে ছোট ছোট গ্রুপে আছেন ব্যাংকার, মডেল, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, টেনিস খেলোয়াড়সহ অন্যরা। এতেই চার্টে শতাধিক পেশার ব্যক্তির নাম সর্বস্ব অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে অর্থ পাচার করতে দেখা গেছে।
পানামাভিত্তিক একটি আইন প্রতিষ্ঠান মোস্যাক ফনসেকা থেকে হ্যাকের মাধ্যমে ৩ লাখ ৬৮ হাজার মানুষ ও ৩ লাখ অফশোর প্রতিষ্ঠানের তথ্যসংবলিত পানামা পেপারস ফাঁস হয় এপ্রিলে। ৪০ বছর ধরে মোস্যাক ফনসেকা রাজনীতিবিদসহ তাদের ক্ষমতাশালী মক্কেলদের কীভাবে অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেছে, নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর ও কর ফাঁকি দেওয়ার পথ দেখিয়েছে, সে তথ্য উঠে আসছে ফাঁস হওয়া নথি থেকে। কিন্তু বিশাল এ ভাণ্ডার বিভিন্ন প্রক্রিয়ার পর গত সোমবার উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে নতুন নতুন রাজনীতিবিদ, সেলিব্রিটির নাম আসতে শুরু করেছে।
দ্বিতীয় কিস্তিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের নাম আসার পর কোনো ধরনের অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন তিনি। কিন্তু বিতর্ক তার পিছু ছাড়ছে না। কারণ নথি বলছে, ম্যালকম টার্নবুল এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার নেভিল রান ১৯৯৩ সালে অস্ট্রেলিয়ায় তালিকাভুক্ত স্টার মাইনিং এনএল নামের একটি কোম্পানির পর্ষদে যোগ দিয়েছিলেন।
বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় হিসেবে পরিচিত নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জন কির জন্য। ইতিমধ্যেই অর্থপাচারের স্বর্গরাজ্য হিসেবে দেখা দেওয়া নিউজিল্যান্ডের সংসদে এই পানামা পেপারস নিয়ে বচসায় প্রধানমন্ত্রী জন কিকে বের করে দেওয়া হয়েছে সংসদ থেকে। নতুন করে নাম এসেছে উজবেকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী উসমান কারিনভের তারকা কন্যা গুলনাভা কারিনভের। এতে টান পড়েছে উজবেক প্রধানমন্ত্রীর গদিতে।
তবে অনলাইনে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৩৪৫০ বার নাম আসার ঘটনা এবং হার্টথ্রব এমা ওয়াটসনের এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা। ডোনাল্ড ট্রাম্প ২২টি তথাকথিত বা অফসোর কোম্পানির পরিচালক হিসেবে নাম এসেছে। আর হলিউড অভিনেত্রী এমা ওয়াটসনই একমাত্র তারকা নন, যার নাম পানামা পেপারসে এলো। এর আগে পানামা পেপারসের নথিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনসহ চীন, পাকিস্তান, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টসহ শতাধিক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের নাম এসেছে।
পানামা পেপারসে নাম আসায় জনদাবির মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ড গুনলাগসন, স্পেনের ভারপ্রাপ্ত শিল্পমন্ত্রী হোসে মানুয়েল সোরিয়া ও দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের চিলি চ্যাপ্টারের প্রধান। বাংলাদেশেরও ৫২ ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে এই কেলেঙ্কারিতে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্তও চলছে। -বিডি প্রতিদিন
১৩ মে ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস