শুক্রবার, ১৩ মে, ২০১৬, ০৫:৩২:২৭

মনে হচ্ছে ফাঁদে পা দিয়েছি : আসলাম চৌধুরী

মনে হচ্ছে ফাঁদে পা দিয়েছি : আসলাম চৌধুরী

হাবিবুর রহমান খান ও নজরুল ইসলাম : ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং পরে গ্রুপ ছবি তোলার বিষয়টি স্বীকার করে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরী বলেছেন, তিনি জানতেন না মেন্দি এন সাফারি ইসরাইলের লিকুদ পার্টির নেতা। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর জানতে পারেন তার সঙ্গে মোসাদের সম্পর্ক রয়েছে।

পত্রিকায় প্রকাশিত ছবির বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ছবি কিভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হল তা বুঝতে পারছি না। তবে এ ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হলে সেজন্য নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাইতেও দ্বিধা নেই তার। বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরার এক অফিসে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আসলাম চৌধুরী এসব কথা বলেন। মোসাদের সঙ্গে তার বৈঠক, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র, এ বিষয়ে দলের অবস্থান, গ্রেফতার প্রসঙ্গসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

আসলাম চৌধুরী বলেন, বিষয়টি নিয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তাকে বলেছি, ‘এই সফর আমার ব্যক্তিগত।’ তারপরও এ ঘটনায় দল ক্ষতি হলে আমি তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। এরপরও দলের স্বার্থে তাকে পদ ছেড়ে দিতে বললে তাতে রাজি আছেন তিনি। আসলাম চৌধুরী আরও বলেন, এ ঘটনার পর থেকে পরিবারের সদস্যরা আতংকে আছেন। যে কোনো সময় গ্রেফতার করা হতে পারে। তবে আমি গ্রেফতারে ভয় পাই না। আসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমি নাকি আত্মগোপনে চলে গেছি। যদি আত্মগোপনেই থাকতাম তাহলে আপনারা কিভাবে আমাকে পেলেন।’

সম্প্রতি ইসরাইলভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘জেরুজালেম অনলাইন ডটকমে’ এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছে, ইসরাইলের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির প্রধান ও লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফারির সঙ্গে আসলাম চৌধুরী বৈঠক করেন। এরপর বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত খবর এবং ছবি প্রকাশিত হয়। এরপর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা আসলাম চৌধুরীর পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আসলাম চৌধুরী বিএনপির রাজনীতি করলেও ২০০২ সালে জিয়া পরিষদের মাধ্যমে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। এরপর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে জেলার আহ্বায়কের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে নির্বাচনও করেন তিনি।

মোসাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি?

প্রশ্ন : ‘ব্যবসায়িক সফরে ৫ মার্চ আমি দিল্লিতে যাই এবং ১০ মার্চ দেশে ফিরে আসি। ওই সময় ট্যুরিস্ট বাসে লোটাস টেম্পলে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের শিপন কুমার বসুর সঙ্গে পরিচয় হয়। শিপন সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে কাজ করেন জানতে পেরে তার সঙ্গে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও নির্যাতনের বিষয়টি আলাপ করি। এসব আলাপচারিতায় তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়। তিনি একদিন একটি অনুষ্ঠানে নিয়ে যান। সেখানে আমি দর্শক সারিতে বসা ছিলাম। তেল আবিব-দিল্লি সম্পর্ক নিয়ে অনুষ্ঠিত ওই সেমিনারের শেষে চা-চক্রের পরে গ্রুপ ছবি তোলা হয়। শিপন আমাকে দর্শক সারি থেকে স্টেজে নিয়ে যান। আমি তখনও জানি না মেন্দি এন সাফারি ইসরাইলের লিকুদ পার্টির নেতা।’ তবে এখন মনে হচ্ছে আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। কারও ফাঁদে পা দিয়েছি।

প্রশ্ন : চেয়ারপারসন আপনাকে ডেকে কি কথা বলেছেন?
আসলাম চৌধুরী : ‘পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর চেয়ারপারসন এ সম্পর্কে জানতে আমাকে তার কার্যালয়ে ডাকেন। আমি পুরো বিষয়টি তাকে খুলে বলেছি। এটা ছিল আমার ব্যক্তিগত সফর। তারপরও এ ঘটনায় দলের ক্ষতি হলে এজন্য দুঃখিত এবং ক্ষমাও চেয়েছি। পুরো বিষয়টি শুনে চেয়ারপারসন আমাকে সতর্কভাবে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছেন।’

প্রশ্ন : এ ঘটনায় বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন?

আসলাম চৌধুরী : এ ঘটনার সঙ্গে দলের কোনো যোগসূত্র নেই। বিষয়টি সরকার যখন রাজনীতির জন্য ব্যবহার করছে এবং বিএনপিকে হেয় করার চেষ্টা করছে তখন হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে। এ নিয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হলে আমি দুঃখিত। দল যদি মনে করে, আমার কারণে বিএনপি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাহলে হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত নেবে তা আমি মেনে নেব। প্রয়োজনে পদত্যাগ করতে বললেও দলের স্বার্থে তা করতে রাজি আছি। কারণ আমার মতো আসলাম চৌধুরী বিএনপিতে না থাকলে কিছুই হবে না। তবে যতদিন রাজনীতি করব ততদিন জাতীয়তাবাদী শক্তির সঙ্গে থাকব।

প্রশ্ন : গ্রেফতারের ভয়ে আপনি আত্মগোপনে আছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
আসলাম চৌধুরী : ‘আমি আত্মগোপনে থাকলে আপনারা আমার সঙ্গে দেখা করলেন কিভাবে? দু’একদিন হয়তো আমার মোবাইল বন্ধ ছিল। কয়েকদিন আগে আমার একটি ছোট অস্ত্রোপচার হয়েছে। চিকিৎসকরা পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বলেছেন। তাই মোবাইলের সুইচ অফ রেখেছি। শিগগিরই প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করব। দলের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনে পুরো বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের চিন্তাভাবনা আছে।’ সূত্র : যুগান্তর

১৩ মে ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে