শনিবার, ১৪ মে, ২০১৬, ০২:২০:৩৯

‘বিতর্কিত’ কমিটির খবরে যুবদলের মধ্যে চরম ক্ষোভ

‘বিতর্কিত’ কমিটির খবরে যুবদলের মধ্যে চরম ক্ষোভ

এস কে রেজা পারভেজ : ত্যাগী ও নিবেদিতদের বদলে বিতর্কিত ও সুবিধাভোগীদের দিয়ে যুবদলের নতুন কমিটি হওয়ার খবরে সংগঠনটির মধ্যে ক্ষোভ এবং অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। যুবদলের সাবেক নেতা, যারা এখন বিএনপির নীতিনির্ধারক; তারাও বিষয়টি নিয়ে নাখোঁশ। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিতর্কিতদের বাদ নিয়ে সংগঠনে ‘যোগ্য’ নেতৃত্ব আনবেন, সেই প্রত্যাশা করছেন যুবদলের নেতা-কর্মীরা।

সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, যুবদলে নতুন নেতৃত্বে এমন দুইজনের নাম চূড়ান্ত হওয়ার খবর শোনা যাচ্ছে, যাদের একজন বিগত সরকার বিরোধী আন্দোলনে লাপাত্তা ছিলেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। রয়েছে সরকারের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ। অন্যজনের বিরুদ্ধে পদবাণিজ্যে আর্থিক লেনেদেন থেকে শুরু করে অন্য আরেকটি সংগঠন ছাত্রদলকে ধ্বংস করারও অভিযোগ রয়েছে। যুবদলে এমন নেতৃত্ব এলে সংগঠনটি ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মনে করেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।

২০১০ সালের ১ মার্চ সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে সভাপতি ও সাইফুল আলম নীরবকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে ২০১০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া ২০১ সদস্যবিশিষ্ট যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন দেন। এই কমিটির মেয়াদ দুই বছর আগেই শেষ হয়েছে। দলীয় সূত্র বলছে, সরকার বিরোধী আন্দোলনে যুবদলের ভূমিকায় অখুশি খালেদা জিয়া  অনেক আগেই সংগঠনটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিলেও বারবার পিছিয়ে যায় এই প্রক্রিয়া। তবে কাউন্সিলের পর দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে যুবদলের কমিটিতেও নতুন নেতৃত্ব আনছেন তিনি। এরই মধ্যে যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে পদায়ন দিয়েছেন।

বিএনপি ও যুবদল সূত্র বলছে, যুবদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরবকে সভাপতি এবং বিএনপির সহ ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠনের বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। যুবদল নেতা-কর্মীদের মাঝে এটি এখন আলোচিত বিষয়। তবে দলের এই ধরনের সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।

ভবিষ্যতে নিজের রাজনৈতিক পদের স্বার্থে মহানগর যুবদলের একজন নেতা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, নীরব-টুকুকে দিয়ে কমিটি হলে যুবদল ধ্বংস হয়ে যাবে। সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে নীরব পুরো আন্দোলনের সময় পলাতক ছিলেন। তার নাম-গন্ধও পায়নি যুবদল নেতা-কর্মীরা। আর টুকু ছাত্রদল শেষ করে এখন যুবদলের প্রবেশের চেষ্টা করছেন। আর্থিক লেনেদেনের সুযোগ নিয়ে ছাত্রদলের কমিটি করেছেন তিনি। বিএনপির হাইকমান্ডকে ভুল বুঝিয়ে শেষ পর্যন্ত যদি নীরব-টুকু যুবদলের নেতৃত্বে আসেন, সংগঠন আর সংগঠন থাকবে না, দোকান হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, টুকু এরই মধ্যে বলতে শুরু করেছেন, যারা তার সঙ্গে যোগাযোগ না রাখবে যুবদল করতে পারবে না। এই যদি অবস্থা হয়, আর টুকু যদি নেতৃত্বে আসে,  তাহলে ত্যাগী ও দলের জন্য নিবেদিতরা রাজনীতি করতে পারবে না। কেন্দ্রীয় যুবদলের আরেক নেতা অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ২৪ বছর রাজনীতি করছি। দলের পেছনে নিজের পকেট থেকে অর্থ খরচ করি, আন্দোলন করি। কিন্তু টুকুর মতো কিছু নেতা ঘাটের রাজনীতির মাধ্যমে বহু টাকা ইনকাম করে চলেছেন। বোঝাই যায় না তিনি বিরোধী রাজনৈতিক দলের কোনো নেতা।

নেতা-কর্মী জানিয়েছেন, ভাই আবদুস সালাম পিন্টুর রাজনৈতিক অর্জন বিক্রি করে বিএনপিতে বেশ পোক্ত অবস্থান দাঁড় করিয়েছেন সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। বিএনপি গত প্রায় ৯ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলেও বেশ ভালোই আছেন টুকু। প্রায় দুই বছর আগে উত্তরায় বিলাসবহুল একটি ফ্লাট কিনেছেন তিনি। রাজধানীর অভিজাত ধানমন্ডি এলাকায়ও রয়েছে তার আরো একটি ফ্লাট। রাজধানীর হাতিরপুলে তার আরএকে সিরামিকের ব্যবসা ভালোই চলছে। বৃহত্তর ধানমন্ডির ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড ব্যবসাও রয়েছে তার। বিরোধী রাজনৈতিক দলে থাকলেও ঠিকাদারি করে কামাচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। তার বড় ব্যবসা পদ বিক্রি করে টাকা কামানো। এ জন্য ইউনিলিভারের শীর্ষ স্থানীয় একজন কর্মকর্তার উত্তরার বাড়িতে নিয়মিত বসেন তিনি। সেখানে বিলাসবহুল গাড়ি হাকিয়ে নেতারা আসেন পদ কেনার জন্য, দলের তদবির করানোর জন্য।

ছাত্রদলের এক নেতার ভাষ্য, সেখানে গেলে বোঝা যাবে না, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা। এখান থেকে ছাত্রদলের পদ বাণিজ্যে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। ওয়ারেন্ট মামলার আসামি হয়েও কীভাবে নির্বিঘ্নে সবকিছু চালিয়ে যাচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তাদের।

সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, ভবিষ্যতে বিএনপিকে শক্তিশালী ভিতের ওপর দাঁড় করাতে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে নিবেদিতপ্রাণ, মেধাবী, যোগ্য নেতাদের দায়িত্ব দিতে হবে। অতীতের মতো সিন্ডিকেট করে অযোগ্য ও সুযোগসন্ধানীরা যাতে শীর্ষ নেতৃত্বে আসতে না পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে দলের হাইকমান্ডকে। তা না হলে ভবিষ্যৎ সরকারবিরোধী আন্দোলন আবারও মুখ থুবড়ে পড়বে। যুবদলের বর্তমান কমিটির নেতাদের বড় অংশই চায় যুবদল থেকে নেতৃত্ব আসুক। অন্যথায় সংগঠনের মধ্য থেকে বিদ্রোহ করার শঙ্কাও রয়েছে। নেতৃত্ব ঠিক করার আগে এই বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ার দাবি করেছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।

সুলতান সালাউদ্দিনকে নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ছাত্রদলেও। ছাত্রদলের ইতিহাসে ৭৩৬ সদস্য বিশিষ্ট এত বড় কমিটি আর কখনো হয়নি। বিদ্রোহীদের কমিটিতে রাখতে হবে- এই অজুহাতে বিএনপির হাইকমান্ডকে ভুল বুঝিয়ে এবং ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এবং ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসানের (দু’জনই তখন কারাগারে ছিলেন) অবর্তমানে এই কমিটি অনুমোদন করিয়ে নেন তিনি। এ নিয়ে ছাত্রদল সভাপতিও ক্ষুদ্ধ। অভিযোগ রয়েছে, এর মাধ্যমে টাকা লেনদেন হয়েছে। তাড়াহুড়ো করে কমিটি করতে গিয়ে হ য ব র ল পরিস্থিতিতে সিনিয়র জুনিয়রের ভারসাম্যও রাখা হয়নি।-রাইজিং

১৪ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে