শনিবার, ১৪ মে, ২০১৬, ০৪:২৪:১৫

বন্ধুর প্রার্থনার মাত্র ১০ মিনিটের মাথায় প্রাণঘাতী বজ্রপাত!

বন্ধুর প্রার্থনার মাত্র ১০ মিনিটের মাথায় প্রাণঘাতী বজ্রপাত!

ইন্দ্রজিৎ সরকার : শাহেদুল ইসলাম সোহাগ ও তাহসান লিংকন। দুই বন্ধুই কম্পিউটার প্রকৌশল বিষয়ে পড়ছিলেন। নামি প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাদের। তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ঘিরে আশার জাল বুনছিলেন স্বজনরাও। সেই স্বপ্ন-আশা নিমেষে শেষ হয়ে গেল বৈশাখের বজ্রপাতে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় অন্য বন্ধুদের সঙ্গে তারাও গিয়েছিলেন ফুটবল খেলতে।

সে যাওয়াই যেন কাল হলো তাদের। টগবগে দুই যুবক ফিরলেন লাশ হয়ে। তাদের এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজন ও বন্ধুরা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরাও মন থেকে মুছে ফেলতে পারছেন না ভয়ঙ্কর সেই দৃশ্য।

নিহত দু'জনের বন্ধু বোরহানউদ্দিন কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাজহারুল ইসলাম সমকালকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে কাঠেরপুল এলাকার কনকর্ড বালুর মাঠে বৃষ্টির মধ্যেই তারা ফুটবল খেলছিলেন। খেলার জন্য তিনটি দল একসঙ্গে চলে আসায় প্রথমে দুটি দল খেলছিল। শাহেদ ও তার অন্য বন্ধুরা তখন মাঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। খেলার মধ্য-বিরতিতে মাজহারুল গিয়ে শাহেদের পাশে দাঁড়ান। তখনও ৫টা বাজেনি। কেউ কেউ তখনও মাঝ-মাঠে ফুটবল নিয়েই ছিলেন। একটু পরপরই সশব্দে বাজ পড়ছিল। এতে ভয়ে কেঁপে উঠছিলেন দীর্ঘদেহী শাহেদ। এটা দেখে ঠাট্টা করে মাজহারুল তাকে বলেন_ 'তুই যদি এমন ভয় পাস, তাহলে আমাদের কী হবে?'

শাহেদ তখন হেসে প্রার্থনার ভঙিতে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে বলেন_ 'হে আল্লাহ, তুমি আমার এই সাথী ভাইয়ের ওপর কোনো বিপদ দিও না। তার সব বিপদ তুমি আমার ওপর দিও। তাকে নিরাপদে রেখ।' তার এই প্রার্থনাই হয়তো মঞ্জুর হয়েছিল বলে মনে করেন মাজহারুল। কারণ এর মাত্র ১০ মিনিটের মাথায় প্রাণঘাতী সেই বজ্রপাত হয়। মুহূর্তের জন্য আলোর ঝলকানি আর বিকট শব্দে সবার হৃৎপিণ্ড কেঁপে ওঠে। শাহেদের কাছ থেকে ছয়-সাত হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মাজহারুল দেখতে পান, শাহেদ-লিংকনসহ তার বন্ধুদের বেশিরভাগই মাটিতে শুয়ে পড়েছে। তিনি প্রথমে ভাবেন, ভয়ে বা মজা করে হয়তো সবাই মাঠের কাদা-পানিতে গড়াগড়ি করছে। কিন্তু একটু পরই তার ভুল ভাঙে।

কয়েকজন ওই অবস্থা থেকে আর ওঠেন না। এ সময় মাজহারুল গিয়ে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা শাহেদকে উল্টে দেন। স্থির হয়ে থাকা চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারেন প্রিয় বন্ধু আর বেঁচে নেই। তবে লিংকন তখনও বেঁচে ছিলেন। একাদশ শ্রেণীর ছাত্র রাইহানও উদ্ভ্রান্তের মতো আচরণ করছিলেন। তাদের তিনজনকেই উদ্ধার করে অটোরিকশায় করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান বন্ধুরা। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে শাহেদ ও লিংকনকে মৃত ঘোষণা করেন। রাইহানের চিকিৎসা চলছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র তানিম জানান, নিহত শাহেদ ছিল তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি কারওয়ান বাজারের আহছানউল্লাহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কম্পিউটার প্রকৌশল বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করছিলেন। তার বন্ধু লিংকন একই বিষয়ে পড়তেন মহাখালীর এমসিইটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। দু'জনই কম্পিউটার প্রকৌশলী হিসেবে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন। শাহেদ তার পরিবারের সঙ্গে যাত্রাবাড়ীর দক্ষিণ কাজলা এলাকার বাসায় থাকতেন। তার বাবা নিজাম উদ্দিন পরিবহন ব্যবসায়ী, মা লুৎফা রহমান পেশায় শিক্ষিকা।

তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার বরুড়া এলাকায়। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর সেখানেই তার লাশ দাফন করা হয়। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন শাহেদ। লিংকন পরিবারের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার সাহেবপাড়ায় থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে। তার বাবা বাদল মোল্লা গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারে ব্যবসা করেন। কম্পিউটার প্রকৌশল বিষয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি বাবার ব্যবসাতেও সময় দিতেন লিংকন।

এদিকে সম্ভাবনাময় দুই তরুণের আকস্মিক মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তাদের বাবা-মাসহ অন্য স্বজনরা। শাহেদের মা লুৎফা রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, একমাত্র ছেলেকে ঘিরে তার অনেক স্বপ্ন ছিল, যা অকালেই ঝরে পড়ল। লিংকনের মা লাকী বেগম বলছিলেন, সন্তানের বদলে আল্লাহ কেন তার প্রাণই কেড়ে নিলেন না।

যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ জানায়, বজ্রপাতে দু'জনের মৃত্যুর ঘটনাটি তারা সংবাদমাধ্যমে জেনেছেন। এ ঘটনায় থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর (ইউডি) কোনো মামলা হয়নি। ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনরা ঢামেক হাসপাতাল থেকে ওই দু'জনের লাশ নিয়ে যায় বলেও তারা শুনেছেন। - সমকাল
১৪ মে ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে