শনিবার, ১৪ মে, ২০১৬, ০৪:৩৪:৫০

রাজপথে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

রাজপথে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

মোশাররফ বাবলু: রাজপথের আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে দুই মামলার চার্জশিট দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারা আন্দোলনের ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। তারা চান এখন থেকেই রাজপথ উত্তপ্ত করতে। এ নিয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। ছোটখাটো কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে জোরালো আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এসব কর্মসূচিতে সরকার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলে সে সবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন বেগবান করে তোলা হবে।

এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের অংশ হিসেবে দুই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচি অনুযায়ী আগামীকাল রোববার ১৫ মে দেশের সব মহানগর ও জেলা শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বিএনপি। ঢাকা মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে পরশু ১৬ মে সোমবার।

অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটও বিএনপির নির্বাহী কমিটি ঘোষণার পর এবং চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষে যুগপৎভাবে কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছে। আন্দোলনকে কীভাবে সফল করা যায় তা নিয়েও জোটের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। এ বিষয় নিয়ে বিএনপি বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে মতবিনিময় করবে। চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে সরকারের সঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কী পদ্ধতিতে হবে সে বিষয়ে সংলাপ করার ব্যাপারে প্রস্তাব দেবে বিএনপি। কূটনীতিকদের মাধ্যমে এ প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে বলে সূত্র জানায়।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দারুসসালাম থানার দুই মামলায় চার্জশিট দেওয়ার প্রতিবাদে যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলে যুবদলের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। আজ শনিবার জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল বিক্ষোভ করবে। কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করেছে।

এদিকে, গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান বলেন, 'নব্বইয়ের মতো আরেকটি গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করতে হবে।' এখনও ইলিয়াস আলী কোথায় আছে, সে প্রশ্নের উত্তর নেই জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'দেশে অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড, গুম-খুন অব্যাহত রয়েছে। সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও ভেতরে একনায়কতন্ত্র কায়েম করছে। কথা বললেই মামলা দেওয়া হচ্ছে। এসব থেকে রেহাই পেতে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান প্রয়োজন।' তিনি আরও বলেন, 'অগণতান্ত্রিক, অনৈতিক সরকারের পতন হবে। গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।'

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, জাতীয় কাউন্সিল সফলভাবে হয়েছে। দল গোছানোর পর পুরোদমে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামবে বিএনপি। তৃণমূল নেতাকর্মীরা এখন আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু কমিটি গঠনে দেরি হওয়ায় হতাশ দলের নেতাকর্মীরা। স্থবিরতা নেমে এসেছে জেলা কমিটিতেও। ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছে নেতৃত্ব। জেলা পর্যায়ের কোনো কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে না। প্রায়ই খালেদা জিয়া বৈঠক করছেন সিনিয়র নেতাদের ডেকে নিয়ে। কর্মসূচি ঘোষণা করে সে কর্মসূচি সফল না করতে পারলে বিএনপিকে আবারও পিছিয়ে পড়তে হবে। এভাবে তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে বলে ধারণা থাকার পরও সাংগঠনিক দুর্বলতা ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে আন্দোলনে যেতে পারছে না বিএনপি।

অন্যদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে দেওয়া জাতীয় দিবসগুলো পালনের কর্মসূচিও ঠিকমতো পালন হচ্ছে না স্থানীয় পর্যায়ে। বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানাচ্ছেন, দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে যেসব কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে, বেশিরভাগ জেলা কমিটি সেগুলোর বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবগত নয়। যার কারণে অধিকাংশ জেলায় কর্মসূচিও পালন হচ্ছে না। জেলা পর্যায়ে কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে স্থানীয় কমিটির স্থবিরতা থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দোমনা হয়ে পড়ছে আন্দোলনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে। বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি কেবল নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা, জাতীয় প্রেস ক্লাব হলরুম কিংবা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা করার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এর বাইরে দলের অন্য কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। কেন্দ্রীয় নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণেও তৃণমূল নেতারা কেন্দ্রের ওপর নাখোশ।

তবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার চার্জশিট দেওয়ার পর দলের সবাই আন্দোলনে নামার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। জুনের পুরো মাস রমজানের ইফতার পার্টি চলবে। ঈদের পরপরই আন্দোলনে নামার প্রাথমিক চিন্তাভাবনা রয়েছে বিএনপিতে। বাকি দুই ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে থাকার সিদ্ধান্তও নিয়েছে বিএনপি। ইতিমধ্যে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের নির্বাচন শেষ হয়েছে। বাকি আছে পঞ্চম ও ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচন। এই নির্বাচন শেষ হলে বিএনপি জেলা পর্যায়ের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেবে। কমিটি গঠনের পাশাপাশি তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনের ছোটখাটো কর্মসূচি দেবে। সূত্র মতে, এই কর্মসূচির পর সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী, পেশাজীবী পরিষদসহ বিভিন্ন লোকজনের মতামত নেওয়ার পর লাগাতার কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'কখনও দিনক্ষণ ঠিক করে আন্দোলন হয় না। আমাদের দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আমরা আন্দোলনে নামব। আমরা সফল হবই।' আন্দোলনে যেতে বিএনপি কী ভয় পাচ্ছে?_ এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'বিএনপি নেতারা সব সময়ই গ্রেফতার হচ্ছেন। সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি-নির্যাতন করছে। এখানে ভয়ভীতির কী আছে?' তিনি বলেন, 'দলের কাউন্সিল সফলভাবে শেষ হয়েছে। কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব আসছে। দল আবার সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে।'

আন্দোলন প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, এখন কমিটি গঠনের কাজ চলছে, দল গোছানোর প্রক্রিয়া চলছে। গণতান্ত্রিকভাবে আমরা আন্দোলন করতে চাই। দলের মধ্যে কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছে। সময়-সুযোগ মতো বড় ধরনের আন্দোলনের কর্মসূচি নেবে বিএনপি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম বলেন, 'বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। এই আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। মানুষের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ফিরিয়ে দিতেই আমাদের আন্দোলন চলছে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমেই এ সরকারকে বিদায় করা হবে।'

১৪ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে